Skip to main content

কলকাতার মেসিয়াহ্‌ - দ্বিতীয় পর্ব

- ও অজয়দা!
- কী?
- গাঁজা খায় না, খিস্তি করে না। মদ কোনওদিন ছুঁয়েও দেখেনি। এমনকি আধুনিক কবিতাও লেখে না।
- কে?
- ওই যে। নতুন ছেলেটা।
- অরূপ।
- হুঁ। এমন নেতানো রুমমেট পেয়ে বড্ড চিন্তা হচ্ছে। সন্ধ্যে হলেই পড়তে টড়তে বসবে না তো?
- বসলে অন্তত তোর খানিকটা উপকার হবে রে বল্টে। পার্ট ওয়ানের রেজাল্টের পর বাড়িতে তিন মাস ঢুকতে পারিসনি। ভুলে যাস না।
- এ মেসই আমার বাড়ি। বাবার বুর্জোয়া সেটআপ আর সহ্য হয় না।
- বটে?
- নয়তো আর বলছি কী।
- তা মেসবাড়ির খরচটাও তো সেই বুর্জোয়া ফান্ড থেকেই আসছে খোকা।
- নিজেকে রবিনহুড হিসেবে দেখি। তখন আর চিন্তা থাকে না। বাপের অগাধ আছে। আর আমার বাবার টাকা মানে তো ব্যাঙ্কের ফুর্তি। তার থেকে মাসে হাজার খানেক আমার পিছনে গেলে দেশের মঙ্গল, দশের মঙ্গল।
- নিজেকে দেশ আর দশের সাথে ইকুয়েট করছিস?
- বাহ্‌! মেসের ফিফ্‌টি পার্সেন্ট সিগারেট কনসাম্পশনের সোর্স আমার প্যাকেট ঝেড়ে। সে'বেলা? বাপের টাকার বেনিফিট আমি একা ভোগ করছি, সে'টা তুমি বলতে পারলে?
- তা অবিশ্যি ঠিক। তবে দেখিস, অমন সোনার হাঁসের মত বাপের পেটটা হুট্‌ করে চিরে দিস না। মেসশুদ্ধ পথে বসতে হবে। তুই না থাকলে মাসের শেষ দিকে দেলখোসার কাটলেট জোটাবে কে? তাই বলছি। পার্ট ট্যু তে দয়া করে ভদ্রস্থ নম্বর জুটিয়ো।
- ভর সন্ধ্যে বেলা নম্বর তুলে কথা বললে অজয়দা?
- তা, নতুন সে শর্মাটি কোথায়?
- ছাদে।
- ছাদে?কেন?
- বাবুর ফ্রেশ এয়ারের দরকার বড় ঘনঘন পড়ে।
- ফ্রেশ এয়ার? তোকে বলেছে? যে ফ্রেশ এয়ারের জন্য ছাদে যায়?
- সিগারেট খায় না যখন এ রুমে ভ্যাপসা লাগাটা স্বাভাবিক। তবে প্রিসাইসলি সে দরকারেই ছাদে যায় কিনা সে'টা জিজ্ঞেস করিনি। ওর পাশের টেবিলে আমার পানু ওমনিবাস দু'দিন রেখে দিয়েছিলাম। ছুঁয়েও দেখেনি। খালিফা মাল। আর ওর তাক ভর্তি শুধু সিলেবাসের বই। ওকে খামোখা প্রশ্ন করার রিস্ক নিই না।
- রিস্ক না নিলে হবে? সিনিয়ররা যদি জুনিয়রদের গ্রুম করতে এগিয়ে  না আসে তাহলে তো এ মেস ভেসে যাবে!
- ওকে গ্রুম করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। সাংঘাতিক পিস।
- সাংঘাতিক? অরূপ?
- সাংঘাতিক বলে সাংঘাতিক? গভীর জলের ডলফিন। গতকাল মেসের ওই চালানি মাছের ট্যালট্যালে ঝোল দিয়ে চেটেপুটে ভাত খেয়ে বলে 'তোফা'।
- বটে?
- তা শুনে হেঁসেলের শিউলি মাসী স্ট্রেট ইপ্রেস হয়ে গেলো। আড়াই বছর ধরে মেসে আছি, এই প্রথম আমি শিউলি মাসীকে হাসতে দেখলাম।
- অ। তা প্রেমিকরা একটু অমন সাংঘাতিক হয়ে থাকে। ও নিয়ে ভাবার কিছু নেই। এ শর্মা মেসের প্রতিভা চিনতে ভুল করে না। অরূপ এ মেসে দিব্যি সেট হয়ে যাবে।
- অরূপ প্রেম করে? ওইটুকু ছেলেটার প্রেমিকা আছে?
- সবাই কি তোমার মত দেওয়ালে চে আর সোনালি বেন্দ্রের ছবি লাগিয়ে খতম হয়ে যাবে? ও ছেলের এলেম আছে।
- এলেম থাক। তাই বলে ওই দুধেভাতে ছেলের প্রেমিকা থাকবে?
- গা জ্বলছে?
- না তা না। তবে ইয়ে অজয়দা, তুমি শিওর? ও তোমাকে বলেছে?
- পার্সোনাল লেভেলে ডিসেক্ট করা হয়নি। তবে ও ছেলের অ্যাকাউন্টেন্সির বইয়ের ফাঁকে গোলাপি খাম। তার ওপর সোনালী স্পার্কেলের রঙে মেয়েলি হাতের লেখায় 'অরূ' লেখা।
- অরূ? সুখেন দাসের স্যান্ডো গেঞ্জি লেভেলের প্রেম তো।
- আঙুর ফল দিয়েই অবিশ্যি ওয়াইন হয়।
- যা বলেছ। দেশলাই আছে তোমার কাছে? আমার লাইটারটা বোধ হয় প্রদীপ্ত মেরে দিয়েছে।

(ক্রমশ)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু