Skip to main content

রামচন্দ্রর নিদ্রাভঙ্গ

- গুডমর্নিং বাবু রামচন্দ্র। এবারে বিছানা ছাড়ুন স্যার। এগারোটা বাজে।
- উঁ..।
- মাথাটা এখনও ভার বুঝি?
- হুঁ।
- গা গুলোচ্ছে?
- হুঁ।
- দেখ। বমিটমি হয় কিনা।
- মামা গো। বড্ড অস্বস্তি। গলার কাছে পাক দিয়ে উঠছে। ঘেমে চলেছি কনস্ট্যান্ট।
- জামাইবাবু দিব্যি হিঙের কচুরি এনেছিল। তুই হ্যাঙওভারে ফ্ল্যাট, তাই তোর শেয়ারটা আমি কনজিউম করে ফেলেছি।
- তোমার হ্যাঙওভার হয়নি?
- মাংসের ঝোলের হ্যাংওভারে কচুরি মার যায় না রে।
- ওল্ড মঙ্ক?
- তুই খেলি তো। হাফ লিটার।
- তুমিও তো দিব্যি খেয়ে গেলে।
- নাহ। ওসবে আমার রুচি নেই।
- মানে? কাল ছাতে নিয়ে গেলে। মামা ভাগনে রিলেশনে নাকি সামান্য মদ খাওয়া চলতেই পারে। নিজে বোতোল আনলে, রাম আর কোকের পাঞ্চে নাকি ম্যাজিক আছে। দিব্যি গেলাসের পর গেলাস বানালে...।
- তোর গেলাসে রাম। আমার গেলাসে কোক। পাঞ্চ। দু'দিকেই নীট। আর চতুর্দিকে ম্যাজিক।
- মামা, মাইরি। ডিসগাস্টিং।
- এই যে। লেবুর সরবত। ফর ইউ। এটাও আমারই বানানো পেগ।
- অসহ্য।
- একটু এন্টারটেনমেন্টের দরকার ছিল রে। আর দরকার ছিল খবরের। দু'টোই হয়েছে।
- মানে?
- তুই ট্যুইঙ্কল ট্যুইঙ্কলে খুব ভালো ওড়িশি নাচতে পারিস।
- উফ।
- তবে তোর মায়ের সাধের বোনচায়ানার প্লেটগুলো নিয়ে জাগলিং করতে গিয়ে ঝুলিয়েছিস।
- সর্বনাশ!
- ছাতের পাঁচিলে আলতামিরার গুহাবাসীদের মত বাইসন আঁকতে গেছিলিস। হাম্পটিডাম্পটি গোছের কিছু একটা দাঁড়িয়েছিল।
- তুমি জাস্ট..।
- জানিস তো। মেয়েটাকে আমি কেমিস্ট্রি পড়িয়েছি। দু'বছর।
- কী?
- দত্তবাড়ির ছোটমেয়ে।
- ও কোত্থেকে এলো।
- আজি মুরলী বাজে প্রেম বৃন্দাবনে, রাধা সোহাগিনী, শ্যামে অনুরাগীনি, অভিসারে চলে রাধা কুঞ্জবনে।
- মাইরি মামা। ওল্ড মঙ্কের চৌবাচ্চায় চুবিয়ে রেখো তাও সইবে। গান গেও না।
- তোর মধ্যে রাধার সিম্পটম বেশি। ও মেয়ে অনেক বেশি ব্যালান্সড।
- কী সব যে বলছ...।
- প্রতিমার গান ওর গলায় বড় ভালো খেলে রে। সেদিন পাড়ার জলসায় যা গাইলে। ও গান শুনেই বোধ হয় তুই ডায়লগ ভুলে নাটকটা ডোবালি। সেদিন থেকেই ডাউট হচ্ছিল। ভেরিফাই করতে গিয়ে খামোখা এক বোতল রামে ইনভেস্ট করতে হলো।
- মামা, বাবা জানলে...।
- তোর বাবা ফ্যাক্টরির যন্ত্রপাতির বাইরে কিছু জানে? জানতে চায়? দিদিটাকেও বখিয়ে দিলে, হারমোনিয়ামটা বেওয়ারিশ পড়ে রইল। ও আমি সামলে নেব।
- আসলে হয়েছেটা কী..।
- মেয়েটা তোর মত গাম্বাট প্রম্পট শুনতে না পাওয়া ইডিয়ট নয়। নজরুলে ক্লাসিকালে ফার্ম গ্রিপ আছে। ব্রেনে ধার আছে। প্রেম-ফেম সেকেন্ডারি, বখতে না দেওয়াটা প্রাইমারি।
- ইয়ে মানে...।
- আর ব্যাটাচ্ছেলে! আজকাল গুরুজনদের সঙ্গে বসে মদ খাচ্ছিস রে রাস্কেল? নেক্সট টাইম দেখলে পিঠের চামড়া তুলে নেব।

Comments

Unknown said…
এটা ওল্ড মঙ্কের মতোই ছিল।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু