Skip to main content

ডমিনো

লাশের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে একটা বেশ চনমনে মন কেমনের ভাব আসে। ব্লজ্ঞপ্রাণের মনের মধ্যেও সেইরকমই একটা শিরশিরে ভাব। খানিকক্ষণ ছটফট করেছিল বইবপনবাবু মারা যাওয়ার আগে। বইবপনের বুকে ছুরিটা বসাতে একটুও ভুল হয়নি ব্লজ্ঞপ্রাণের। দু'টো পাঁজরার মাঝখান দিয়ে সটান ঢুকিয়ে দেওয়া। সঠিক পয়েন্ট জানা থাকলে বুকে ছুরি ঢোকানো এক তাল নরম মাখনে ছুঁচ ঢোকানোর চেয়েও সহজ।
মৃতদেহর প্রতি মায়া বোধ হয় খুব সহজে আসে। ব্লজ্ঞপ্রাণের চোখে সামান্য স্নেহ চিকচিক করে উঠছিল বোধ হয় বইবপনের লাশটার দিকে তাকিয়ে। অথচ খুন করার আগে ব্যাটার দিকে তাকিয়ে এক ফোঁটাও অনুকম্পা আসেনি। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করলে ব্লজ্ঞপ্রাণ। 
**

টুঁটি টিপে মেরে ফেলাটা সহজ নয়। তবে এই কাজটাতে শ্রীমান ফেবুপেমনকে বিশেষ বেগ পেতে হয় না। অভ্যাসে কী না হয়। ব্লজ্ঞপ্রাণ সিগারেট ঠোঁটে ঝুলিয়ে সবে পাঞ্জাবীর পকেট হাতড়াতে শুরু করেছিল দেশলাই খুঁজতে। ঠিক তখনই পিছন থেকে এসে ডান হাতটা দিয়ে সাঁড়াশির মত ব্লজ্ঞপ্রাণের গলাটা চেপে ধরে ফেবুপেমন। পাক্কা আড়াই মিনিটের ব্যাপার। মুখ দিয়ে টুঁ শব্দটি বের হয়নি ব্লজ্ঞপ্রাণের; অল্প সময়ের মধ্যেই ঠোঁটের বাঁ দিক ঘেঁষে একটা রক্তের ধারা নেমে আসে।

অত্যন্ত তৃপ্তির সঙ্গে ব্লজ্ঞপ্রাণের নিথর দেহটা ফুটপাথে শুইয়ে রেখে পাশের বাস স্টপের বেঞ্চিতে একটু এলিয়ে বসে ফেবুপেমন। বড় ঝক্কির দিন গেছে। ব্লজ্ঞপ্রাণের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর দেশলাইটা আগেই বের করে রেখেছিল সে। সিগারেট ধরিয়ে চটপট কয়েকটা ধোঁয়ার রিং ভাসিয়ে দিল ফেবুপেমন। আহ! তৃপ্তি। গুনগুন করে " ছু কর মেরে মন কো কিয়া তুনে কেয়া ইশারা"র সুর ভাজতে শুরু করলে সে।

**
ট্যুইটঙ্কার মুখার্জির ভারী মিষ্টি লাগছিল জানালার ধারে বসে থাকতে। রাত দেড়টার সময় শহরটা এত শান্ত হয়ে যায়, যে তাকে ঘুমন্ত কুকুরছানার মত আদর করতে মন চায় ট্যুইটঙ্কারের।

ট্যুইটঙ্কারের আট তলার জানালার নিচেই বড় রাস্তা। রাস্তার ওপারে বাস স্টপ। বাস স্টপের পাশে বেঞ্চি। স্ট্রীট ল্যাম্পটা বিগড়েছে আজ, তাই আবছায়াতে বেঞ্চিটাকে কালো মনে হচ্ছিল; যদিও ট্যুইটঙ্কার জানে যে বেঞ্চির রঙ আসলে সবুজ। বেঞ্চিতে যে একটা আবছা অবয়ব বসে; সে প্রায় অন্ধকারে মিশে থাকলেও ট্যুইটঙ্কার জানে যে তার নাম ফেবুপেমন। ট্যুইটঙ্কার আশা করেছিল যে ফেবুপেমন আজ এসে এই বেঞ্চিতে বসবে। যাক। স্নাইপারের নলটা জানালায় গুঁজে স্নাইপার-ফোকাসে চোখ রাখলে ট্যুইটঙ্কার। ফোকাসটা অ্যাডজাস্ট করে ফেবুপেমনের মাথাটা নিশানায় মেপে নীল সে। ট্রিগারে আঙুল রেখে মিহি সুরে গান ধরলে ট্যুইটঙ্কার; "...বদলা ইয়ে মউসম, লাগে পেয়ারা জগ সারা..."।


**
ট্যুইটঙ্কারের ভূমিকায় - 
ট্যুইটার পেজ https://twitter.com/mtanmay


ফেবুপেমনের ভূমিকায় - 
ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/bongpen.net


ব্লজ্ঞপ্রাণের ভূমিকায় - 
ব্লগ www.bongpen.net


বইবপনের ভূমিকায় -
অচেনা পুরনো বই 
http://www.amazon.in/Bong-Pen-Tanmay-Mukherjee/dp/1621543471/ref=la_B00J4T7038_1_1?s=books&ie=UTF8&qid=1437418287&sr=1-1

Comments

shromana chatterjee said…
darun :)
erom tae expect korclam porar somoy.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু