Skip to main content

কলকাতার মেসিয়াহ্ : তৃতীয় পর্ব

- আসুন।
- না মানে...।
- আসুন। বসুন।
- -আসলে...।
- আগে বসুন। তারপর না হয় আসল নকল শোনা যাবে।
- থ্যাঙ্কস।
- আমি বিপাশা।
- ও।
- ভালো?
- হুঁ?
- নামটা। ভালো?
- দিব্যি।
- পিপাসার সাথে ছন্দে মেলে।
- ঠিক। বিপাশার সাথে ছন্দে। পিপাসা কুয়াশা হতাশা আমাশা...।
- থামো। কী বিটকেল গো তুমি। সোহাগ করতে এসে আমাশা?
- আসলে আমি...।
- কী? আসলে কী?
- আমি ঠিক সে কারণে আসতে চাইনি।
- হুঁ? ইয়ার্কি হচ্ছে?
- না। সত্যি।
- টাকা দেবে তো?
- মাসী পাঁচশো বলেছিল। দিয়ে ঢুকেছি।
- তুমি বড় ডেঁপো। দু'শো ছাড়ো। আলাদা করে।
- এই যে।
- ও। রহিস মাল।
- মাল?
- বাবু বলব?
- আচ্ছা, মালই থাক।
- দু'শোর কথা আবার মাসীকে বলতে যেও না।
- আন্ডার দ্য টেবল। সেটা বুঝেছি।
- এবার বলো...।
- আমার নাম বিশ্বরূপ গঙ্গোপাধ্যায়।
- এই দ্যাখো। এখানে আবার কেউ নামধাম বলতে আসে নাকি। কাজ করো, করে ভাগো। দেখে তো মনে হয় কচি..।
- থার্ড ইয়ার।
- এসো, জলদি করো। বসিয়ে রাখলে রেট বাড়বে।
- শুনুন, আমি এসেছি অন্য দরকারে।
- ঠ্যাং ভেঙে দেব। ইয়ার্কি হচ্ছে?
- শুনুন। খুব জরুরী কাজ। আমার কাছে আরও একশো বাহান্ন টাকা আছে।
- কী দরকার?
- শম্পা মণ্ডলকে চেনেন?
- শম্পা মণ্ডল? সে কে?
- ওহ। আপনিও চেনেন না। আমার কাছে একটা ছবি আছে। দেখবেন? যদি চিনতে পারেন?
- তুই পুলিশের ছেলে নাকি? হারামজাদা লাশ ফেলে দেবো...।
- মাইরি বলছি সে'সব না। আমি কলকাতায় পড়াশোনা করছি। আমার কলেজে আইকার্ড দেখবেন?
- বেরো। এখুনি বেরো।
- পায়ে পড়ি দিদি। একটু হেল্প করবেন প্লীজ? বড় দরকার আমার শম্পাকে। আর মেয়েটাও বিপদে, ওর আমাকে দরকার।
- তোকে দেখে তো ভদ্র বলেই মনে হয়।
- শম্পার আমাকে বড় দরকার।
- শম্পা কে?
- ঝুড়িমতি গ্রামের মেয়ে। বীরভূম জেলা। আমাদের গ্রাম।
- তোর কে হয়?
- বিয়ে করার কথা ছিল। মানে। চাকরী পেলে। কিন্তু...।
- কিন্তু?
- আমরা বামুন। বাবার অনেক পয়সা। ওরা ছোট জাত। বাপ নেই। অভাব। কোনও বাজে বদনামে মা সুইসাইড করল। তারপর সব কেমন হুড়মুড় করে পালটে গেল। এই, বছরখানেক আগেই। না বলে কয়ে ও পালিয়ে গেল। গাঁয়ের কেউ আর ওকে দেখেনি। ঝুড়িমতির দারোগা খবর দিয়েছিল ও কলকাতায় এসে...এসে...।
- এসে?
- এসে...।
- লাইনে নেমেছে?
- এই প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটেই আশেপাশেই নাকি কোথাও এসে...।
- ও। আমাদের মত। লাইনের মেয়ে।
- ও বাধ্য হয়েছে। বিশ্বাস করুন। গাঁয়ে থাকলে ওরা ওকে ছিঁড়ে খেত।
- কে স্বেচ্ছায় আসে রে আপদ? তা, তুই ওকে খুঁজছিস কেন?
- ওই। বিয়েটা বাকি আছে।
- বাপ মা হুড়কো দিলে হিম্মত উড়ে যাবে।
- টিউশন করে মাসে হাজার টাকা পাই। সে টাকায় মাসে দু'বার এ পাড়ায় আসি। যদি দেখতে পাই ওকে। বা কেউ যদি খবর দিতে পারে। এক জায়গায় দু'বার আসি না। তবে জায়গাটা এত বড়...। বেশিরভাগ সময়ই সবাই টাকা নিয়ে খেদিয়ে দেয় পাগল ভেবে, আপনি তবু শুনলেন।
- শোন, এখানে এসে সবাই নতুন নাম নেয়, শম্পা আর নেই। ছবিটা দেখা।
- এই..এই যে। দেখেছেন একে?
- নাহ, চেনা ঠেকছে না। তবে...ছবিটা রেখে যাবি?
- যাব। মাঝে মাঝে আসব? খবর নিতে?
- নয়তো কি আমি যাব তোর বাড়ি বয়ে খবর দিতে?
- থ্যাঙ্ক ইউ বিপাশাদি। আমি টাকা দেব...।
- ঠ্যাং ভেঙে দেব।
- না মানে...।
- ওর খোঁজ পেলে কী করবি?
- পড়াশোনা ছেড়ে দেব। প্রচুর টিউশানি করব।  আমি খুব ভালো পড়াই গো। ক্লাস এইট থেকে ট্যুয়েলভ। তারপর একটা মাথা গোঁজার জায়গা। আর মন্দিরে বিয়ে।
- তুই পাগল।
- শম্পাও বলত।
- যদি ওর দেখা পাস, আমায় ডাকবি তোদের বিয়েতে?
- গড প্রমিস।
- বেশি ইংরেজি মারাস না। এই দু'শো টাকা রাখ। আর দু'হপ্তা পর আসিস। আর শোন, সন্ধ্যে বেলা বিজনেস। তুই দুপুরে আসিস।
-বেশ।

**

- আচ্ছা অজয়দা, বিশ্বরূপদার সাথে মেসের কেউ কথা বলে না কেন?
- আমি বলি তো।
- হ্যাঁ, কিন্তু তুমি ছাড়া আর কেউ...।
- তোকে দেখলাম পড়া বোঝাচ্ছে সেদিন। মানে তুইও কথা বলিস।
- বিশ্বরূপদা আমাদের যে কোন প্রফেসরের চেয়ে ভালো পড়া বোঝায়, জানো?
- দ্যাখ অরূপ, ছেলেটা ব্রিলিয়ান্ট।
- আর কী নম্র। কিন্তু মেসের বাকি ছেলেরা কেন বলে বিশ্বরূপদা অত্যন্ত খারাপ ছেলে? মিশলে গোলমাল হতে পারে?
- বিশ্বরূপের অত্যন্ত গোলমেলে জায়গায় নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। সে সম্বন্ধে নিশ্চিত খবর আছে। আর খুব শীগগির ওকে মেসছাড়া হতে হলেও অবাক হব না।
- গোলমেলে জায়গা?
- প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিট। রেগুলার ওকে ওদিকে যেতে দেখা যায়। চার্জ করলে অস্বীকারও করে না।
- প্রেমচাঁদ...বড়াল। ওই ব্র...ব্রথে...ব্রথে..।
- বৌয়ের বাজার।
- ওহ হো। বৌবাজার। কিন্তু বিশ্বরূপদা যে গোলমেলে...তা বিশ্বাস করতে কিছুতেই মন সরছে না।
- বিশ্বাস আমারও হয় না। তবে বিপুলা এ মেসের কতটুকুই বা জানি....বাদ দে। শিউলি মাসীকে একবার হাঁক দে,  ডিনার রেডি হল কিনা দেখ।

(চলবে)

Comments

arijit said…
besh egochhe.

Biswarup r Arup ki alada byakti?

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু