Monday, January 2, 2017

কলকাতার মেসিয়াহ্‌ - দ্বিতীয় পর্ব

- ও অজয়দা!
- কী?
- গাঁজা খায় না, খিস্তি করে না। মদ কোনওদিন ছুঁয়েও দেখেনি। এমনকি আধুনিক কবিতাও লেখে না।
- কে?
- ওই যে। নতুন ছেলেটা।
- অরূপ।
- হুঁ। এমন নেতানো রুমমেট পেয়ে বড্ড চিন্তা হচ্ছে। সন্ধ্যে হলেই পড়তে টড়তে বসবে না তো?
- বসলে অন্তত তোর খানিকটা উপকার হবে রে বল্টে। পার্ট ওয়ানের রেজাল্টের পর বাড়িতে তিন মাস ঢুকতে পারিসনি। ভুলে যাস না।
- এ মেসই আমার বাড়ি। বাবার বুর্জোয়া সেটআপ আর সহ্য হয় না।
- বটে?
- নয়তো আর বলছি কী।
- তা মেসবাড়ির খরচটাও তো সেই বুর্জোয়া ফান্ড থেকেই আসছে খোকা।
- নিজেকে রবিনহুড হিসেবে দেখি। তখন আর চিন্তা থাকে না। বাপের অগাধ আছে। আর আমার বাবার টাকা মানে তো ব্যাঙ্কের ফুর্তি। তার থেকে মাসে হাজার খানেক আমার পিছনে গেলে দেশের মঙ্গল, দশের মঙ্গল।
- নিজেকে দেশ আর দশের সাথে ইকুয়েট করছিস?
- বাহ্‌! মেসের ফিফ্‌টি পার্সেন্ট সিগারেট কনসাম্পশনের সোর্স আমার প্যাকেট ঝেড়ে। সে'বেলা? বাপের টাকার বেনিফিট আমি একা ভোগ করছি, সে'টা তুমি বলতে পারলে?
- তা অবিশ্যি ঠিক। তবে দেখিস, অমন সোনার হাঁসের মত বাপের পেটটা হুট্‌ করে চিরে দিস না। মেসশুদ্ধ পথে বসতে হবে। তুই না থাকলে মাসের শেষ দিকে দেলখোসার কাটলেট জোটাবে কে? তাই বলছি। পার্ট ট্যু তে দয়া করে ভদ্রস্থ নম্বর জুটিয়ো।
- ভর সন্ধ্যে বেলা নম্বর তুলে কথা বললে অজয়দা?
- তা, নতুন সে শর্মাটি কোথায়?
- ছাদে।
- ছাদে?কেন?
- বাবুর ফ্রেশ এয়ারের দরকার বড় ঘনঘন পড়ে।
- ফ্রেশ এয়ার? তোকে বলেছে? যে ফ্রেশ এয়ারের জন্য ছাদে যায়?
- সিগারেট খায় না যখন এ রুমে ভ্যাপসা লাগাটা স্বাভাবিক। তবে প্রিসাইসলি সে দরকারেই ছাদে যায় কিনা সে'টা জিজ্ঞেস করিনি। ওর পাশের টেবিলে আমার পানু ওমনিবাস দু'দিন রেখে দিয়েছিলাম। ছুঁয়েও দেখেনি। খালিফা মাল। আর ওর তাক ভর্তি শুধু সিলেবাসের বই। ওকে খামোখা প্রশ্ন করার রিস্ক নিই না।
- রিস্ক না নিলে হবে? সিনিয়ররা যদি জুনিয়রদের গ্রুম করতে এগিয়ে  না আসে তাহলে তো এ মেস ভেসে যাবে!
- ওকে গ্রুম করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। সাংঘাতিক পিস।
- সাংঘাতিক? অরূপ?
- সাংঘাতিক বলে সাংঘাতিক? গভীর জলের ডলফিন। গতকাল মেসের ওই চালানি মাছের ট্যালট্যালে ঝোল দিয়ে চেটেপুটে ভাত খেয়ে বলে 'তোফা'।
- বটে?
- তা শুনে হেঁসেলের শিউলি মাসী স্ট্রেট ইপ্রেস হয়ে গেলো। আড়াই বছর ধরে মেসে আছি, এই প্রথম আমি শিউলি মাসীকে হাসতে দেখলাম।
- অ। তা প্রেমিকরা একটু অমন সাংঘাতিক হয়ে থাকে। ও নিয়ে ভাবার কিছু নেই। এ শর্মা মেসের প্রতিভা চিনতে ভুল করে না। অরূপ এ মেসে দিব্যি সেট হয়ে যাবে।
- অরূপ প্রেম করে? ওইটুকু ছেলেটার প্রেমিকা আছে?
- সবাই কি তোমার মত দেওয়ালে চে আর সোনালি বেন্দ্রের ছবি লাগিয়ে খতম হয়ে যাবে? ও ছেলের এলেম আছে।
- এলেম থাক। তাই বলে ওই দুধেভাতে ছেলের প্রেমিকা থাকবে?
- গা জ্বলছে?
- না তা না। তবে ইয়ে অজয়দা, তুমি শিওর? ও তোমাকে বলেছে?
- পার্সোনাল লেভেলে ডিসেক্ট করা হয়নি। তবে ও ছেলের অ্যাকাউন্টেন্সির বইয়ের ফাঁকে গোলাপি খাম। তার ওপর সোনালী স্পার্কেলের রঙে মেয়েলি হাতের লেখায় 'অরূ' লেখা।
- অরূ? সুখেন দাসের স্যান্ডো গেঞ্জি লেভেলের প্রেম তো।
- আঙুর ফল দিয়েই অবিশ্যি ওয়াইন হয়।
- যা বলেছ। দেশলাই আছে তোমার কাছে? আমার লাইটারটা বোধ হয় প্রদীপ্ত মেরে দিয়েছে।

(ক্রমশ)

No comments: