Skip to main content

সেদ্ধয় সিদ্ধ



- বুঝলে প্রশান্ত, বুকের ধড়ফড়টা কিছুতেই কমছে না।
- জামাইবাবু, আপনি বড্ড নেদু হয়ে পড়ছেন!
- তাই কি? ওভাররিয়্যাক্ট করছি বলছ?
- আবার কী। ভাইটালস সব ঠিকঠাক। রিপোর্টটিপোর্ট যাই এসেছে সব খাপেখাপ। কখন থেকে বলছি চলুন দু'বোর্ড ক্যারম খেলি। অথচ আপনি সেই থেকে বুক ধড়ফড় নিয়ে পড়ে আছেন।
- জেনুইন ধড়ফড় ভাই প্রশান্ত। আরে, নাড়ি ধরে কি সব ধড়ফড় ডিকোড করতে পারবে? ডাক্তারি কি অতটাই মুখস্থবিদ্যের জিনিস? আরে, মনের আনচানটাকে ইগনোর করলে তো চলবে না।
- নাহ্‌! আপনার বয়স হচ্ছে।
- সেভেন্টি ফোর। এক্কেবারে কচি তো আর নই।
- আপনার মধ্যে রীতিমত ভীমরতি জেনারেট হচ্ছে।
- আহ্‌, কদ্দিন পর ভীমরতি কথাটা শুনলাম ভাই। তোমার দিদি থাকতে কথায় কথায় শুনতে হত বটে।
- দিদিরও বলিহারি। আপনাকে মারাত্মক প্যাম্পার করে মার্কেটে একা ছেড়ে চলে গেল। আর এখন প্রতি হপ্তায় দু'বার আমি আপনার গুপি-দেওয়া-বুক-ধড়ফড়ের খবর শুনে ছুটে আসি। আমার প্র্যাকটিস-ট্র্যাকটিস তো লাটে উঠবে এ'বার।
- কথায় কথায় প্র্যাকটিস দেখিও না প্রশান্ত। প্র্যাকটিস দেখিও না। আরে, হিপোক্রেটিক ওথ নিয়ে পথে নেমেছ। ডাকলে আসবে না মানেটা কী!
- আপনাকে কতবার বলেছি জামাইবাবু। আমি বলেছি, সুমি বারবার বলেছে। এ'বারে চলুন আমাদের নাকতলার ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকবেন। আমাদেরও গার্জেন হল, আপনার বুক ধড়ফড়েরও একটা পার্মানেন্ট হিল্লে হল।
- তুমি শালা একটা ইউজলেস। বাজে কথায় সময় নষ্ট না করে এই আনচানটার কিছু একটা করো ভাই। একটা স্ট্রেঞ্জ ধরণের নার্ভাসনেস বুঝলে। এই মনে হচ্ছে পায়চারি করি, তো পরক্ষণেই মনে হচ্ছে বিছানায় শুয়ে সিলিঙের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে খানিকটা রিলীফ পাওয়া যাবে। এই মনে হচ্ছে বই পড়ি, তো পরক্ষণেই মনে হচ্ছে যাই ক্লাবে গিয়ে আড্ডা মারি। এই মনে হচ্ছে চা বানাই, তো পরক্ষণেই মনে হচ্ছে আমার দরকার আসলে আলু-ভাজা। এই মনে হচ্ছে...।
- থাক থাক...আর সিম্পটম সাজাতে হবে না। আপনি এ'বার আর একটা বিয়ে করুন।
- তুমি কি ডাক্তারি টুকে পাশ দিয়েছ প্রশান্ত?
- উফ। মহাঝ্যামেলা।
- ট্রিটমেন্ট বাতলাও।
- আপনি বললে শুনবেন?
- তুমি ডাক্তার। যা প্রেসক্রাইব করবে, লেটার অ্যান্ড স্পিরিটে ফলো করব।
- আপনার দরকার মেডিটেশন।
- তুমি দূর হও প্রশান্ত। আর পারলে অ্যালোপ্যাথি ছেড়ে দাও।
- এই মাইরি। শুনুন না জামাইবাবু। জপতপ করতে বলছি না। হাইক্লাস টেকনিক, বেনিফিট গ্যারেন্টেড।
- এরপর আবার শেকড়বাকড় ধারণ করতে বলবে না তো?
- আরে না। শুনুন না।
- শুনি।
- আজ দুপুরের মেনুতে কী রেখেছেন?
- মুর্গি-কষা। পাবদার ঝাল। সজনের চচ্চড়ি। বেগুন ভাজা। নারকোল দেওয়া মুগের ডাল। রিভার্স অর্ডারে খাবো, অফ কোর্স।
- না না, এ'সব আনচান-ধড়ফড়ের দিনে ও'সব গুরুপাক সইবে না।
- মেডিটেশনটা কী?
- সবার আগে মেনু পাল্টাতে হবে। আর সে'খানেই খেল।
- হেঁয়ালি না করে স্পষ্ট করে বলো।
- শুনুন। সবার আগে - আলু, ডিম, ডাল; সেদ্ধ করে নেওয়া যাক। কেমন?
- শুনছি। এরপর?
- এরপরেই হল আসল থেরাপি। মিউজিক প্লেয়ারে মনের মত গান চালিয়ে...।
- রফি।
- রফি? রফি। অবশ্যই রফি। চালিয়ে দিন। লো ভল্যুমে। কেমন? তারপর, সর্ষের তেল, লঙ্কাকুচি আর হোয়াটএভার-ফ্লোটস-ইওর-বোট মালমসলা মিশিয়ে, মাখতে শুরু করুন। দায়সারা মাখা নয়। অনুভব করতে হবে জামাইবাবু। আলু বা ডিম ভাঙলেন, আঙুলের ডগায় যে নরম স্পর্শ; সে'টাকে গোটা শরীর দিয়ে অ্যাবসর্ব করে নিতে হবে। এইবারে কনসেন্ট্রেশনকে পুরোপুরি এনে ফেলুন চটকানিতে। আলু বা ডিম নরম হয়ে আসবে, ডুমোডুমো ভাব হারিয়ে গিয়ে মোলায়েম টেক্সচার আপনার হাতে ছড়িয়ে পড়বে। প্রসেসটা কল্পনা করুন...। চোখ বুজে ব্যাপারটাকে ফীল করুন...।
- উম...টোটালি কল্পনা করতে পারছি। আলুমাখা নরম তুলতুলে হয়ে আসছে, ডিমসেদ্ধর আলট্রা-স্মুদ পেস্ট আমার হাতে...একদম ফীল করতে পারছি ভাই প্রশান্ত...।
- ব্রাভো জামাইবাবু। এ'টাই তো চাই। এইবারে কনসেন্ট্রেশনটা ম্যাক্সিমাম পর্যায়ে পৌঁছবে। আপনার সম্পূর্ণ ফোকাস আলু-ডিম চটকানিতে, কান থেকে রফি হারিয়ে গেছেন; আপনার ফোকাস এতটাই ইন্টেন্স।
- নিজেকে লামা মনে হচ্ছে যেন।
- লাভলি। এরপর একইভাবে মনঃসংযোগ করুন ডালসেদ্ধ, ঘি, সর্ষেরতেল দিয়ে ভাত মাখতে। একদম পার্ফেক্টলি স্মুদ আউটপুট না হওয়া পর্যন্ত আপনি থামছেন না। আপনাকে রোখা যাচ্ছে না, জামাইবাবু। আপনাকে রোখা যাবে না!
- আজ মুর্গি, পাবদা, সজনে ক্যান্সেল। শুধুই থেরাপি।
- এ'টাই তো চাই। চলুন রান্নাঘরে।
- তোমার এলেম আছে প্রশান্ত।
- ফিজ হিসেবে মুর্গি আর পাবদাটা নিজের পাতে টেনে নিলে আশা করি খুব একটা মাইন্ড করবেন না?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু