Skip to main content

শনিবারের অফিস

- স্যার, একটা কথা ছিল।

- আবার কী কথা শুভ্র? আই টোল্ড ইউ। গেট দ্য এম-আই-এস রেডি এস্যাপ।

- না মানে...কথা তেমন নয়। জাস্ট একটা চিঠি দেওয়ার ছিল।

- চিঠি? হোয়াট চিঠি?

- ওই। রেসিগনেশনের।

- রেসিগ...? হোয়াট? চালাকি করছ নাকি?

- না স্যার। সিরিয়াস।

- কী ব্যাপার? টেল মি ক্লিয়ারলি। আই ডোন্ট হ্যাভ টাইম ফর দিস ননসেন্স।

- না মানে। এই ভাবে প্রতি উইকেন্ডে আপনি অফিসে ডেকে নেবেন। আমার একটা ফ্যামিলি লাইফ আছে স্যার। এটা চলতে পারে না।

- হোয়াট দ্য হেল ইজ দ্যাট সাপোজ্‌ টু মিন শুভ্র? আমিও অফিস আসি উইকেন্ডে।

- আপনি আসেন কারণ আপনার ফ্যামিলি অন্য শহরে থাকে। ইউ হ্যাভ নাথিং টু ডু হিয়ার সিন্স ইউ আর আ ফোর্সড ব্যাচেলর। কিন্তু আমার ফ্যামিলি আমার সাথে থাকে। অদরকারী কাজের জন্য হুড়মুড় করে শনি রবি অফিস আসা। টূ মাচ স্যার। 

-ইউ আর অ্যান ইডিয়ট। আমার আর কিছু বলার নেই। তোমার মত লোক আসবে যাবে, কোম্পানি ডাজন্‌ট বদার। যদি তুমি ভেবে থাক যে আমায় ব্ল্যাকমেল করবে দেন লেট মি টেল ইউ ইউ আর মেসিং উইথ দ্য রং পার্সন।

- মেস্‌ টেস্‌ করছি না স্যার। যাক। কথায় কথা বাড়ে। আপনি অকারণে উত্তেজিত হচ্ছেন। আপনার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে দেখছি। আপনি তো আবার হাইপার টেনশনে ভোগেন। অত এক্সাইটেড হবেন না। 

- শাট আপ অ্যান্ড গেট আউট। নাউ।

- যাচ্ছি যাচ্ছি। শুধু আমার রেসিগনেশন লেটারটা দু'কপি দিয়েছি। এক কপি যদি সই করে অ্যাকনলেজ করে দিতেন স্যার। 

- এই নাও, আই হ্যাভ পুট মাই ইনিশিয়ালস। নাউ গেট আউট!

- একবারও চিঠিটা না পড়ে অ্যাকনলেজ করে আমার মুখে ছুঁড়ে মারাটা কী ঠিক হল স্যার? 

- তোমার মত কর্পোরেট স্কামের ঘ্যানঘ্যানে চিঠি পড়ার চেয়ে আই হ্যাভ বেটার থিংস টু ডু মিস্টার শুভ্র দাসগুপ্তা।   তোমার হালত রাস্তার কুকুরের মত হবে, ডু ইউ নো দ্যাট?  এই এস্টাব্লিশ্‌ড চাকরী ছেড়ে কী করবে ভেবেছ?

- একটা বিজনেস প্ল্যান ছিল। প্রায় তৈরিই ছিল।

- প্ল্যান? রিয়েলি?

- টোটালি। সমস্ত কিছু রেডি রেখেছিলাম। কিন্তু আর করা হল কই।

- হোয়াট ডু ইউ মিন?

- আরে বাইকে অফিস আসছিলাম আজ। এত বৃষ্টি হয়েছে সকালের দিকে স্যার; রাস্তায় জল থই থই। ক্রমাগত আপনি মোবাইলে তাড়া দিচ্ছিলেন। ওই। সামান্য অন্যমনস্ক হতেই বাইকটা স্কীড করল। আর তখনি পিছন থেকে একটা স্টেট বাস এসে পিষে দিয়ে গেল বুঝলেন। স্পটেই চলে যেতে হলে। বডিটা মর্গের দিকে রওনা হতেই আমি চলে এলাম, আফটার অল লাইফের শেষ ইম্পরট্যান্ট কাজটা পেন্ডিং ছিল; রেসিগনেশন লেটারটা আপনাকে অফার করে যাওয়া। এখন আমি ঝাড়া হাত পা। অবিশ্যি, হাত পা আর এগজ্যাক্টলি নেই।

-শুভ্র...শুভ্র...ইউ...ইউউউউউউউ...

-ও কী! কী হল স্যার। এ কী! আপনার মুখ দিয়ে  গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে কেন? এত নার্ভাস হচ্ছেন কেন স্যার! কী হল!

**   

" মিস্টার সাহা শুধু একজন বস্‌ ছিলেন বললে ভুল হবে। হি ওয়াজ আ মেন্টর টু। ওনার কাজের ধরণ, ওনার এমপ্লয়ি ওয়েলফেয়ারের প্রতি ফোকাস; এক কথায় যাকে বলে ইন্সপায়ারিং। ওনার এই আচমকা চলে যাওয়া এই কোম্পানির যে প্রবল ক্ষতি হল, তার পূরণ হওয়ার নয়। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমার যে ক্ষতি হল, সেই ব্যথা হয়ত আরও অনেক বেশী ইন্টেন্স; আমার বারবার মনে হচ্ছে আমি দ্বিতীয় বারের জন্য পিতৃহারা হলাম। মিস্টার সাহার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা যতটা না বস ও সাবর্ডিনেটের; তার চেয়েও বেশী ছিল পিতা ও পুত্রের। ইট আজ অ্যান ইরিপেরেব্‌ল পার্সোনাল লস। মারা যাওয়ার দিনই কয়েক ঘণ্টা আগে আমায় ডেকে পাঠান। ওনার নিজের সই করা আমার এই আচমকা প্রমোশনের চিঠিটা আমাকে দিয়ে আমায়  বুকে জড়িয়ে ধরেন তিনি।  তিনি আমায় বলেছিলেন যে আমি নাকি দ্য বেস্ট গাই টু লিড দ্য মার্কেটিং টিম। এত বড় জাম্প আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। আশা করি আমি ওঁনার বিশ্বাসের মর্যাদারক্ষা করতে পারব। খবরটা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে সেদিন আমি স্বার্থপরের মত অফিস ছেড়ে বেরিয়ে গেছিলাম আমার বাড়িতে সেই খবরটা জানাতে; ইন ফ্যাক্ট মিস্টার সাহাই আমায় বলেছিলেন "শুভ্র, শনিবারে অফিসে বসে না থেকে শেয়ার দ্য বিগ নিউজ উইথ ইওর ফ্যামিলি ইন পার্সন"। আমি ওনাকে প্রণাম করে বেরিয়ে এসেছিলাম। আর সেদিনই বিকেলের দিকে এই বীভৎস খবরটা পাই। আমার এত আফসোস হয়; মনে হয় আমি যদি সেই শনিবারের ফাঁকা অফিসে মিস্টার সাহাকে একলা ফেলে বাড়ি চলে না গিয়ে ওঁর সঙ্গে থাকতাম- তাহলে হয়তো ওঁর ওই হার্ট অ্যাটাকের সময় কিছু একটা করতে পারতাম। কিন্তু আমি থাকতে পারিনি। ডেস্টিনি ক্যান বি সো সো ক্রুয়েল। ওঁনার আত্মার চিরশান্তি কামনা। ডিয়ার কলিগ্‌স, আসুন আমরা মিস্টার সাহার স্মৃতিতে দু'মিনিট নীরবতা পালন করি"।  

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু