Skip to main content

যুক্তিযুক্ত

কোনও কাজ যুক্তিযুক্ত ভাবে না করতে পারায় যে কী প্রবল আনন্দ।
কাজ করবও না, অথচ সে "না করা"টা এমন ভাবে জনতার সামনে এসে "হাউ ডু ইউ ডু" বলবে যেন সে'টাই একটা দৃষ্টান্ত।

কত সজীব যুক্তি সাজানো যায় কাজ না করার জন্য। সে সব যুক্তি এতই প্রাঞ্জল যে অজুহাতের মত সরল ট্যাগে তাদের বেঁধে ফেলা যায় না।

যেমন?

"তুই বলার আগে থেকেই আমি তৈরি ছিলাম তোকে হাওড়া থেকে পিক্ আপ করব বলে। কিন্তু কী বলব ভাই, বড্ড গা ম্যাজম্যাজ আর আমার সাইনাসের ধাতটা তো জানিসই। সিজনটাই গোলমেলে। তবে শুনেছি আজকাল প্রিপেড ট্যাক্সির লাইন বেশি লম্বা হয় না"।

"এহ বাবা, কী আনফরচুনেট কোইন্সিডেন্স দেখুন। ঠিক আপনার দরকারের সময়ই আমার ফোনটা কী ভাবে যেন সাইলেন্ট মোডে চলে গেসল। ধুস্"।

"ব্লাড ডোনেট করা আর সোশ্যালি কন্ট্রিবিউট করা এমনিতে আমার প্যাশন। অফিস কামাই করতেও কোনও অসুবিধে ছিল না, কিন্তু ছেলের উইকলি টেস্ট পড়েছে ওইদিন ভাই। ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ। আর এ তো আর আমাদের গায়ে হাওয়া লাগানো জমানা নয়, উইকলি টেস্টের একটা পারসেন্টেজ অ্যাড হয় ফাইন্যালে। ভীষণ প্রেশার। নেক্সট টাইম হলে জানিও, পৌঁছে যাব"।

" যাহ্, তুই একটা ইডিয়ট। আর দু'দিন আগে চাইতে পারলি না টাকাটা? এই জাস্ট গতকাল এল আই সির প্রিমিয়াম দিতে গিয়ে প্রায় ব্যাঙ্করাপ্ট হয়ে গেলাম। তার ওপর তিনটে ই এম আই, বুঝতেই পারছিস।  তুই গত পরশু বললেই হয়ে যেত। অবশ্য এটাও ঠিক, পরশু তো আর তুই জানতিস না যে দু'দিনের মাথায় মেসোমশাইয়ের স্ট্রোক হবে"।

"মন খারাপ ? আগের মত চলে আসব? ঝট্ করে? তোমায় হাইজ্যাক করে তুলে আনব? তারপর নতুন গল্পের বই? দুপুরে শুয়ে গল্প? বিকেলে হন্টন? সন্ধ্যেবেলা খাবারওলার ঝুড়ি থেকে সন্দেশ, লেডিকেনি আর নিমকি? রাতের বেলা দিদার রান্না আধফালি করা হাঁসের ডিমের মশলাদার ঝোল? সঙ্গে পায়েস? রাত্তিরে দু'জনে রেডিও শুনব? নজরুল? রজনীকান্ত?  অতুলপ্রসাদ? ফ্যান চললেও তোমার হাতপাখার হাওয়া চাই? মিঠে লাগে বড্ড? চোখ জড়িয়ে আসে? ক্রিকেটের গল্প শেষ হওয়ার আগেই? চলে আসাই যায়। ঝট্ করে। তবে দাদুভাই, তোমার রেটিনা এখনও ভূত ক্যাপচার করতে শিখেছে কি? মনে হয় না। আর ক'টা দিন যাক। কেমন"?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু