কাবাবওলার সঙ্গে গলায়-গলায় দোস্তি নির্মলবাবু্র। কাবাবের দোকানটা নির্মলবাবুর বাড়ি থেকে হেঁটে বড়জোর দেড়-মিনিট, রাস্তার ধারের ছোট্ট ঠেলা বই তো নয়। কিন্তু কাবাবদাদাটি বড় দরদী। আগুনে নির্মমভাবে মাংস পুড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে গাম্বাটপনা আছে, কাবাব শিল্প নেই; সে'কথাটা নির্মলবাবুকে আত্মস্থ করিয়েছেন এই কাবাবকবিই।
সন্ধে থেকে রাত দশটা পর্যন্ত সে ঠেলার চারপাশে বড্ড ভিড়। ব্যাচেলর মধ্যবয়স্ক নির্মল সাহা হপ্তায় অন্তত বার দুয়েক সে দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান তবে রাত এগারোটা নাগাদ। বাড়াবাড়ি ভিড়ে কাবাবের কদর করতে পারেন না ভদ্রলোক। নির্মলবাবু এমনিতে রাত আটটায় ডিনার সেরে নেন, তবে কাবাবের ম্যাজিক বুঝতে মোটাদাগের পেটের খিদে নয়, দরকার রসিক মনের চনমন। এ সত্যটাও কাবাবিস্ট-ভাইটির থেকেই শেখা।
আজ বাতাসে মৃদু বৃষ্টির আভাস ছিলো। মাঝেমাঝে দু'চার ফোঁটা গায়ে এসে পড়ছিলোও বটে। তা'তে আগুন নেভার নয়, তবে হাওয়ায় সামান্য ছ্যাঁত যোগ হচ্ছিল বটে। নির্মলবাবু একটা ফ্লাস্কে চা নিয়ে আসেন, দু'টো প্লাস্টিকের কাপ। এক কাপ কাবাবনবাবকে ধরিয়ে নিজে এক কাপ ঢেলে দোকানের সামনের বেঞ্চিতে বসেন। এ'টাই নিয়মে দাঁড়িয়েছে।
- নির্মলবাবু, আজ চায়ের পাতা নতুন মনে হচ্ছে?
- ঠিক ধরেছ হে। নিউমার্কেট থেকে নতুন আমদানি।
- ভারি মোলায়েম। বহুত খুব।
- আকাশ দেখেছ? আজ রাতে ঢালবে, জানো।
- গরমটা একটু কমবে বটে তা'তে। আপনার শিক দু'টো রেডি। এক মিনিট দিন, ফ্রেশ পেঁয়াজ কুচিয়ে দিই।
নির্মলবাবুর স্নেহ অনুভব করেন। পোড়া কয়লার উষ্ণতা গায়ে এসে ঠেকে। কানে আসে কাবাবক্যাপ্টেনের পেঁয়াজ কুচোনোর মিহি শব্দ। নির্মলবাবুর বিশ্বাস প্রতিবার কাবাবগুরু তাঁর জন্য একটু বাড়তি ভালোবাসা নিয়ে মাংস ঝলসান, পেঁয়াজ কুচোন, আর প্লেট সাজিয়ে দেন। আসল স্বাদটুকু বোধ হয় সে বিশ্বাসেই। নির্মলবাবু টের পান যে এই ঘিঞ্জি শহরে তিনি একা নন।
কাবাববন্ধুর প্রতি মনে মনে বিগলিত সেলাম ঠুকে এই শনিবারের শেষ চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিলেন নির্মলবাবু।
No comments:
Post a Comment