Sunday, June 1, 2025

নবারুণের শাস্তি



- শুভ নববর্ষ নবারুণ।
- শুভ নববর্ষ। এই শুভদিনে আজ আবার এ পাপের জায়গায় কেন স্যার..। এ'সব রাউন্ড লাগিয়ে সময় নষ্ট না করে সাততাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুন বরং।
- এ'টাই তো আমার কর্মস্থল হে, তা'তে আবার পাপ কীসের।
- তা বটে। যাক, সেল নম্বর বাহাত্তরে আপনার জন্য কাল্পনিক লাল কার্পেট বিছিয়ে দিলাম।
- সিগারেট খাবে?
- যাবজ্জীবন কয়েদি আমি। দারোগার দেওয়া সিগারেট পেটে সইবে কেন বলুন।
- আমিই ধরাই তা'হলে।
- বেশ তো।
- নবারুণ, তোমার তো এ'টা দ্বিতীয় বছর চলছে। তাই না।
- বছরমাস এ'সবের হিসেব রেখে লাভ দেখছি না বিশেষ।
- তোমার গুড বিহেভিয়ার মাথায় রেখে একটা ভালো চিঠি হেডকোয়ার্টারে কাল পাঠাচ্ছি।
- কাগজ, কালি এবং আপনার অতি মূল্যবান সময়ের বিশ্রী অপচয়।
- কী ব্যাপার বলো দেখি, তোমার সঙ্গে কথা বলতে গেলেই দেখেছি একটা বিশ্রী নেগেটিভ মাইন্ডসেট।
- খুন করা আসামী। আমার মাইন্ডসেট তলিয়ে দেখবেন না প্লীজ।
- শাস্তি তো পাচ্ছোই, পাবেও। কিন্তু তোমার মধ্যে একটা পসিবিলিটি আমি দেখি অনবরত নবারুণ। একটা স্পার্ক।
- আমার ভদ্রলোকের মত ব্যবহার দেখে ইম্প্রেসড হচ্ছেন? পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ খুনিরা যে মিটমিটে শয়তান সে'টা আশা করি আপনার মত দুঁদে দারোগাকে বলে দিতে হবে না।
- আরো খুনটুন করার ইচ্ছে আছে নাকি?
- যে একবার খুন করেছে, তার মধ্যে পসিবিলিটি তো রয়েইছে।
- তুমি কি আজ একটু বেশি ডিসটার্বড নবারুণ?
- না। দিব্যি আছি।
- তুমি প্রায় আমার ছেলের বয়সী। তোমার মনের অবস্থা আমি কিন্তু কিছুটা হলেও...।
- বয়স দেখিয়ে নিজের সুপিরিয়রিটি এস্টাব্লিশ করার কী দরকার দারোগাবাবু। আপনি আইনের রক্ষক। আমি খুনি। বয়সের হিসেবটা উল্টো হলেও আপনি স্নেহ, কমপ্যাশন ইত্যাদির ব্যাপারে আমার চেয়ে এগিয়েই থাকতেন।
- আজ তুমি এতটা বিরক্ত কেন বলবে? পয়লা বৈশাখ, বাড়ির কথা মনে পড়ছে?
- না। আমার ধারণা এই জেলের মধ্যে আমি বেশি সিকিওরড। বাড়ির চেয়ে অনেক বেশি নিশ্চিন্দি এ'খানে।
- চা খাবে? ব্যবস্থা করতে পারি কিন্তু।
- আপনার এই সিম্প্যাথিতে লজিক সবিশেষ নেই স্যার। যে'টা আছে সে'টা হলো একজন সো-কল্ড আপারক্লাস ভদ্রসন্তানের প্রতি আর এক ভদ্রসন্তানের টান।
- বড্ড তিতিবিরক্ত হয়ে আছো ভাই। কী ব্যাপার বলো দেখি আজ। বলো না।
- জানেন স্যার। অন্যায় করেছি, শাস্তি পাচ্ছি। এই স্পষ্ট ধারণার মধ্যে এক ধরণের অদ্ভুত স্বস্তি আছে। একটা লিনিয়ার প্রসেস যার অন্যথা হওয়ার নয়। সে'টা ভেবে বেশ লাগে। কিন্তু এই মাঝেমধ্যে এক একটা দিন মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত ধান্ধাবাজি সুড়সুড়ি দেয়।
- ধান্দাবাজি?
- মনের মধ্যে লতায়পাতায় গজিয়ে ওঠে বিভিন্ন যুক্তি। মনে হয় অপরাধটা না করে আমার কোনো উপায় ছিল না।
- তোমার কেসফাইল পড়ে আমারও কিন্তু মনে হয়েছে যে ব্যাপারটা একতরফা নয়...।
- কেসফাইলের কথা বলছি না স্যার। ওই র্যাশনালাইজ করার প্রসেসটার কথা বলছি। এই যেমন আজ বারবার মনে হচ্ছে ওই বিশ্রী কাজটাই গোটা দুনিয়া দেখলো জানলো অথচ কী'ভাবে তিলে তিলে একটা খুনীকে গড়ে তোলা হলো সে'টা কেউ কখনও জানবে না!
- নবারুণ..শোনো..।
- নিজে নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া যায় না। এই না পারাটার কথা ভেবে বড় অসহায় লাগছে দারোগাবাবু। আর সেই বিরক্তি ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই।
- সমস্তটা হয়তো বুঝছি না তবে তুমি আজ ভালো নেই।
- আমি জানি আমার অপরাধটা। এ শাস্তি থেকে পালিয়ে যেতে চাইনা একটুও। দারোগাবাবু, তবু ভালো থাকতে চাই। কী বিশ্রী নেশা, তাই না?
- তাই তো। আর সে নেশাতেই তো সবারই প্রায় যাবজ্জীবন অবস্থা।
- এই দ্যাখো..।
- কী হলো?
- আরে দারোগাদাদা, আপনারও যে মেজাজটা আজ অফ দেখছি। আপনিও কি এই অধমের সেলে বসে নিশ্চিন্ত বোধ করছেন?
- ননসেন্স।
- হুম। একিলিস হীলে ছুঁচ ঠেকিয়ে ফেলেছি মনে হচ্ছে।
- চায়ের অফারটা আর একবার দিলাম। এ'বারেও রিফিউজ করবে?
- হোক। ইয়ে, সঙ্গে লেড়ো হবে?

No comments: