Skip to main content

ক্যান্ডিডেট

- আপনার বায়োডেটা বেশ ইম্প্রেসিভ্‌।

- থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। ও'টা আমার নিজের হাতে টাইপ করা। বাড়ির কম্পিউটারে। প্রিন্ট নিতে অবশ্য সুপারনেট সাইবার ক্যাফেতে যেতে হয়েছিল। আমাদের বাড়ির পাশেই, জাস্ট আট দশ পা।

- ডিটেইলিঙের দিকে আপনার একটা ন্যাক আছে দেখছি।

- এইটে আমি পেয়েছি মূলত করবেট পড়ে। শিকারি মানুষ, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এলিমেন্টের প্রতি ওঁর নজর বেশ সমীহ করার মত।

- করবেট আপনার প্রিয় মিস্টার সেন?

-  আমায় অমিয় বলেই ডাকবেন প্লীজ। আমি আপনার থেকে অন্তত বারো বছরের ছোট। নাকি তেরো? ডেফিনিটলি নট মোর দ্যান চোদ্দ।  অবিশ্যি, এজ গ্যাপটা আজকাল খুব ইলিউসিভ জায়গায় চলে গিয়েছে। যাক, করবেটের কথা বলছিললাম। তবে শুধু করবেট কেন? বিভূতিভূষণ টু বুদ্ধদেব গুহ; সমস্তই গুলে খাওয়া। আসলে জঙ্গল আমার বড্ড প্রিয়। অবিশ্যি আমার আর আপনার বাসও তো জঙ্গলেই। তাই না স্যার?

- জঙ্গল?

- কলকাতাকে জঙ্গল না বলে কোনও উপায় আছে?

- আচ্ছা, আপনি প্রোফাইলটা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল তো?

- পুরোপুরি। ইনফ্যাক্ট, আমার স্ট্রেন্‌থের সাথে খাপে খাপ। আই মিন, নিজেকে অপটিমাইজ করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।

- কোনও রেকমেন্ডেশন লেটার টেটার...।

- বিনুদা নিজে লিখে দিয়েছেন।

- বিনুদা?

- বিনয় হালদার।

- এমএলএ বিনয় হালদার?

- প্লাস কয়লা টাইকুন। ওঁর কথাই বলছি।  ওর সুপারিশের চিঠি আমার বায়োডেটার সঙ্গেই অ্যাটাচ করা, বারো নম্বর অ্যানেক্সচার।

- গুড। কাজটা কিন্তু একটু সিরিয়াস। আর কনফিডেনশিয়াল।

- যে কোনও ব্যাপারেই অতিরিক্ত সিরিয়াস হয়ে যাওয়াটা আমার একটা বদরোগ স্যার। যেমন ধরুন, গোঁফ ছাটতে আমি স্কেল ইউজ করি। বা ধরুন ক্রিকেট দেখতে বসি ডায়রি নিয়ে, যাতে নিজে থেকে স্কোর রেকর্ড করতে পারি। চ্যানেলের স্কোরকার্ডকে অন্ধ বিশ্বাস করব এমন বান্দা আমি নই। আর কনফিডেনশয়াল ব্যাপারে আই অ্যাম লাইক আ ফায়ারপ্রুফ সেফ্‌। আমার শ্বাশুড়ি, বেলাগাছিয়ায় থাকেন আমার অডিটর শ্বশুরমশাই আর আমার প্রফেসর বড় শালার সাথে। এমনিতে নাইস লেডি। রান্নার হাত ফেলনা নয়, পোস্তটা তো রিমার্কেবল। যে'টা বলছিলাম। আমার মায়ের একটা স্পেশ্যাল রেসিপি আছে বুঝলেন। মাটন আলাদীন, একটু আরব্য ট্যুইস্টে অমৃত। তো আমার শ্বাশুড়ি আমায় দু'বছর ধরে পারস্যু করছেন রেসিপিটার জন্য। একবার তো পুজোয় আমায় স্যুইস ঘড়ি অফার করে বসলেন, ওভার অ্যান্ড অ্যাবভ আদ্দির পাঞ্জাবি। অফ কোর্স অ্যাস ব্রাইব। ঘড়িটা নিলেও রেসিপির ব্যাপারে মায়ের ট্রাস্ট বিট্রে করিনি। এমন কী মিসেস্‌কেও রেসিপীটা বলে দিইনি। বুঝতেই পারছেন স্যার, মা মেয়ের কেমিস্ট্রি কোনও কনফিডেনশিয়লিটির তোয়াক্কা করে না।

- আই সী। কোয়াইট অ্যাপ্রিশিয়েবল। দেখুন এখানে মাইনেকড়ি কিন্তু তেমন সুবিধের নয়। যে ছেলেটি ছেড়ে গেছে তার মূল গ্রিভান্স টাকাপয়সাতর ব্যাপারেই ছিল।

- মাইনেকড়ি নিয়ে মাথা ঘামানোর লোক যে আমি নই সে'টা আমার ফ্যামিলি ট্রি স্টাডি করলেই ধরতে পারবেন স্যার।  তিন জেনারেশন মিলে চার জন সন্ন্যাসী হয়ে গেছেন। বাবা নিজে সাত্যিক মানুষ ছিলেন, বেশি টাকার লোভ তাকে নকুলদানার ডিলারশিপ থেকে কেরোসিনের ডিপোর দিকে ঠেলতে পারেনি কোনওদিন। সেজকাকা নক্সাল করেছিল আড়াই মাস।

- আই সী। বেশ ইম্প্রসিভ। আপনার আগে অবিশ্যি আরও জনা দশেকের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়ে গেছে। ফাইনাল খবর আগামীকালের মধ্যে...।

- খুব ভালো করেছেন আমায় ছাড়াও অন্য ক্যান্ডিডেটদের ইন্টারভিউ নিয়ে। মুড়ি না চিবুলে মুড়কির স্বাদ টের পাবেন কী করে বলতে পারেন? মাসলোর পিরামিডের মাথায় তো আর হেলিকপ্টারে করে নামতে পারবেন না। নীচ থেকে ধাপে ধাপে উঠে যেতে হবে। হুড়োহুড়ি করেছেন কি ক্যালামিটি।

- বেশ। আপনার ইন্টারভ্যিউ এখানেই শেষ। আপনার কোনও প্রশ্ন না থাকল আপনি এখন আসতে পারেন।

- প্রশ্ন একটা ছিল স্যার।

- বলুন।

- আপনাদের ওয়াশরুমে হ্যান্ডওয়াশটা জল দিয়ে ডাইলুট করা আছে। সামান্য টু পাইস বাঁচাতে গিয়ে হাইজিনে কম্প্রোমাইজটা বড্ড বেশি হয়ে যাচ্ছে না?

- আমাদের অ্যাডমিন ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নেব। আপনি কাল ফোন করে বরং জেনে নেবেন, হ্যান্ডওয়াশটা ডাইলুট করা কেন হয়েছে।

- চমৎকার। সেকেন্ড হাফের দিকে ফোন করব তো স্যার?

- বেশ।

- তাহলে ওই আড়াইটে থেকে তিনটের মধ্যে করব। সাড়ে তিনটে থেকে একটা ম্যাটিনির টিকিট কাটা আছ।

- গুড বাই।

- ওকে। আসি স্যার। আর ইয়ে, চাকরীর কনফার্মেশনটা ফোনে নয়, চিঠিতেই দেবেন। কেমন? অন ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট থাকলে সুবিধে। মিডল ক্লাস পারস্পেক্টিভ, বুঝতেই পারছেন।

- অফ কোর্স। এবার আসুন। পরের ক্যান্ডিডেট অপেক্ষা করছেন।

- ওহ হো। বটেই তো, বটেই তো। একবার ডেকে নেওয়া হয়েছে যখন ওদের ইন্টারভিউ না নিলে খারাপ দেখাবে। আপনি বরং সে পাট চুকিয়ে নিন। আমি আসি। আর হ্যান্ডওয়াশের গড়বড়টা একটু দেখবেন স্যার, কেমন? মনে একটা খুঁতখুঁত নিয়ে গেলাম।

Comments

rags said…
sattik bananta ektu dekhe niyo, jau fola na hoye bau fola hobe most probably

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু