Skip to main content

রিকনসিলিয়েশন

নক্ নক্

-মিত্র স্যার, আসবো?
-কোথায় আসবে চাঁদু?
-না মানে ভেতরে আসবো?
-অন্তরে?
-আপনার চেম্বারের ভিতরে স্যার এই ফাইলটা দেখাবার ছিল আসলে গুপ্তা অ্যান্ড গুপ্তার রিকনসিলিয়েশনটা হয়ে গেছে
-ঘরের ভিতরে আসতে পার তবে রিকনসিলিয়েশনের কথাই যদি তুললে ভাই, তা কি এর জীবনে ম্যানেজ করতে পারবে? ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট মিলিয়ে দেওয়া তো চাইল্ড্ প্লে কিন্তু হৃদয়? সে তো লেজারে চলে না ভাই সামন্ত!
-স্যার মানে এই ফাইলটা জরুরী ছিল বড়সাহেব
-বড়সাহেব সামন্ত, তোমার মনটা যে বড়সাহেবের খপ্পরে পড়ে রয়েছে তোমার হৃদয় তোমার হাতের বাইরে চলে গেছে তোমায় দিয়ে ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট ছাড়া আর কোন কিছুর রিকনসিলিয়েশনই যে আর সম্ভব নয়
-স্যার মানে আমি ঠিক
-বুঝতে পারছ না সামন্ত ডেবিট ক্রেডিটের বাইরে ফেলে দিলেই তুমি হাঁকুপাঁকু করে মর
-না মানে ফাইলটা বড়সাহেব আর্জেন্টলি চাইছিলেন
-ফের বড়সাহেব আরে বাবা বড় সাহেব কী এডিসন না মার্কেজ? তুমি ছোট ক্লার্ক, আমি মাঝারি, বড় সাহেব বড় মাপের কেরানী খালি ফাইল ফাইল করে জীবন কাটিয়ে দেবে ভাই সামন্ত নাকি বড় মাপের রিকনসিলিয়েশনও কিছু করে দেখাবে জীবনে?
-বড় মাপের রিকনসিলিয়েশন?
-তোমার হৃদয় মুহূর্তে কী চাইছে জান?
-আমার হৃদয়? না মানে, অল্প খিদে পাচ্ছিল লাঞ্চে মুলো ছেঁচকি ছিল কিনা তাই ঠিক...
-হৃদয় কি পেট?
-না
-তবে? খিদে পাওয়া কি হৃদয়ের চাওয়া? নিজের হৃদয় কে চিনতে শেখ
-স্যার মানে ফাইলটা খুব আর্জেন্ট ছিল


**

-হ্যাঁ, তো বড়সাহেব! যেটা বলছিলাম আমি সামন্তকে আজ অফিসে হৃদয়ের কথা
-হোয়াট দ্য হেল ইজ দিস গোয়িং অন মিত্র আই উইল স্যাক্ইউ! আই উইল ড্রাইভ ইউ আউট অফ...
-এই আপনাদের বেসিক প্রবলেম হৃদয়ের কথা শুনলেই আপনারা বিহ্বল হয়ে পড়েন দু' মনের প্রশ্ন করতেই সামন্ত ঘ্যানঘ্যান শুরু করলে গুপ্তা অ্যান্ড গুপ্তার ফাইলটা ইম্পর্ট্যান্ট যতবার বলি হৃদয় সে বলে ফাইল ডিসগাস্টিং আপনাকে সাধ করে মনের কথাগুলো বলতে গেলাম আপনি আমায় স্যাক করার ধমকি দিচ্ছেন বড়সাহেব আপনি কেন বুঝছেন না এখন রাত দশটা বত্রিশ অফিস টাইম নয় আর তাছাড়া আপনি এখন অফিসেও নেই আপনি এখন আমার বাড়ির বেসমেন্টে আপনার হাত পা বাঁধা আমি আপনাকে বড়বাবু বলছি বটে বাট ইউ আর নট্দি বস হিয়ার
-ইউ আর ম্যানিয়াক স্কাউন্ড্রেল মিত্র
-স্কাউন্ড্রেল কারণ আমি হৃদয়ের কথা বলি আপনি সিনিয়র তাই খিস্তি সামনাসামনি দিচ্ছেন সামন্ত ওয়াজ জুনিয়র তাই চুপ করে ছিল কিন্তু ওর চোখে খিস্তি মিশে ছিল সাত চল্লিশ বছর ধরে সহ্য করে আসছি পদে পদে অপমান; কারণ আমি হৃদয়ের কথা বলি বাইশ বছরের চাকরীতে আমি মাত্র দু'টো প্রমোশন পেয়েছি কেন? আমার জব নলেজ্বা পারফরমেন্স কার চেয়ে কম? আমি প্রমোশন পাইনা কারণ আমি হৃদয়ের কথা বলি  আর কর্পোরেটে আপনাদের মত ফাইল ফাইল করা গাধারাই ভ্যালুয়েব্
-হোয়াট ইজ দ্যাট? ইজ দ্যাট রিভলভার? নো মিত্র নো তুমি এসব কিছু করবে না
-কী করব না বড়সাহেব? খুন?
-শাট আপ মিত্র বন্দুকটা আমার সামনে থেকে সরাও
-শুনুন সাতচল্লিশ বছর পর্যন্ত সহ্য করেছি আর নয় কাল আমার জন্মদিন কাল থেকে এমন ফাইল ফাইল করা হৃদয়হীন লোকজন আমার জীবন থেকে বাদ
-মিত্র খুন করে তুমি জেলে যেতে চাও? তোমার ফ্যামিলি আছে
-ছিল সামন্তর মত ছিল আর সামন্তর মত ওদেরও হৃদয় ছিল না সর্বক্ষণ বৌটা খালি এটা নেই সেটা নেই এটা চাই সেটা চাই মনের কথার আদানপ্রদানের স্কোপই ছিল না ছেলেটাও হারামি আজ ভিডিও গেম কিনে দাও, কাল অমুক, পরশু তমুক বাপ হয়ে যে মন  খুলে দু'টো কথা বলবো তার উপায় নেই সামন্তর মতই শুধু কাজের কথা ধুর
-তুমি ওদের কী করেছ? মিত্র কী হচ্ছে কী এসব?
-সরিয়ে দিয়েছি প্রত্যেকটা হেডশট হে হে যাদের মন নেই তাদের মাথা দিয়ে কী কাজ বলুন বড়সাহেব?
-তুমি সামন্তকে...?
-সামন্ত কে আমার বৌ কে ছেলেকে আর এখন... হে হে..কাল থেকে আমি ফর্টি এইট অ্যান্ড হ্যাপি
-প্লীজ মিত্র প্লীজ ডোন্ট ডু দিস
-হে হে

দ্রুম! দ্রুম!

নক্‌! নক্‌!

-মিত্র স্যার আসবো? স্যার? আসবো?
-ওহ সামন্ত কাম ইন
-বেশ অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে আপনাকে মিত্র স্যার কী নিয়ে চিন্তা করছিলেন?
- কিছু নয় গুপ্তা অ্যান্ড গুপ্তার ফাইলটা এনেছ তো ? গুড একটা কপি আমার কাছে রেখে অরিজিনালটা সোজা বড় সাহেবের টেবিলে পাঠিয়ে দাও খুব আর্জেন্ট উনি ওয়েট করে আছেন
-থ্যাঙ্ক ইউ স্যার ইয়ে আপনি কি বেরচ্ছেন এখন স্যার?
-মানে ওই বৌ ছেলেকে নিয়ে শপিংয়ে বেরোতে হবে বড় সাহেবকে বলে রেখেছিলাম আজ তাড়াতাড়ি বেরব
-প্লীজ ডোন্ট মাইন্ড স্যার আমার কেন মনে হচ্ছে বলুন তো যে আপনার আজ মন ভালো নেই?
-সামন্ত মন ভালো না থাকাটা ভালো লক্ষণ
-মন খারাপ থাকাটা ভালো লক্ষণ? হাউ স্যার?
-ওয়েল অ্যাট লিস্ট সে আছে, তাই খারাপ আছে চলি
-বাই স্যার
-বাই দি বাই, সামন্ত তুমি একবার বলেছিলে না যে তোমার কোন এক আত্মীয়ের কাছে  লাইসেন্স্ ফায়ার আর্ম আছে?
-আমার জ্যেঠুর কাছে স্যার
-তোমার জ্যেঠুর সাথে কথা বলে জানিও তো, একটা বন্দুক যোগাড় করার ডিটেইল্ প্রসেস্টা
-আপনার প্রটেকশনের দরকার পড়ল নাকি স্যার?
-মনের প্রটেকশন চাঁদু মনের প্রটেকশন চলি

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু