Skip to main content

উষ্ণ

হান্স বাবার কাছে বারবার সেই দারুণ মজার দেশের কথা শুনতে চায়। সেই নরম হাওয়ার দেশের কথা, সেই উষ্ণ পরিবেশের দেশের কথা। আর বাবা এত সুন্দর করে সেসব গল্প বলে যে হান্সের বার বার মনে হয় যেন গল্পের থেকে একটু নরম গরম হাওয়া তার গাল দু'টোকে ছুঁয়ে যায়। সে দেশ অবশ্য হান্সের বাবা নিজের চোখে দেখেনি। এমনকি হানসের বাবার বাবা বা তার বাবাও চোখে দেখেনি সে রূপকথার দেশ।
হান্সের দাদুর দাদুর বয়স যখন ছয়, সেই সময় সেই মায়াবী দেশ ছেড়ে অনেকে তখন এই কনকনে ঠাণ্ডার দেশে চলে আসে। আসতে বাধ্য হয়। হান্সের দাদুর দাদুও সেই দলে ছিলেন।
- সবাই ওই সুন্দর দেশ ছেড়ে চলে আসে কেন বাবা?
- কতবার বলব হান্স, মানুষের খাবার ফুরিয়ে গেছিল। তাই ও দেশ ছেড়ে এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়তে হয়েছিল। কেউ ধারে কাছে রয়ে গেছিল। আর কেউ কেউ অনেক দূরে চলে যায়। যেমন তোর দাদুর দাদু।
- খাবার কেন ফুরিয়ে গেছিল বাবা?
- আবার বলতে হবে?
- হ্যাঁ!
- বেশ। সে দেশে আমাদের খাওয়ার ফুরিয়ে গেছিল কারণ আমরা চাষআবাদ বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
- চাষআবাদ কী বাবা?
- নিজের খাবার নিজে উৎপন্ন করা।
- আরিব্বাস। চাষআবাদ বন্ধ করেছিলাম কেন?
- সে লম্বা গল্প। অনেক অনেক অনেক বছর আগে আমাদের জীবন ঠিক আজকের মতই ছিল। তারপর আমরা বেশি খাবার যোগানের ব্যবস্থা করতে গিয়ে চাষআবাদ শুরু করলাম। সেই থেকে প্যাঁচালো দুনিয়া শুরু হল। খাবারের জন্য চাষ, চাষের জন্য যন্ত্রপাতি, যন্ত্রপাতির জন্য কারখানা, এ সব কিছুর জন্য বাজার, বাজারের জন্য অর্থনীতি।
- অর্থ কী?
- অর্থ নীতি। ইকনমি। মনে নেই আগের দিন বলেছিলাম?
- ঠিক ঠিক। আচ্ছা। ইকনমির পর?
- এত কিছু আসায় সুবিধে হল এই যে প্রচুর খাবার এলো। জিনিষপত্র এল। কিন্তু মুস্কিল হল খাবারের লোক অনেক বেশী পয়দা হল। গরীব তৈরি হল, বড়লোক তৈরি হল, বোকা তৈরি হল, ধান্দাবাজ তৈরি হল। যুদ্ধ তৈরি হল।
- যুদ্ধ? যুদ্ধ কী?
- সে অনেক বড় ব্যাপার রে হান্স। সে গল্প অন্য একদিন করব। মোদ্দা কথা হল, মানুষ ভালো থাকার চেষ্টা করতে গিয়ে অ্যায়সা ব্যস্ত হয়ে পড়লো যে প্রাণ ওষ্ঠাগত।
- কী মুস্কিল।
- মুস্কিল তো বটেই। অবশেষে, অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করার পরে তোর দাদুর দাদুদের সময় মানুষ ঠিক করলে অনেক হয়েছে। ইকনমির ভাঁওতা আর নয়। আবার ভবঘুরে জীবনে ফিরে যেতে হবে।
- ভবঘুরে, মানে আমরা যেমন থাকি?
- হ্যাঁ। চাষআবাদ নয়, আশেপাশে যতদিন খাওয়ার দাওয়ার কুড়িয়ে পাই খাও; খাওয়ার শেষ হয়ে গেলে অন্য কোথাও।
- আমি নতুন কোথাও যাই না কেন? এই বিচ্ছিরি ঠাণ্ডার মধ্যে আমায় ফেলে রেখেছ কেন?
- ধুর। তোর বয়স মাত্র পাঁচ। এই অঞ্চলে আমরা আরও বছর দুই তিন নিশ্চিন্তে আছি। খাবার ফুরলে দেখা যাবে।
- এবার ওই গরম দেশের গল্প বল প্লীজ।
- গরম বলতে, আমাদের এই টূপুসার তুলনায় সেখানে গরম অনেক। তবে তখন মানুষের সহ্য ক্ষমতা এত কম ছিল যে ওই গরমের দেশেও তাদের বেজায় ঠাণ্ডা লাগত।
- হি হি হি হি! মানুষ আগে কী বোকা ছিল।
- তা ছিল।
- তবে ওদের দেশ কী সুন্দর ছিল বল বাবা। আর আমাদের দেশে একে এত ঠাণ্ডা আর তার ওপর এত বিতিকিচ্ছিরি নাম - টূপুসা। এটা কোন নাম হল? অথচ দাদুর দাদুর সেই দেশের নাম কী সুন্দর ছিল; সাইবেরিয়া। শুনলেই মনে হয় সাই সাই করে বেড়িয়ে আসি। আচ্ছা বাবা, সাইবেরিয়ায় এত গরম আর আমাদের এই টূপুসায় এত ঠাণ্ডা কেন?
-কারণ সাইবেরিয়া ছিল অন্য গ্রহে হান্স। আমাদের টূপুসা যেমন প্লুটো গ্রহতে আছে, এখানেই সর্বত্রই কাটখোট্টা ঠাণ্ডা। সাইবেরিয়া অন্য গ্রহের ছিল রে, সে গ্রহটা এমন উটকো ঠাণ্ডা ছিল না। সেই জন্যেই...। অনেক হল। এবার ঘুমো।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু