Skip to main content

অমন হয় মাঝে মাঝে

- এহ হে।
- উঁ।
- না শুনুন, এমন ক্যালামিটি আমি ইউসুয়ালি কখনও ফেস করিনি।
- ঠিক আছে। তুমি বাবু, তুমি এত লজ্জা পাচ্ছ কেন? টাকা তো আমি নিয়েছি।
- না তবুও। তবুও। আমি বেশ রুদ্ধশ্বাস মোডে ঢুকে যাই সহজে। আজ কী যে হলো...।
- অমন হয় মাঝে মাঝে।
- সে কী। না না। আমার এমনটা মাঝে মাঝেই হয় না। ইন ফ্যাক্ট এর আগে কখনও হয়নি। আজই হলো। আসলে টাকা দিয়ে কোনওদিন এ'সব...।
- আমিই বোধ হয় গণ্ডগোল করেছি কিছু, পরের দিন আসবেন। অন্যভাবে করে দেব, দেখবেন ঠিক হচ্ছে।
- এই না! এ কী! আমি এ'ভাবেও খুব ভালো ভাবে করে থাকি। দীপিকা বলত আই ডু ইট লাইক আ হর্স। উফ। দীপিকার কথা আবার মনে পড়ে গেল।
- দীপিকা তোমার বউ ছিল? না গার্লফ্রেন্ড?
- গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে করার জন্য সব কিছুই রেডি ছিল।
- দীপিকা তো?
- না দীপিকার দিদি। আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল। ওকেই বিয়ে করার জন্য সব ঠিকঠাক, শুধু পাকা কথার দিন দীপিকাকে ছাত দেখাতে নিয়ে গেলাম। ছাতের ঘরে...গোলমাল হয়ে গেল। ঘটনাটা গোলমাল নয় অবিশ্যি। কিন্তু ছিটকিনি লাগাতে ভুলে যাওয়াটা গোলমেলে। ওর দিদি দুম করে..
- তুমি কী হারামি ব্যাটাছেলে গো...।
- এ মা না! আসলে আমি খুব সেনসিটিভ। দীপিকাও। আর আমাদের যাবতীয় সেনসিটিভিটির মেজর পোরশনটাই ওর দিদিকে সেন্টার করে। শুধু ও বুঝল না, বিয়েটা ভেস্তে গেল।
- তোমার নরকে স্থান হবে গো?
- নরক? স্বর্গ? এই বিজনেসে আমি তোমাদের অনেক বেশি প্র্যাক্টিকাল ভাবতাম। ক্লোজার টু মার্ক্স।
- ঢ্যামনা ব্যাটাছেলে। বেরো।
- এই সেন্ড অফ্‌টা কি আমার এই পারফরমেন্সের কথা মাথায় রেখে? বিশ্বাস করুন ব্যাপারটা অন্যরকম। আসলে এখানে আসার আগে আমি কাফকা, ডিমনিটাইজেশন, বগলের গন্ধের দূর করার ঘরোয়া টোটকা আর গ্যামাক্সিন মিলিয়ে একটা অদ্ভুত চিন্তাভাবনার দলা নিয়ে ড্যালা পাকাচ্ছিলাম। সে জন্যেই এখানে ঠিক...।
- উফ্‌! কী বাজে কথা বলতে পারে রে বাবা লোকটা। দিব্যি আকাশের তারা গুনছিলাম। আচমকা বউনির লোভে একটা অকালকুষ্মাণ্ডকে ঘরে ঢোকালাম। ধ্যেত্তের।
- তারা? ওই পশ্চিমের জানালা দিয়ে? তুমি জানো ওখানের অনেক এমন তারা আছে যাদের আলো এই দুনিয়ায় এসে পৌঁছতে কয়েক লক্ষ বছর লাগে? ওই যে একদম বাঁ কোণের তারাটা, সে তারা হয়ত তুমি আমি দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু আদতে সে তারা কয়েক হাজার বছর আগে নষ্ট হয়ে গেছে।
- ওই যে তারা, যে'টা আমি দেখতে পাচ্ছি, সেটা আদতে নেই?
- থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। নার্ভাস লাগছে না সে'টা শুনে?
- এই হারামি, এবার বেরো না।
- এ কী! বাইরে অন্ধকার যে। অন্ধকারে মাথার ওপর ছাদ না থাকলে আমার প্যালপিটেশন বাড়ে। গত পাঁচবছর ধরে হোমিওপাতির ওষুধ খাচ্ছি এই ফোবিয়া কাটাতে, কিন্তু তেমন লাভ পাইনি।
- রাতে আমি কিন্তু আর ছুঁতেও দেব না।
- অফ কোর্স। আপনার কাছে মৌরি আছে?
- জর্দা চলবে?
- জর্দায় আমার জিভ শুকিয়ে আসে। জিভের দেশে জর্দা অনেকটা ডেমোক্রেসির মত।
- ফের হাবিজাবি কথা! নাহ, তোকে আর সহ্য হবে না। বেরো। এখুনি বেরো। বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে শুয়ে থাক গে যা।
- বেশ। শুধু একটা কথা আর একটা প্রশ্ন। প্রথমে কথাটা বলি। দেখুন, ব্যাপারটা যা দেখলেন তা নয়। প্রয়োজনে দীপিকার ফোন নাম্বার আমি দিয়ে যাচ্ছি আপনাকে। জিজ্ঞেস করে নেবেন। ওই পজিশনে আমি এক্সেপশনাল। আমি ঠিক টারজানের মত, স্কচের মত, গরম রুটিতে নরম পাটালির মত। আর প্রশ্নটা হল, ভগবানের রেসপন্স পেয়েছেন কোনওদিন? মানে ঘরের একটা ঠাকুরের আসন পাতা দেখছি। ক্লায়েন্ট অ্যাকুইজিশনে মাসী বেশি হেল্প করে না ভগবান? আসলে অফিসে প্রমোশনটা নিয়ে এত ঝুলিয়ে রেখেছে। বড়সাহেবের প্রেফারেন্স ওই ব্যানার্জীর দিকেই। তাই ভাবছিলাম, অয়েলিংটা কোন দিকে ফোকাস করানো উচিৎ, বড়সাহেবের দিকে না ভগবানকে ইকুয়েশনে আনব। কমিউনিজমে আত্মার চিঁড়ে আর ভিজছে না বুঝলেন।
- তুই বেরোবি না পুলিশ ডাকব?

সিনেমা ঃ Shadows and Fog

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু