Skip to main content

জলে ডাঙায়




- এ কী! আপনি কে? রাস্তায় বেরিয়েছেন কেন? জানেন না কারফিউ লেগেছে সন্ধ্যে থেকে?
- সরি স্যার। আমি নিতাই দত্ত। ওই, যদু মল্লিক লেনের দু'শো বাইশের এ'তে থাকি। আসলে আজ হাফ সিএল নিয়ে বাড়ি এসে ঘুমিয়ে গেস্‌লাম। সে বেয়াদপ ঘুম বুঝলেন।আর বৌ এই দু'দিন হল বাপের বাড়ি গেছে। সন্ধ্যে বেলার পর ঘুম ভেঙে দেখি রাতে খাওয়ার ব্যবস্থা বলতে কাঁচকলা। তাই ভাবলাম বেরিয়ে যদি এক প্যাকেট মুড়ি আর চানাচুরের ব্যবস্থা যদি করতে পারি।
- দেশের এই দুর্দিনে আপনি মুড়ি চানাচুর কিনতে বাজারে বেরিয়েছেন?
- আসলে খিদেটা এমন পেয়েছিল...।
- খিদে? ভাবুন তো, বর্ডারে বন্দুক কাঁধে আপনি পায়চারি করছেন এমন সময় পেল জব্বর খিদে। আর তখনই আপনি দেখতে পেলেন যে বর্ডার পেরিয়ে শয়ে শয়ে বিদেশী সৈন্য ঢুকছে। আপনি তখন রুখে না দাঁড়িয়ে মুড়ি খুঁজতে বেরবেন?
- স্যার, কাঁধে বন্দুক থাকলে শুনেছি খিদে কমে যায়। তবে কী জানেন, ওয়ান ইজ টু হান্ড্রেড হলে, বন্দুক নিয়ে কেরদানি না দেখিয়ে মুড়ি খুঁজতে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
- কী সেলফিশ মাইরি আপনি। এ জন্যেই বাঙালির কিছু হবে না।
- কিন্তু আপনি বাইরে কেন? আপনার বাড়িতে মুড়ি নেই?
- আমি সরকার বাহাদুরের লোক। শান্তি রক্ষা করতে বেরিয়েছি। কোথাও কোনও অশান্তি দেখলেই কচাকচ চাকু চালিয়ে দেব। পকেটে আছে। দেখবেন?
- চাকু? ইয়ে, ফর্ক ছাড়া ছুরি দেখলে গা গুলোয় স্যার। যাক, আমি আসি? বিধুর দোকান বন্ধ থাকলেও, বাড়ির স্টক থেকে এক প্যাকেট মুড়ি দিয়ে দেবে। জলে ভিজিয়ে খেয়ে নেব'খন।
- মুড়ি যে কিনবেন, ক্রেডিট কার্ড আছে?
- ক্রেডিট কার্ডে মুড়ি?
- নয়তো কি ক্যাশে কিনবেন নাকি? আপনিও কি বিরোধী দলের মত প্রগতি বিরোধী হারামি?
- সরকার নই, প্রগতি বিরোধী বিরোধীও নই। তবে হারামি হতেও পারি। বাবা তাই বলতেন। কিন্তু স্যার, একটু মুড়ি না পেলে চলছে না। আর পকেটে দু'টো দশ টাকার নোট ছাড়া কিস্যু নেই। ওতেই নিতে হবে।
- যদি খবর পেয়েছে যে তুমি ক্যাশে মুড়ি কিনেছ...।
- তবে? চাকু?
- আমি কিছু জানি না ভেবেছ। পকেটে ক্রেডিট কার্ডের বদলে দু'টো দশ টাকার নোট আসে কী করে? চিট ফান্ড থেকে খুব কাঁচা টাকা ঝেড়েছ, তাই না? দেব গলা কেটে এবার?






২।



- আমায়...আমায় বাঁচান!
- বাঁচাব ? আপনি কে? কারফিউর রাত্রে বাইরে কী করছেন?
- ইয়ে আমি যদু মল্লিক লেনের নিতাই দত্ত স্যার, মুড়ি কিনতে বেরিয়েছিলাম।
- তাহলে এমন ভাবে পালাচ্ছেন কোথায়?
- ওই, ওই একজন ছুরি নিয়ে আমায় তাড়া করেছে।
- ছুরি নিয়ে চেজ করছে? সাধারণ মানুষ মুড়ি কিনতে বেরিয়েছে আর কেউ ছুরি নিয়ে তাড়া করেছে? রাস্কেল! নিশ্চয়ই সরকার বাহাদুরের পা চাটা কুত্তার দল!
- আপ...আপনি কারফিউয়ের রাত্রে বাইরে কেন?
- আমরা এই কারফিউ মানি না। আমরা বিরোধী পক্ষের মানুষ। শান্তিরক্ষা করতে বাইরে ঘুরপাক করছি।
- শান্তিরক্ষা করতে বেরিয়েছেন? আপনার পকেটে নিশ্চয়ই চাকু আছে।
- ছুরি? শান্তি রক্ষা করব ছুরি দিয়ে?
- ও। আপনার শান্তি বোধ হয় অন্য ফ্লেভারের।
- আমার কাঁধে যে ঝোলাটা দেখছেন, এতে পেটো রাখা আছে।
- পে...পেটো?
- এ প্রতিহিংসার রাজনীতি খতম করতে হবে। পেটে পেটো ঝাড়লে দিব্যি প্রতিহিংসা খতম হয়।
- আই নর্মালি স্টিক টু জোয়ানের আরক স্যার। পেটে বড় বেশি কিছু সয় না।
- আপনাকে মুড়ি আমি খাওয়াব। আজ রাতের জন্য আপনি আমাদের হয়ে শান্তি রক্ষা করুন।
- শা...শান্তি রক্ষা? পেটো দিয়ে?
- আলবাত। যে চাকু নিয়ে আপনার পিছনে ধাওয়া করেছে, তাঁর দিকে তাক করে ছুঁড়ে আসুন। ততক্ষণে আমি মুড়ি মাখার ব্যবস্থা করছি।
- না মানে...।
- আরে এরা খতরনাক। মহাবদ। দেখতে পেলেই পেটো চার্জ করবেন। কী দুঃসাহস, এদের অন্যায় নিয়ে আমাদের বড়নেতা দু'টো প্রতিবাদী কথা বলতে না বলতেই আমাদের ছোটনেতাদের পিছনে পেয়াদা লাগিয়ে দিল?
- সরকারবাহাদুর গুবলেট করেছেন বইকি। আপনার নেতাও বেশ করেছেন প্রতিবাদ করে। তবে কিনা, আপনাদের ছোটনেতারাও টু পাইস এদিক ওদিক করেছিলেন, তাই হয়তো...।
- আর ওদের নেতারা করেনি? 'টা নাম বলব?  ওদের পিছনে পেয়াদা লাগছে না কেন? নেপোটিজমের ডিপো কোথাকার
- দোষ করলে ঘানি টানতে হবে, এই হচ্ছে নিয়ম। কী বলুন স্যার? আপনাদের ছোটনেতারা বোধ হয় সামান্য দোষ করেই ফেলেছেন তাই...।
- দোষ করলেই পেয়াদা লেলাতে হবে? ওদের অন্য কত দোষ যে আমরা চোখ বুজে পাশ কাটিয়ে যাই? তার বেলা? একবার কাছা ধরে সামান্য টান দিয়েছি বলে মুগুর পেটা করবে?
- না মানে ওই; কড়ি ফর তেল আর ইট ফর পাটকেল!
- হারামি মুড়িখোর। দেবো পেটে পেটো ঠুসে?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু