Skip to main content

ডক্টর স্ট্যানকোভস্কির আফশোষ

ঠকঠক করে কাঁপছিলেন ডক্টর স্ট্যানকোভস্কি। গায়ে অন্তত পাঁচটা সোয়েটার, মাথা মুখ ঢাকা টুপি মাফলার, হাতে দস্তানা; এতকিছু পরেও ঠাণ্ডা কে বাগে আনা যাচ্ছে না। সুবিধে এই যে ঝোড়ো হাওয়া আদৌ নেই ,কাজেই তাঁবু খাটিয়ে ল্যাবরেটরির জিনিষপত্র গুছিয়ে নিতে কোনও অসুবিধে হয়নি। সোলার স্টোভে স্যুপের জল গরম হতে এখানে মেরুর থেকেও দ্বিগুণ সময় লাগে, সে’টা ঘড়ি ধরে মেপে নিয়েছিলেন স্ট্যানকোভস্কি।


বাতাসে হাড় নীল করা ছোঁয়াচ আছে ঠিকই কিন্তু এ দেশে অন্ধকারের দমবন্ধ ভাব নেই এতটুকু। এখানে আকাশ ঝকঝকে নীল। এমন মনপ্রাণ জুড়ানো নীল এর আগে দেখননি প্রবীণ বৈজ্ঞানিক। সে নীলের পরতে পরতে মিশে আছে রোদ্দুরের সোনালী চকমক। সে নীলে বিন্দু মাত্র মেঘের খুঁত নেই। চিররোদ্দুরের দেশ, এখানে আকাশ নীলের সমুদ্র আর মাটি তুষারের নিশ্ছিদ্র আস্তরনে সফেদ স্বপ্নময়।
                      

স্যুপের বাটিতে তৃপ্তির চুমুক দিয়ে তাঁবুতে পাতা স্লীপিং ব্যাগে ঠেস দিয়ে বসলেন ডক্টর স্ট্যানকোভস্কি। অবশেষে সাফল্য। ফিজিক্স, ন্যানোটেকনলজি আর বায়োকেমিস্ট্রি মিলে যে এমন অসাধ্য সাধন সম্ভব, সে'টা আজ থেকে বছর দশেক আগেও কেউ ভেবেছিল কী? পৃথিবীর সমস্ত প্রান্ত থেকে প্রায় সাতশো বৈজ্ঞানিকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এই বৈপ্লবিক কাণ্ডটা ঘটিয়ে ফেলাই গেল শেষ পর্যন্ত।


মানুষের মগজে প্রবেশ। নিজেকে একটা মলিকিউলের সাইজে পরিণত করে প্রবেশ করা মানুষের ব্রেনে আর সে’খানে ঢোকা মাত্রই মগজের ভিতরটা মুহুর্তের মধ্যে পরিণত হবে ভূদৃশ্যে। সে ভূদৃশ্য কেমন হবে তা অবশ্যই নির্ভর করবে মগজের কোয়ালিটির ওপর। সেই ল্যান্ডস্কেপ দাঁড়িয়ে একজন ব্রেন সার্জন রিসার্চ চালাবেন একজন ভূবিজ্ঞানীর মতই। মগজের যাবতীয় রহস্যের সমাধান এখন মানুষের হাতের মুঠোয়।


বাটির স্যুপ সাবাড় হয়ে গেল অথচ ঠাণ্ডায় ঠকঠক কাঁপুনি কিছুতেই যাচ্ছিল না। সাইবেরিয়ার মানুষ হয়েও এই অসহ্য শীত বরদাস্ত করতে পারছিলেন না ডাক্তার স্ট্যানকোভস্কি। শেষে শীতের চোটে রিসার্চের কাজ মুলতুবি রেখে বেরিয়ে না আসতে হয়।


আফশোষে হাত কামড়াতে ইচ্ছে হচ্ছিল স্ট্যানকোভস্কির। মহেন্দ্র সিংহের মগজটাকে প্রথম স্যাম্পল হিসেবে বেছে নেওয়াটা ঠিক হয়নি আদৌ।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু