Skip to main content

অরোরা বোরিয়ালিস

- খবর কী?
- শুভেন্দু! তুই?
- অবাক হয়েছিস?
- হাহ্! হব না? কদ্দিন পর বল তো? অবাক হব না?
- আমি ভেবেছিলাম তুই অরোরা বোরিয়ালিস দেখে চমকেছিস।
- কী?
- দ্যাখ। আকাশে...।
- আরিব্বাস। কিন্তু..কিন্তু...কলকাতায়...।
- সবুজ আলো রে। সবুজ। কালোর মধ্যে ছেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। দেখ।
- তা বলে কলকাতায়...।
- শিউলিদির জিওগ্রাফি ক্লাস। মনে পড়ে? একটা গোটা ক্লাস জুরে অরোরা বোরিয়ালিসের গল্প।
- জ'গ্রাফি।
- মনে পড়ে?
- শুভেন্দু, তুই এখন কোথায়?
- ক্লাস ফাইভে ট্রেকার কেনার প্ল্যান হয়েছিল মনে আছে? আমি ড্রাইভার, তুই খালাসী।
- ড্রাইভার খালাসী হলে মদ খেতে হবে, সে চিন্তায় একটু পিছিয়ে এসেছিলাম।
- সে অসুবিধে এখন তো আর নেই খোকা।
- ট্রু। বীরভূমের গ্রাম টু গ্রাম। দিনে ছ'টা ট্রিপ। বারো ঘণ্টা।
- করক্ট। দেহাতি গান শেখার কথা ছিল। ঢোল কেনার কথা ছিল।
- তুই কেমন আছিস শুভেন্দু?
- সন্তুদাকে মনে পড়ে?
- ডিউসে খেলতে গিয়ে মুখ ফেটে গেছিল।
- মাসখানেক আগে একটা ট্রাক এসে মুখ ফাটিয়ে দেয়। এবার আর ষোলোটা স্টিচে কাজ হয়নি।
- কী বলছিস?
- সন্তুদা পিকনিকে চিকেন কষা রাঁধত, সে স্বাদ মনে আছে? "অমৃত,অমৃত" করে আমরা লাফাতাম।
- কী হয়েছে শুভেন্দু? আমরা এখানে এসেছি কেন?
- তোর লিপিকে লেখা চিঠিগুলো। উফ, আমায় কত যে গ্রামার শুধরে দিতে হয়েছে।
- তুইও তো ওকে...।
- তুই বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। লিপিফিপি আবার কে? লিপি এসে অফ ব্রেকে বালকসঙ্ঘের খেপে খেলানো ব্যাটসম্যানগুলোকে ঘায়েল করবে? তুই চিঠিতে বানান ভুল করবি, আর তোর ক্যাপ্টেন হয়ে আমি সেটা বরদাস্ত করব ভেবেছিস?
- শুভেন্দু। আমাদের এই ভাবে দেখা হচ্ছে কেন? তুই ঠিকঠাক আছিস?
- তুই ভাল আছিস বাবু?
- চাকরীবাকরি দিব্বি চলছে। ফ্যামিলি ফ্রন্টে স্মুদ। ফটোগ্রাফিতে একটু নামডাক হয়েছে রে আজকাল।
- খবর পাই।
- সামনেই একটা এগজিবিশন। ঠিকানা দে, ইনভিট পাঠাই।
- আমার প্রশ্নের উত্তর দিলি না। কেমন আছিস?
- তুই পাশে থেকে কেন খোঁজ নিস না? আমাদের গত দশ বছরে একবারও দেখা হয়নি কেন?
- তুই এড়িয়ে থেকেছিস বাবু। ব্যস্ত থেকেছিস।
- রাগ দেখাতে আমায় এখানে নিয়ে এসেছিস?
- না। তুই কেমন আছিস? সেটা জানতে।
- ফোটোগ্রাফি ক্লাবের ইয়ারদোস্তদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি।  ক্লাব হপ্তায় একবার কয়েক পেগ। কল্যিগরা রয়েছে। লাইকমাইন্ডেড যত...।
- এরা কারা? তুই ভালো আছিস?
- তুই নেই শুভেন্দু।
- এড়িয়ে গেছিস।
- তোর ফোন নম্বরটা সেই যে হারিয়ে গেল...। তোর ঠিকানাটাও...আর কারুর সঙ্গেই যোগাযোগ নেই যে তোর নম্বর...।
- লিপি?
- বছরদুয়েক আগে একবার...ওর নম্বর অবিশ্যি আছে।
- ওই গেল অরোরা বোরিয়ালিস জলে। তোর অ্যালার্ম বাজছে।

**

- হ্যালো।
- লিপি, হ্যালো। আমি...।
- আরে বাবু! তুই? কেমন আছিস? কী ব্যাপার বল দেখি? এদ্দিন পর? একটা ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে খুব মাতব্বর হয়েছিস, না?
- আমি বেশ আছি। তোরা কেমন আছিস? তোর মেয়ে কেমন আছে?
- খুব্ ভালো। সে এখন স্কুল যাওয়া শুরু করেছে।
- আইব্বাস। ইয়ে, একটা দরকার ছিল।
- কী দরকার?
- তোর কাছে শুভেন্দুর কন্ট্যাক্ট নম্বর আছে?
- কী ব্যাপার বল তো বাবু? ঠিক দশ মিনিট আগেই শুভেন্দু ফোন করেছিল তোর নাম্বার চেয়ে। আমার কাছে তোর নম্বর সেভ করা ছিল না তাই দিতে পারলাম না।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু