Skip to main content

প্রশ্ন

-বাবা, ঘুমিয়ে পড়েছ?
-না।
-কেন ঘুমোওনি?
-ভাবছি।
-কী ভাবছ?
-তুই এত প্রশ্ন করিস কেন। তাই ভাবছি।
-তাই ভাবছ কেন?
-কারণ উত্তরগুলো আমাকেই দিতে হয়।
-উত্তরগুলো তোমাকেই দিতে হয় কেন?
-কারণ তোর মা ভোঁসভোঁস করে ঘুমিয়ে চলে, এই মেশিনগানের মত প্রশ্নগুলো তাই আমাকেই হ্যান্ডল করতে হয়।
**
-আমি ভোঁসভোঁস করে ঘুমোই?
-কই না তো।
-তবে তুমি ছেলেকে এই মাত্র বললে কেন?
-তুমি ঘুমিয়ে গেছিলে বলে এক্স্যাজারেট করে বলে ফেলেছি।
-এত এক্স্যাজারেট কর কেন কথায় কথায়?
-না মানে। ছেলেটার এত প্রশ্ন করে পদে পদে।
-প্রশ্ন করা কি খারাপ?
-না খারাপ কেন হবে।
-খারাপ যদি না হয় তাহলে তুমি বিরক্ত হচ্ছ কেন?
-আসলে সব কথাতেই যদি প্রশ্ন থাকে তাহলে...
-তাহলে কী?
-কিছু না। ঘরটা কেমন গুমোট লাগছে। তুমি ছেলেকে নিয়ে ঘুমোও, আমি ভাবছি ড্রয়িং রুমের সোফায় ঘুমিয়ে নেব আজ। প্লীজ।
**
-খোকা তুই সোফায় শুয়ে কেন?
-এমনি মা। ও কিছু না। তুমি আবার উঠে এলে কেন। শুয়ে পড়।
-বৌমার সাথে ঝগড়া হয়েছে?
-না। ঝগড়া হয়নি। আসলে মা ছেলে মিলে এত সওয়াল করে চলেছে একটানা।
-কিরকম সওয়াল?
-সব ফালতু সব প্রশ্ন।
-ফালতু প্রশ্ন বলছিস কেন?
-প্রশ্ন করতে হয় তাই করছে। তাই ফালতু।
-কোন প্রশ্ন করতে হয় বলে করা খোকা?
-ইয়ে মা। সোফায় কেমন অসোয়াস্তি হচ্ছে। ঘুম আর আসছে না। ভাবছি ছাতে একটু পায়চারী করে আসবো। প্লীজ।
**
-চ্যাটার্জি সাহাব আছেন নাকি ওখানে?
-হ্যাঁ। কে কেয়ারটেকার বুঝি!
-জি সাব। আপনি এত রাত্রে ছাদে কেন সাহাব?
-এমনি। হাওয়া খানে কে লিয়ে আয়া হ্যায়।
-ঘর মে এসি খারাব হ্যায় কেয়া সাহাব?
-না।
-ফির ছত পে হাওয়া কে লিয়ে কিউ আয়া সাব?
-আমি ঝাঁপ দেনে কে লিয়ে আয়া হ্যায়। ভাগো হিয়াসে।
-ঝাঁপ দেনে মতলব সাব?
-আউর এক সওয়াল করেগা তো হাম তুমকো মার ডালেগা।
-কিউ সাব। মেরা কেয়া কসুর?
**
-কী রে খোকা, হঠাৎ ছাদ থেকে ঝাঁপ দিলি কেন?
-প্রশ্নের ভয়ে বাবা।
-প্রশ্নের ভয়ে মানে?
-ছেলের প্রশ্নের ভয়ে পাশ ফিরে শুলাম। বৌয়ের প্রশ্নের ভয়ে বেডরুমে ছেড়ে ড্রয়িং রুমে শুতে এলাম। মায়ের প্রশ্নের ভয়ে ছাতে উঠে এলাম।শেষে কেয়ারটেকারের প্রশ্নমালা সহ্য করতে না পেরে ঝাঁপ দিলামl
-তা ঝাঁপ দিয়ে কী লাভ হল?
-অক্কা পেলাম। মন্দের ভালো এই যে তোমার সাথে এদ্দিন পরে দেখা হল।
-অক্কা পেয়ে কী বুঝলি?
-ভূত হয়েও শান্তি নেই। প্রশ্ন থামে না।
-অতএব?
-অতএব, নেক্সট কোশ্চেন প্লীজ।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু