Skip to main content

সুবিমলবাবু ও সারকাজম

সুবিমলবাবুর ঘেমেনেয়ে একাকার। আড়াই ঘণ্টা ধরে কম্পিউটর স্ক্রিনে চোখ রেখে বসে আছেন। হাতের আঙুলগুলো কীবোর্ডে জুড়ে খলবল করে চলেছে অথচ  ফেসবুকের স্টেটাস মেসেজের বাক্সটা খাঁখাঁ করছে।

আড়াই ঘণ্টা ধরে।

কালো কফি যথেষ্ট তেতো মনে না হওয়ার প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিসের মলাটের কোণটা খানিক চিবিয়ে নিলেন। তাতেও বিশেষ লাভ হল না। অ্যাশট্রে থেকে সিগারেটের পোড়া ফিল্টার তুলে অল্প চুষেও কোনও হেলদোল টের পাওয়া গেলনা। মাথার চুল ছিঁড়েও কিছুতেই একটা অ্যাসিড মাখানো লাইন মাথা থেকে বের করে ফেসবুকে ঠুসে দিতে পারছিলেন না সুবিমল সান্যাল।

কোয়াড্রেটিক ইকুয়েশনে তার ছোটবেলা থেকেই বিরক্তি। কিন্তু খটমট কয়েকটা ইকুয়েশন মনে করেও পর্যাপ্ত ভাবে মেজাজটাকে খিঁচড়ে দিতে না পেরে রীতিমত হাঁফিয়ে উঠলেন সুবিমলবাবু।

যে কোন বিষয়ে একটা সারকাস্টিক কিছু টাইপ করতে পারলেই এই অম্বল আর গলাবুক জ্বালাটা পাশ কাটিয়ে দেওয়া যেত।

উপায় না দেখে "ডিপ্রেসিং নিউজ টুডে" বলে গুগল সার্চ করে মিনিট দশেক কাটালেন। জ্বালাময়ী কিছু তবুও গলা বেয়ে উঠে এলো না, এ এক আচ্ছা জ্বালা হয়েছে।

তারপর ড্রয়ার থেকে খিস্তি অভিধান বের করে কয়েক মিনিট চোখ বুলোলেন। একটু উত্তেজনার সঞ্চার হলো বটে, তবে তাতে সারকাজমের হাঁড়ি গরম হওয়ার কথা নয়।

তখনই মায়ের ডাকে চমকে উঠলেন সুবিমলবাবু।

- এ কী! এত অস্থির কেন খোকা?
- এ কী! তুমি জ্যান্ত কেন মা?
- না না। আমি বেঁচে নেই। ভয় পাস না।
- মরে গেছ বলে ভয় পাব না নাকি মরেও কথা বলছ বলে ভয় পাব না?
- গুলিয়ে গেলো। মোদ্দা কথা ভয় পাস না। এটা জাস্ট স্বপ্ন।
- ওহ। আই সী।
- অমন টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়তে আছে খোকা?
- আসলে...আসলে কিছুতেই...কিছুতেই...।
- কিছুতেই কী?
- কিছুতেই সারকাস্টিক কিছু মাথায় আসছিল না মা।
- বিদ্রূপাত্মক কিছু?
- বিদ্রূপ বললে ব্যাপারটা যথেষ্ট মজবুত হয় না মা। বিদ্রূপ কেমন আলুনি। যেন ফেনাভাতে ঘি পড়েনি। সারকাস্টিক হতে হবে। ফাউল কাটলেটে কাঁটাচামচের মত খচাৎ করে ঢুকে যাবে সে চীজ। বুঝলে মা?
- তোর মাথায় কত চিন্তা রে খোকা।
- প্রেশার মা। সেলস টার্গেটে এত চাপ নেই। বেহালার ভাঙা রাস্তায় রানিং মিনিবাসে উঠতে এত চাপ নেই। দুনিয়ার যত টেনশন শুধু একটাই ভাবনায়; যথেষ্ট সারকাস্টিক হতে পারছি তো? মাঝেমাঝে মনে হয় একটা গাইডবই হলে ভালো হত। সারকাজম মেড ইজি গোছের।
- গাইড বই জানিনা। তবে খোকা, সারকাজম রপ্ত করার জন্য একটা ক্র‍্যাশ কোর্স আছে। করবি?
- মাইরি মা? রিয়েলি?
- নিজের ডায়রেক্ট এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলছি।
- কী কোর্স বলো তো?
- বিয়ে। বিয়ে করে ফেল খোকা। দেখবি জিভে সারকাজমের চাষ হচ্ছে।
- উফফ! মরে ভূত হওয়ার পরেও আমার স্বপ্নে এসে "বিয়ে কর বিয়ে কর" বলে ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছ? তুমি মা না পিরামিড?
- দ্যাখ দ্যাখ খোকা, বিয়ের নাম শুনেই কেমন সারকাস্টিক বনে গেলি সহজে। তাই বলছি, এবারে বিয়ে কর।

**

ঝিমুনি ভাবটা কেটে যেতেই ফেসবুক স্টেটাস আপডেট লেখার বাক্সটা বন্ধ করে দিলেন সুবিমলবাবু। আজ হঠাৎ নীলাকে পিং করার ইচ্ছে হল। পার্সোনাল মেসেজ দিয়ে। মেয়েটা বড় ভালো, বড্ড স্নেহের। সারকাজমের কলার টেনে যদি ধরতেই হয়, তাহলে তার মধ্যে অল্পবিস্তর স্নেহ থাকলে মন্দ হয় না।

Comments

অসাধারণ সারকাজম.....

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু