Skip to main content

বটু গোয়েন্দা আর বই

- আপনি সাজেস্ট করছেন যে আমি আমার বাবাকে খুন করেছি?
- মোটিভ আপনার ছিলই দিবাকরবাবু।
- বটুবাবু। শিলিগুড়ির সিরিয়াল মার্ডারে আপনার কেরামতির কথা শুনে আপনাকে ইন্টেলিজেন্ট ভেবেছিলাম। কিন্তু আজ বুঝছি ব্যাপারটা ঝড়ে বক। আপনি উন্মাদ।
- বটে?
- বাবা মারা যান হার্ট অ্যাটাকে। ডাক্তার দত্ত নিজে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। পুলিশ ক্লীনচিট দিতে কসুর করল না অথচ আপনি...। বড়দার যে কোন বুদ্ধিতে গোয়েন্দা লাগাতে গেল...।
- লাশের আঙুলের ডগায়...।
- লাশ? ননসেন্স।
- লাশের ডান হাতের মধ্যমার ডগায় থুতুর ট্রেস ছিল।
- তো?
- ঘরে কোনও মানিব্যাগ বা টাকার নোট পাওয়া যায়নি।
- তাতে কী?
- বই পড়ার ভালো অভ্যেস যেমন আপনার বাবার থেকে আপনারা দু'ভাই ইনহেরিট করেছেন, পাতা ওল্টানোর নোংরা অভ্যেসটিও তার সাথেই টেনে নিয়েছেন। আপনাদের বই ডায়েরির পাতা ওল্টানোর বদ অভ্যাস কারুরই নজর এড়ায় না।
- প্রথমত। জ্ঞান দেবেন না। দ্বিতীয়ত, বেশ! বাবা তাহলে বই পড়ছিল সে রাত্রে। তাতে কী প্রমাণ হয়?
- সে'খানেই। অসোয়াস্তি। খাটে বা খাটের পাশের টেবিলে; কোথাও কোনও বই ছিল না।
- আপনার এ'সব বাজে ডিডাকশন অন্য কাউকে ধরে বলুন। আমার দেরী হচ্ছে, একটা জরুরী অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। বড় ক্লায়েন্ট।
- ক্লায়েন্ট। আপনার বিজনেসের ব্যালেন্স শিটের তো করুণ অবস্থা দিবাকরবাবু। ব্যাঙ্ক রীতিমত পিছনে পড়েছে। হাজরার ফ্ল্যাটটা বিক্রি করতে পারলে চিন্তা লাঘব হয়। অথচ বাবা বেঁচে থাকতে সে ফ্ল্যাটের মালিকানা পাওয়ার কোনও চান্স আপনার ছিল না। সল্টলেকের সেনগুপ্তা সাহেব শুনেছি ফ্ল্যাটটার জন্য ভালো দাম অফার করেছেন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট কি তার সঙ্গেই দিবাকরবাবু?
- আপনি আমার প্রাইভেসি নষ্ট করছেন বটুবাবু। আই ওয়ার্ন ইউ।
- বাবা যখন বুকের ব্যথায় ছটফট করছেন, তখন বাড়ির বাকি সকলের মত তাঁর দিকে নজর না দিয়ে আপনি তাঁর ঘরে এক মিনিটের জন্য ঢুকেই বেরিয়ে গেছিলেন কেন?
- বড্ড বেশি বাতিকগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছেন না কি? আমি গেছিলাম এম্বুলেন্সকে কল দিতে।
- এম্বুলেন্সকে কল করতে আপনার বাবার খাট থেকে বই সরাতে হল কেন?
- ননসেন্স। আপনি প্রলাপ বকছেন।
- আপনার টেবিলে রাখা বইয়ে আপনার বাবার আঙুলের টাটকা ছাপ আর স্যালাইভার ট্রেস কী করে আসল বলতে পারেন? বইয়ের মলাটে আপনার বাবার কফসিরাপের ছিটে কেন এলো সে প্রসঙ্গে না হয় নাই গেলাম। খুন হওয়ার দিন,মানে গতকাল থেকে আপনাদের বাড়িতে একজনই কাশিতে ভুগছিলেন। আপনার বাবা।
- ডিসগাস্টিং। বেশ। বাবার রুম থেকে আমি বইটা নিয়ে এসেছি। পড়তে। তাতে কী? আমার বই আনার সঙ্গে বাবার হার্ট অ্যাটাকের কী সম্পর্ক?
- হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল বইটা পড়ে। বইটা সরিয়ে আপনি প্রমাণ লোপাট করতে চেয়েছিলেন। আপনার উচিৎ ছিল বইটাকে ফেলে দেওয়া। আপনার ফ্লিপকার্টের অর্ডার লিস্টে সে বইয়ের নাম থাকলেও, আমার প্রমাণ করতে একটু ঘাম ঝরাতে হত।
- ব...বটুবাবু...।
- আপনার বাবা গাঁজাখুরি গল্প আদৌ সহ্য করতে পারতেন না। যে লেখায় গল্পের গরু মাথায় ওঠে সে গল্প পড়লেই ওনার শরীরে কষ্ট হত। বই পড়ে শর্টলিস্ট করার জন্য দু'জন সেক্রেটারি রাখার প্রয়োজন সে কারণেই। আর আপনি যে বই বাবাকে পড়তে দিয়েছিলেন সে'খানে গরু স্পেসশিপে চড়ে মহাকাশে গিয়ে পরশুরাম পড়ে। সেক্রেটারি ছাড়া একমাত্র আপনার রেকমেন্ডেড বইই উনি নিশ্চিন্তে ধরতেন। আপনি সুযোগটা এমন ভাবে না নিলেই পারতেন দিবাকরবাবু...।
- আমার...আমার কোনও আর..আর উপায় ছিল না বটুবাবু...আমি উদ্ভ্রান্ত হয়ে গেছিলাম... ইন ফ্যাক্ট ব্যাঙ্ক থেকে আমারর বিজনেস প্রপার্টি সিজ্ করার আলটিমেটাম চলে এসেছে...কিছু একটা না করলে...।
- ওহ! সরি। আপনার ফ্লিপকার্ট অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে হয়েছে একটা বিশেষ সন্দেহ কনফার্ম করতে। ব্যাঙ্কের আলটিমেটাম আসে আজ থেকে ঠিক ছ'দিন আগে। দুপুর নাগাদ। আর সেদিন রাত্রেই আপনি ফ্লিপকার্টে অর্ডার করেন সেই খুনে অদ্ভুতুড়ে বই; বংপেন৭৫।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু