Skip to main content

প্রোডিউসার

- কহানী তো বঢিয়া আছে শ্যামলবাবু। 

- আপনি পড়েছেন?

- পড়িয়েছি। অফ কোর্স।

- বাংলা পড়তে পারেন তাহলে?

- বাংলা কুছু পড়ে লিতে পারি। লেকিন কহানী পড়নে লায়েক কঁহা! আই হ্যাভ রেড দ্য টেরান্সলেশন। আমার সেক্রেটারি শম্ভু; উ করিয়ে দিল। প্রোডিউস করব, স্টোরি ঠিক সে জানব না?

- হ্যাঁ তা তো বটেই। তাহলে গল্প ভালো লেগেছে বলুন?

- ভালো কী বলছেন? এক্সেলেন্ট। চেতন ভগত টাইপ্‌স। বিউটিফুলি রিটেন। লেকিন...।

- আবার লেকিন কেন?

- দেখেন শ্যামলবাবু। আপনি আমার ডিয়ার ফিরেন্ড আছেন। সওদা তো আজ আছে কাল নেই। ফিরেন্ডশিপ উইল স্টে। এবার শুনেন। একটা মাইনর ইস্যু আছে, সমঝলেন? 

- কিন্তু আপনার ডিরেক্টর তো বললে তার বেশ পছন্দ হয়েছে গল্পটা।

- আরে ডিরেক্টর তো অ্যাকশন বলে আর দু'টো প্রেস কনফারেন্স করে খালাস। ওয়ালেট তো আমি দাঁও পে লাগালম। 

- তাহলে গল্পটা আপনি নিচ্ছেন না?

- বিলকুল নিব। ডেফিনিটলি নিব।

- তাহলে প্রবলেমটা কোথায়?

- প্রবলেম বলছেন কেন। মাইনর ইস্যু বলুন । ওয়ান স্মল পয়েন্ট।

- সেক্স সিনের অভাব?

- সেক্স সিনের কুছু অভাব নেই। আরে সেক্স সিন রাইটার লিখবে কেন? সেক্স তো ডিরেক্টর ইঞ্জেক্ট করবে। ইন্সট্রাকশন হ্যাস বিন গিভেন।  

- সে কী। আমার গপ্পে তো ফিমেল ক্যারেক্টারই নেই।

- উঁহু। নেই তো কী হল? ইম্পোর্ট হবে!

- ক্যারেক্টার?

- গাঁও কি গোরি।

- গল্পটা তো কলকাতা বেস করে লেখা। গাঁও কি গোরি আসবে কোথা থেকে?

- কেন? হিরোর আইডিয়ালিস্টিক বাপ ফ্ল্যাশব্যাকে নিজের জওয়ানিতে ওয়াপিস যাবে। হিরোর বার্থ কে দিখানো হবে; হিরোর বাপ মায়ের রোম্যান্স দিখানো হবে। ঝর্ণা থাকবে, স্নো ক্যাপ্‌ড মাউন্টেন থাকবে।

- কলকাতার ছেলের বাপের গ্রামে ঝর্ণা আর বরফ চুড়ো?

- কাস্টোমার ডিলাইট শুনিয়েছেন তো শ্যামলবাবু?

- না। আমি ছাপোষা পাতি রাইটার। এই আপনারা টু পাইস রেকগ্‌নিশন অফার করছেন বলে একটু করে খাচ্ছি। তা গল্প নিয়ে ইস্যুটা কী ছিল বলছিলেন?

- ইস্যুটা মাইনর। কফি লিবেন?

- এইমাত্রই তো খেলাম এক কাপ।

- আরে অউর এক কাপ লিন। ব্রেজিলের চিজ্‌ আছে। আমার বড় লেড়কা আনিয়ে দিলে।

- দিন। তা ইস্যুটা কী? সেক্স টেক্স যখন নিজেরাই ঢুকিয়ে নেবেন তখন তো আর গল্প নিয়ে চাপে থাকার মানে হয় না।

- চাপ কী বলছেন শ্যামলবাবু? আর এই কহানীতে স্টোরি হোবে সুপার ডুপার হিট। ইতো পয়সা টোলিউড ফার্স্ট টাইম দেখবে শ্যমলবাবু। অল বিকজ অফ দ্য স্টোরি।

- ধুর কাঁচকলা, তাহলে ইস্যুটা কী?

- মাইনর।

- বলুন তো, মাইনর ইস্যুটা কোথায়। 

- ইস্যুটা  আছে ইন দ্য নেম অফ দি রাইটার।

- আমার নামে প্রবলেম? শ্যামল কী দোষ করল?

- কুছু না। জাস্ট কুছু না। 

- তবে?

- হামি শুধু এইটুকু চাইছে ডিয়ার শ্যামলবাবু, এ কহানীর রাইটার হিসেবে আপনার নাম ক্রেডিটে থাকব না।

- সে কী! তবে কার নাম থাকবে?

- উমাচন্দ ঢনঢনিয়া।

- আপনার নামে?

- একটু মার্কেটে সুনাম হোবে। আই অ্যাম সেভেনটি থ্রি নাউ। কিতনা দিন অউর আছি বোলেন?

- তাই আমার লেখা চুরি করে...!

- ছিঃ ছিঃ, আপনি হামায় ইতনা নিচ সমঝলেন? লিখা হামি চুরি করবে কেন? আই উইল অফার দ্য রাইট প্রাইস্‌ ফর ইট। টেন ল্যাখ্‌স।

- যদি রাজি না হই, তাহলে ইউসুয়াল ফীজ্‌ নিতে হবে তো?  ওয়ান পয়েন্ট ফাইভ?

- আপনি রাজি না হলে এ স্টোরি আমি লিব না। সিম্পুল বিজনেস। 

- কিন্তু ডাইরেক্টর সান্যাল তো অলরেডি জেনে গেছে স্টোরিটা আমার।

- আই ক্যান বাই ইউ। আই ক্যান বাই সানিয়াল। ই ভি সিম্পুল।

- হুঁ। তবে দশ নয়।

- টেন ল্যাখ্‌স ইজ আ লট অফ মানি শ্যামলবাবু।

- বারো। 

- লিখেন ভালো সো ঠিক। লেকিন আপনি বিজনেস ভি জানেন। হে হে। ঠিক হ্যায়। ভদ্দরলোকওয়ালা এগ্রিমেন্ট। হামি বারো দিবে, আপনি কহানীর ক্লেইম ছেড়ে দিবেন।

- বেশ। তবে চেকে শুধু অ্যামাউন্টটা বসিয়ে সই করে দিন ঢনঢনিয়াজী। নিজের নামে এসব কালো টাকা না হয় নাইবা নিলাম। 

- ক্যাশে লিয়ে লিন।

- না না। চেকই দিন। ছেলের নাম বা বৌয়ের নাম আমি সুযোগ বুঝে বসিয়ে নেব।

**

- হ্যালো শ্যামলবাবু?

- কে ঢনঢনিয়াজী? কী খবর?

- হোয়াট নন-সেন্স ইজ দিস?

- কীসের নন-সেন্স?

- সিন্‌মা শুটিং মিড  ওয়েতে। আমার পোয়সা পুরা ইনভেস্ট হয়ে গেল। আর আপনি প্রেস কনফারেন্স করে বলছেন এ মুভি আপনার কহানীতে তৈয়ার হচ্ছে?

- সেটাই তো সত্যি।

- আমি বিজনেসম্যান আছি শ্যামলবাবু। আমার বারো লাখ মেরে দিয়ে আপনি ইখন বলছেন এ স্টোরি আপনার? আমার কন্ডিশন ছিল আপনার সাথে...।

- আপনার কন্ডিশন ছিল এ সিনেমার ক্রেডিটে আপনি কাহিনীকারের নাম হিসেবে শ্যামল চ্যাটার্জীর বদলে উমাচাঁদ ঢনঢনিয়া রাখবেন। আমি এগ্রী করলাম। আর নিজের নামটা পালটে নিলাম। ভদ্রলোকের কথা। অ্যাফিড্যাবিটের সামান্য খরচ আর ঝক্কিটুকু বাদ দিলে এ এমন বড় ব্যাপার নয় বুঝলেন।

- হামি বারো লাখের চেক দিলম শ্যামলবাবু...।

- এবার এই শ্যামল নামটা ত্যাগ করুন। ইট্‌স ঢনঢনিয়া টু ঢনঢনিয়া নাউ। ওই চেকে নাম বসানোর আগে আমি নিজের নাম পাল্টেছি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেইল্‌স পাল্টেছি; তারপর তাতে নিজের নতুন নাম উমাচাঁদ ঢনঢনিয়া বসিয়ে এনক্যাশ করেছি। সইটাও পালটে গেছে, বুঝলেন! আর হ্যাঁ, গত দু'মাস ধরে আমার এই নতুন নাম দিয়েই আনন্দবাজার আর আরও দু'একটা জায়গায় লেখালিখি করছি; সবাই আমায় এই নতুন নামে বেশ অ্যাক্সেপ্ট করে নিয়েছে। কথার খেলাপ করিনি। আপনি স্বচ্ছন্দে আপনার সিনেমার ক্রেডিটে কাহিনীকার হিসেবে উমাচাঁদ ঢনঢনিয়ার নাম দিয়ে দিতে পারেন।

- হারামি চ্যাটার্জী। রাস্ক্‌ল। 

- দেখুন। খিস্তি মারুন আপত্তি নেই। কিন্তু চ্যাটার্জী বলে আর ডাকবেন না তো। ইয়ে লাগে কিন্তু।

- শুনেন। হামি এটা করেছিলাম আউট অফ মাই লাভ ফর মাই ওয়াইফ। ও চাইত আমি গোটা লাইফ সিনেমা বিজ্‌নেস না করে কুছু ক্রিয়েটিভ করি। আই ওয়ান্টেড টু শো হার হাউ মাচ আই লাভ হার ইটা বলে কি হামি সিনেমার স্টোরি লিখেছে; ডিউ টু হার ইন্সপিরেশন। ইউ হ্যাভ রুইন্‌ড ইট। পইসার ডর ঢনঢনিয়া পায় না। বাট নাউ আই আম আ লায়ার ইন ফ্রন্ট অফ মাই ওয়াইফ বিকজ্‌ অফ ইউ। 

- আপনি সেটাই মিস্টার ঢনঢনিয়া। সেটাই আপনি ডিজার্ভ করেন। কেমন লাগল রিয়েল লাইফ সিনেমাটা? ওহ হো! আপনার বোধ হয় ভালো লাগেনি না? কারণ আমার লেখা এই গপ্পে তো আর আপনি সেক্স সিন ইঞ্জেক্ট করতে পারবেন না। তাই না উমাচাঁদ ঢনঢনিয়া সিনিয়র? হে হে হে হে হে।

**

- ছেড়ে দিন আমায়। আমি আপনার পায়ে পড়ছি। প্লীজ। আমি আপনার মেয়ের বয়েসি।

- সরি মিসেস্‌ চ্যাটার্জী। ওহ সরি। আপনি তো এখন মিসেস্‌ ঢনঢনিয়া আছেন। বাট ইউ সি; আপনার হাজব্যান্ড ভি উমাচাঁদ ঢনঢনিয়া, আর হামি ভী ওহি - উমাচাঁদ ঢনঢনিয়া। উমাচাঁদ ঢনঢনিয়া কে নিজের বডি রিফুজ করিয়েবেন কেনো?

- প্লীজ ডোন্ট ডু দিস টু মি।

- আপনার হজব্যান্ড। রাইটার নিউ ঢনঢনিয়া আমাকে আমার ওয়াইফের সামনে লাইয়ার প্রুফ করে বলল ইটা রিয়েল লাইফ মুভি আছে। ই রিয়াল লাইফ স্টোরি নাকি উ রাইটার এমন লিখেছে যে হামি চাইলেও এই স্ক্রিপ্টে সেক্স ইঞ্জেক্ট করতে পারব না। বাট হামি উকে গলত প্রুফ করবে। আই উইল প্রুভ দ্যাট রিয়েল লাইফের স্ক্রিপ্ট্‌ও রাইটারের মর্জিতে চলে না, প্রোডিউসারের মর্জিতে চলে। হামি প্রোডিউসার আছি। যে কোন স্টোরিতে  সেক্স সিন ইঞ্জেক্ট করার মর্জি হলে আমি করবে। নো ওয়ান ক্যান স্টপ মি। নো রাইটার ক্যান স্টপ আ প্রোডিউসার ফ্রম ইঞ্জেক্টিং আ সেক্স সিন। আসেন মিসেস্‌ নিউ ঢনঢনিয়া।    

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু