Skip to main content

প্ল্যানচেটের ব্যাপার

- প্ল্যানচেট?
- প্ল্যানচেট।
- প্ল্যানচেট করে তুই...?
- বাবার মনে মনে উইলের ব্যাপারে কী প্ল্যান করছে সেটা জানবো। বড়দাদের মতিগতি মোটেও সুবিধের ঠেকছে না। 
- এক মিনিট। তোর কী মাথা খারাপ হল বিশে? জ্যান্ত বাপ্‌কে প্ল্যানচেটে ডাকবি?
- এই বইটা পড়ে দেখ। ক্রেগ মিলার, উনিশ শতকে বলিভিয়ার তিরিশ বছর কাটিয়ে নিজের শহর লন্ডনে ফিরে এই বইটা লেখেন। দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীদের থেকে প্ল্যানচেটের কত ট্রিক্‌স যে এখানে আছে।
- "প্লেয়িং উইথ দ্য স্পিরিট", নামটা তো গাল ভরা। কিন্তু এখানে কী লেখা আছে যে জ্যান্ত মানুষকে প্ল্যানচেটে ডাকা যায়?
-না।
- তবে?
- প্ল্যানচেটে কাদের ডাকা হয়?
- মৃত ব্যক্তিদের।
- বি স্পেসিফিক। মৃত বলতে?
- ওকে। আত্মাদের ডাকা হয়।
- কারেক্ট। জ্যান্ত মানুষদের কি আত্মা থাকেনা মিলু?
- তো দক্ষিণ আমেরিকার এই আদিবাসীরা জ্যান্ত মানুষের আত্মাদের প্ল্যানচেটে ডাকার উপায় জানে। আর ক্রেগ সাহেব এই বইতে সেই সূত্র লিখে গেছেন।
- ঠিক তাই।
- তা জ্যান্ত মানুষের আত্মারা যখন প্ল্যানচেটের টেবিলে এসে উপস্থিত হয়, তখন তাদের দেহের কী অবস্থায় থাকে?
- গুড কোশ্চেন। অঘোর নিদ্রায় থাকে তখন শরীর। এতটাই গভীর যে কোমা বলা যেতে পারে।
- আত্মা দেহে ফিরে গেলে তবে সে দেহ কোমা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে, তাই তো?
- ঠিক তাই। আত্মা দেহে ফিরতে না পারলে, আজীবন জড় পদার্থের মত কোমায় পড়ে থাকতে হবে। শরীর শ্বাস গ্রহণ করবে, কিন্তু আত্মার অভাবে নিষ্প্রাণ বোধশক্তিহীন হয়ে পড়ে থাকবে।
-এক মিনিট। আত্মা দেহে ফিরতে না পারলে মানে?
-মানে; জ্যান্ত মানুষের আত্মাকে ইনভোক করাতে একটাই অসুবিধে। সে আত্মা নিজে থেকে দেহে ফিরতে পারে না। তাকে ফেরাতে হয়।
-সর্বনাশ। এসব গাঁজাখুরি গপ্প সে সাহেব লিখে যেতে পারলে? আর তুই বিশ্বাস করলি সেসব বিশে?
-বিশ্বাস করি আমি।
-ইনক্রেডিব্‌ল। কেমিস্ট্রির গোল্ড মেডেলটা গলিয়ে মাদুলি করেছিস নাকি ?
-এত রাত্রে তোর বাড়িতে এই বইটা হাতে আমি এমনি ছুটে আসিনি বিশে। বাবাকে প্ল্যানচেটের প্ল্যানটা তোকে আমি কালকেও বলতে পারতাম।
-তবে এসেছিস কেন?
-একটা গণ্ডগোল ঘটে গেছে।
- কীরকম?
- ব্যাপারটা প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। তাই এক্সপেরিমেন্ট করে দেখলাম। মিলু। মুস্কিল হচ্ছে নিজের আত্মাকে নিজের দেহে ফেরাতে পারছি না। হেল্প মি। এই বইয়ের দু'শো বাহাত্তর নম্বর পাতায় দেখ লেখা আছে প্রসেস্‌টা...।
-হোয়াট নন-সেন্স বিশে...।
-সিরিয়াস ব্যাপার মিলু। দেরী করিস না। হেল্প মি। আমার বডিটা বাড়িতে কোমায় পড়ে আছে। বৌ আঁচ করতে পারলেই হইহইরইরই কাণ্ড বাঁধবে। ক্যুইক।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু