Skip to main content

যুক্তি তর্ক বাতেলা


তর্ক মন্দ নয়। তর্কের তবলা পিটুনিতে মগজ সজাগ থাকে, অপ্রয়োজনীয় বন্ধু ছাঁটাই হয়, উপযুক্ত শত্রুর সাহচর্য জোটে। সমাজে ডিবেট জরুরী। কিন্তু সব জরুরীর মাঝে কিছু কাঁকড় গড়িয়ে পড়বেই, আর থাকবে পোকা খাওয়া যুক্তিদাঁতে অনভিপ্রেত ফোঁকর। সেই কাঁকড় ছেঁটে নিতে পারলে অবশ্য ডিবেটের শ্রীবৃদ্ধি হয় এবং সে তর্কের মুনাফা ভাগ হয় যুযুধান দু'পক্ষের মধ্যেই। দু'টো পাথরকুচি তর্কের বাঁশকাঠি চালে মিশে যায় অনবরত। এই কাঁকড় নিজে চিবিয়ে কেঁপে উঠেছি বলেই নয়, অন্যের যুক্তির পোলাওতে তা পরিকল্পিত ভাবে মিশিয়ে অপরাধও করেছি যথেষ্ট। পাথরকুচি ১ - কোনও কিছুকে স্টিরিওটাইপ বলে নস্যাৎ করে সোয়্যাগ অর্জনের যে স্টিরিওটিপকাল প্রসেস্‌, সে প্রসেসে নিজের জান কবুল করা। কেউ কেউ নিশ্চই রয়েছেন যারা ধবধবে সাদা দেয়ালের সামগ্রিক সৌন্দর্যের মধ্যেও দেওয়ালের কোণে লেগে থাকা কালো কালির ছিটেটুকু দেখে নিতে পারেন। সে'টা নিশ্চই সবিশেষ স্কিল। কিন্তু দেশের দশজন লোক সে সাদায় বিহ্বল ব্যাকুল হয়েছে বলেই যদি তা ঘৃণার যোগ্য হয়; তাহলে সবিশেষ অসুবিধে। ডেটা বা ইনফরমেশনের পরিধিতে যতক্ষণ ক্রিটিসিজিম রয়েছে, ততক্ষণ তার তল পাওয়া যায়। কিন্তু তাতে যেই আরোপিত সোয়্যাগের তাচ্ছিল্য আর মৌরি চেবানো ওপিনিওন অ্যাড হয়, সমস্যা শুরু হয় তখন। "আমি লৌকিকতায় বিশ্বাস করিনা" - এ ডিক্লারেশনে ক্ষতি নেই কিন্তু তার মানে যদি এই হয় যে প্রতিবেশীর বাড়িতে মিষ্টির বাক্স হাতে ঢোকাকে আমি ক্রিমিনাল স্টুপিডিটি হিসেবে ধরে নেব; সে'খানে যে তর্কের উৎপত্তি হয় সে তর্কে ফটোসিন্থেসিস্‌ নেই। মিনিবাসের সাইলেন্সরের ধোঁয়ায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে কেবল। "অমুকের গানে আমার রুচি নেই" - রুচির রকমভেদ বড় জরুরী। দরকারি। কিন্তু অমুকের গান কেউ শুনছে বলেই যদি সাজানো যুক্তি ছাড়া তাঁকে আমরা ঢ্যামনা বলি, তাহলে সেই ঢ্যামনা শব্দটা অদৃশ্য দেওয়ালে রিবাউন্ড খেয়ে যে কখন দড়াম করে এসে নিজের নাকে গোঁত্তা মেরে যায়...। এ’খানে বলে রাখা ভালো; “অমুক খারাপ” কথাটা যুক্তি নয়, ছুঁড়ে দেওয়া ঢিল। অমুক এই এই কারণে উপাদেয় নয়; সে’খানে যুক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে। তবে যুক্তি মানেই সম্ভ্রম, এবং যুক্তি মানেই খাটনি। খাটনি খুব গড়বড়ে জিনিষ। "দুনিয়ার লোকে অমুক কাজ করে, আমি করি না" - দুনিয়ার লোকে পকেটমারি করে পুলিশের খাতায় নাম লিখিয়েছে, আমি লেখাইনি। এ’টা ডেটা নির্ভর ব্যাপার এবং স্পষ্ট। “অমুক” যদি পকেটমারি হয় তাহলে ক্ষতি নেই। কিন্তু “দুনিয়ার লোক শীতকালে পিকনিক করে তবে আমার ও'সব পোষায় না” - সে'টা একটা ভোঁতা স্টেটমেন্ট। তাতে কেউ উত্তম বা কেউ সুখেন দাস হয় না। পাথরকুচি ২ - ইংরেজিতে এই কথাটা খুব চলছে আজকাল। "হোয়াটআবাউটারি"। বিশেষত রাজনৈতিক তর্কে এ এক মস্ত বড় সমস্যা। তৃণমূলের ভুল ধরেছেন কি সিপিএমের কুকর্মের লিস্টি হাত ধরিয়ে দেওয়া হবে। সিপিএম করেছে, আর আমার বেলায় দোষ বিচার? তুমি হার্মাদ। বিজেপির ত্রুটি নজরে এসেছে কি কংগ্রেসের ব্যালান্সশিট আপনার হাতে গুঁজে দিয়ে আপনাকে কোরাপ্ট বলা হবে। বড্ড সুবিধে। এক্স ভুলের অ্যানালিসিস না করে ওয়াই কেন হয়েছিল আলোচনায় চলে যাওয়া যায়। রাজনীতির বাইরেও এ ফরম্যাটে দিব্যি ঘোল খাওয়ানো যায়। তর্ক বেফজুল হয়ে পড়ে, কোনও কাজের দিকে গড়ায় না। যুক্তি স্তিমিত হয়ে খিস্তি শুরু হয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সোয়্যাগ জমা হয়, কাল্পনিক টেবিল চাপড়ানিতে নিউক্লিয়ার ফিসন ঘটে যায় হৃদয়ে হৃদয়ে। শুধু কাজের কথাগুলো মিউচুয়াল ঠেলাঠেলির সিলিং ফ্যান থেকে "আমি নির্ভুল"য়ের গামছা গলায় জড়িয়ে ঝুলে পড়ে।

Comments

rags said…
kankar e bau- e shunyo raw hoy.

patharkuchi -2 paragraph ta 2 bar hoye geche

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু