Skip to main content

তিন মিষ্টি

জিলিপি

-এই কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ জিলিপির কথা মনে এল।
-এক্সেলে কাজ করতে করতে হঠাৎ জিলিপির কথা? হোয়াই?
-না মানে কিছুক্ষণ আগে শ্বশুর মশায়ের কল এল কিনা। ভারী মিষ্টি সুরে কথা বলেন, কিন্তু ভারী পেঁচিয়ে কথা বলেন। পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন না খিস্তি করছেন বুঝতে পারা যায় না।

**
সস্তার সরভাজা

- আকাশে কেমন মেঘ করেছে দেখেছ? ঠিক যেন থরে থরে সস্তার সরভাজা সাজানো রয়েছে।
- মেঘ? সস্তার সরভাজা?
- ওই আর কী। সস্তার সরভাজা দেখতে সরেস কিন্তু তা আসলে সামান্য সরের পর্দার আড়ালে ডালডা লেপা ময়দার পাঞ্চ। দু'কামড় দিতেই অম্বল বুক জ্বালা। আর এই মেঘ। অমন গাঁকগাঁক করে ডেকে শেষে দু’ফোঁটা জেনারেট করবে আর তার পরে চিটচিটে চামড়া জ্বালানো গরম।

**
চিত্রকূট

- অত বড় মাদুলি? তুই করেছিস কী?
- হুঁ হুঁ বাবা, যত বড় সাধু তার তত বড় দাওয়াই।
- তাই বলে এত বড় মাদুলি? ওর মধ্যে যে জিনিষপত্র ভরে ঘুরতে যাওয়া যায় রে।
- জিনিষের প্রতি এত মায়া কেন রে? কী নিয়ে এসেছিস যে নিয়ে যাওয়ার ধান্দা করছিস?
- ফের বাতেলা। তা এই তাবিজটা কিসের? সন্তান লাভের জন্য না চাকরীতে উন্নতি?
- মনের শান্তির জন্য ভাই।
- তোর মনে শান্তির অভাব আছে নাকি? দামী চাকরী, টুকটুকে বৌ। তোর তো এখন মিডাস টাইম।
- থাম থাম। শান্তির কী বুঝিস রে তুই? তোদের মত ছেলেরাই বন্ধুত্বের নামে কলঙ্ক।
- তোর শান্তিতে না থাকার কারণ?
- বৌ।
- সে কী! বৌ ভালোবাসে না?
- ভীষণ ভালোবাসে।একনিষ্ঠ প্রেম।
- তাহলে? স্পেস দেয় না?
- ভীষণ উদার।
- অ্যাডাল্টারি?
- পতিব্রতায় নোবেল থাকলে সিওর পেত।
- দেন? তাহলে অসুবিধেটা কোথায়? বৌকে নিয়ে তোর অসোয়াস্তিটা কোথায়?
- না মানে, আমার শরীরে প্রতি অতি মাত্রায় যত্নশীল সে।
- সে তো ভালো কথা।
- কাঁচকলা। আমার মিষ্টি খাওয়া রেস্ট্রিক্ট করে রেখেছে জানিস? খাওয়ার পর দু'টো চিত্রকূট না খেলে আমার ভাত হজম হয় না, আর সে বলে কিনা রোজ দু'টো চিত্রকূট খাওয়া নাকি শরীরের জন্য বিষ?
-বটে? সে মন্দ কী আর বলে! আর কোন সাধুবাবা তোকে এ মাদুলি দিলে? এ মাদুলি হাতে রাখলে তোর বৌ তোকে চিত্রকূট খেতে দেবে?
- সাধুবাবা কে? আমি নিজে?
- তুই নিজে মাদুলি ধারণ করেছিস?
- ট্রেড সিক্রেট। পাঁচ কান যেন না হয়। মাদুলিটার সাইজ পেল্লায় কেন জানিস? হরি ময়রার আট টাকা দামের দু'পিস চিত্রকূট এর মধ্যে এটা যায়। মাপ নিয়ে বানানো। আর ইউনিক ডিজাইন। রস গড়িয়ে বেরোনোর কোন চান্সই নেই।
-এই মাদুলি তে করে তুই চিত্রকূট স্মাগল করে বাড়ি ঢুকিস?
-আর ডিনার সেরে ছাদে পায়চারি করতে যাওয়ার নাম করে গিয়ে টপাটপ দু'পিস মেরে দি। ডেইলি।
-অত বড় মাদুলি। বউ ডাউট করে না?
-জিজ্ঞেস করেছিল বটে মাদুলি কোথায় পেলে। বলেছিলাম মাদুলিটা অফিসের বসাকদা এনে দিয়েছে কোন তান্ত্রিকের কাছ থেকে। মনের মধ্যে যে সর্বক্ষন "মিষ্টি খাব মিষ্টি খাব" ভাব, সেই লোভ নাকি মাদুলিতে কেটে যাবে। আর হয়েওছে তাই, এই মাদুলি ধারণ করার পর থেকে আমি আর বৌয়ের কাছে চিত্রকুটের জন্য ঘ্যানঘ্যান করি না।

Comments

Unknown said…
Valoi..... Kaje lagabo vabchi

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু