Skip to main content

কলকাতার মেসিয়াহ্‌ - প্রথম পর্ব

- তুমিই নতুন?
- হ্যাঁ। নতুন।
- নাম?
- অরূপ। অরূপ ভট্টাচার্য।
- মেদিনীপুর?
- না বর্ধমান জেলা। দুর্গাপুর।
- এখানে কোন কলেজ?
- গোয়েঙ্কা। ডে। ওই, বউবাজারের দিকে।
- কমার্স?
- হ্যাঁ।
- অ। তা বউবাজারে তো মেসবাড়ি কম নেই ভাই। ঠেঙিয়ে আমহার্স্ট স্ট্রিট এলে মেসের খোঁজে?
- আসলে বাবাই দেখেশুনে...।
- ওহ্‌। ফাদার্স ওবিডিয়েন্ট সান্‌।
- ওই...।
- ভালো ভালো। ওবিডিয়েন্স ব্যাপারটা আমি খুব পছন্দ করি। ও বাই দি বাই, আমি অজয় মল্লিক। বিদ্যাসাগর। বটানি। তিন নম্বর ফাইনাল ইয়ারে।
- তিন নম্বর ফাইনাল ইয়ার?
- মানে দু’বার ড্রপ করেছি। এবারে দেব দেব করছি।
- ড্রপ?
- অমন ড্যাব ড্যাব করে সিনিয়রদের দিকে তাকাতে নেই ভাই অরূপ। শোনো ভায়া, আজ রাত্রে তোমার ইন্ট্রো হবে।
- ইন্ট্রো?
- মেসের বাকি ছেলেপিলেদের সাথে আলাপ করতে হবে না? তুমি ছাড়াও যে আরও চোদ্দ জন রয়েছে। টোটাল চারটে ঘর, তিনটে ঘরে চার জন করে আর ওই একদম কোণের ঘরে আমরা তিনজন। নেহাত দুপুরবেলা তাই মেসে কেউ নেই, প্রত্যেকে কাজে বেরিয়েছে। চারটের পর থেকে একে একে ঢুকতে আরম্ভ করবে। প্রেমিক মানুষরা আবার সামান্য দেরী করে ঢোকেন।
- আপনার কাজ নেই?
- মানে?
- না মানে অজয়দা, আপনি দুপুরে মেসে আছেন; আজ কলেজ ছুটি বুঝি?
- ছুটি? না! তবে তিন নম্বর থার্ড ইয়ারে অত কলেজ নিয়ে মায়া করতে নেই। তা উত্তরের জানালার কাছের বেডটা তুমি পেয়েছ দেখছি। দিব্যি। সী ফেসিং।
- সী?
- সী ফেসিং। সমুদ্র।
- মানে ঠিক, বুঝলাম না। সামনে তো ওই নীল দেওয়ালের বাড়ি।
- মফঃস্বল ছেড়ে ক্যালক্যাটায় পা রেখেছ, কোদালকে কোদালের বাইরে এসে চিনতে শেখো ভায়া। ও’টা স্রেফ বাড়ি নয়, আশ্বাস। যে একের পর এক এগজ্যামিনে গোল্লা পেলেও পৃথিবীটা এখনই রুখাশুখা হয়ে যায়নি। মনের ডেটল, বুকের বোরোলিন ওই বাড়ি। তাই তোমার বেডের পাশের এ জানলা সী-ফেসিং বলেই পরিচিত। সকালের দিকে আর রাতের দিকে এ জানালায় চোখ রাখতে ছেলেপিলেরা ভিড় জমায়।
- কেন?
- কেন? ওই যে ব্যালকনিটা দেখছ...ও’টা হচ্ছে প্রাইভেট লেডিজ হস্টেলের দিদিদের।
- ও।
- যাক গে, আজ রাত পৌনে এগারোটা। কেমন?
- পৌনে এগারোটায় কী অজয়দা?
- ভুলে গেলি? ওই যে বললাম! ইন্ট্রো।
- ও।
- সিনিয়ররা তোকে একটু বাজিয়ে দেখে নেবে আর কী!
- বাজিয়ে দেখবে?
- এ মেসের ডিএনএ’র সঙ্গে তুই খাপ খাচ্ছিস কী না, এ মেসের রিচ লেগাসির ভার বহন করার মত শক্ত কাঁধ তোর আছে কী না ইত্যাদি।
- ওহ্‌।
- ও কী! নার্ভাস হচ্ছিস নাকি?
- না না, তা নয়।
- আরে ক্যান্ডিড প্রশ্নোত্তর। আমাদের সবার পরিচয় দেওয়া হবে, তোর খবরাখবর নেওয়া হবে। আর দু’চারটে জেনারেল নলেজের প্রশ্ন।
- জেনারেল নলেজ?
- সাজেশন চাইছিস? বেশ। এই যেমন ধর, হিন্দুস্তানি রাগসঙ্গীত যেমন সময়ের সাথে সাথে পালটে যায়, মানে ভোরে ভৈরবী বা সন্ধেবেলা ইমন।  তেমনই ভোরের বেলা যদি কাউকে বোকাচোদা বলাটা সুইটেবল হয়, তাহলে গোধূলি লগনে তাকে কী গালাগালে বিভূষিত করলে যুক্তিযুক্ত হবে?
- মা...মানে?
- ভাবো। ভাবা প্র্যাক্টিস করো।
- আমি খিস্তি দিই না।
- তুমি তো এর আগে মেসেও থাকোনি চাঁদু। ‘জানি না’, ‘করি না’ ইজ নট অ্যান এক্সকিউজ ইন ইন্ট্রো। কেমন?
- আচ্ছা।
- শ্রীমান অরূপ ভট্টাচার্য। শুনে রাখো। নো পাকামি।
- আ...আচ্ছা।
- আর ইয়ে...প্রেমিকা টেমিকা আছে নাকি?
- ন...না।
- টিপসের দরকার হলে বলিস। সামান্য গোল্ডফ্লেক ফী নিয়ে কম ছেলের তরী পার করিনি।
- আচ্ছা।
- সিগারেট খাওয়া হয়?
- না।
- সে’টা অবশ্য ঠোঁটের রঙ দেখেই আন্দাজ করেছি। তা সিগারেট না খেয়ে কফি হাউসে গিয়ে গাল চুলকবে কী করে বাবা অরূপ?
- মানে...মানে ঠিক বুঝলাম না।
- নাহ্‌। তোকে দেখছি গড়েপিটে না নিলে ক্যালক্যাটা তোকে টপাত করে গিলে ফেলবে। দায়িত্ব বেড়ে গেল। সে যাকগে, ওই বয়ামে কী আছে ভাই?
- এ’টা? এ’টায় গজা। আমার মায়ের বানানো।
- ও’টা ওই তাকে রাখার কোনও দরকার নেই। তোর বেডের পাশে ও তাকে বড় পিঁপড়ে। ইনফ্যাক্ট এ গোটা ঘরেই বড্ড পিঁপড়ে। ও ডিবে বরং আমায় দে, আমার ঘরে আমি পিঁপড়েদের এন্টারেটেইনই করিনা একদম। তোর যখন ইচ্ছে হবে এসে বরং খেয়ে যাস। কেমন?
- আচ্ছা।
- আর ইয়ে, ঘরে নক করে ঢুকিস। কেমন? আমি সিনিয়র মানুষ তো।
- বেশ।
- কই! গজার ডিবেটা দে।
- এ...এই যে।
- নে, এবারে বেডিং-টেডিং গুছিয়ে নে। আর ট্রাঙ্কখানা বিছানার তলে ঢুকিয়ে দিস। কোনও দরকার পড়লে আমি ওই কোণের ঘরে আছি। আর রাতের ইন্ট্রোর কথা যেন ভুলে যাস না, কেমন?
- আচ্ছা।

(ক্রমশ)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু