Skip to main content

নবা ও জগা

- নবা রে। আর এক পিস রোববার। গন্।
- এই আবার শুরু হল। এখনও দুপুরের খাওয়াটাও তো হয়নি। রোববার রীতিমত জলজ্যান্ত। স্নান করতে যাও জগাদা।
- লাঞ্চ। তারপর ঘণ্টাখানেক গড়িয়ে নেওয়া। তারপরেই বুকের মধ্যে ধড়ফড়। সকালের অ্যালার্ম লাগাও রে। জামা ইস্তিরি করো রে। জুতো পালিশ করো রে৷ মেসের এই জলডাল আর চালানি রুইয়ের ঝোলে মাখা ভাত গেলা। তারপর মিনিবাসের চটকানি। অটোর বিষাক্ত লাইন। বসের খ্যাচরম্যাচর। ফাইলের চালাচালি। ধুর।
- স্নান করতে যাবে না আমি যাব?
- ও মা। তুই যাবি কী রে। গতকাল বাথরুমে তুই আগে গেলি। আজকে যে রস্টারে আমার নাম।
- তা'হলে যাও না। খামোখা ঘ্যানঘ্যান করে সময় নষ্ট করছ কেন?
- তুই একটা পাষাণ রে নবা। রোব্বারের চানে কাউকে তাড়া দিতে আছে? পরের জন্মে নিরামিষভোজী হয়ে জন্মাতে হবে যে।
- ও মা। তা'তে ক্ষতি কী? দিব্যি ছানার ডালনা আর আলুপোস্ত দিয়ে হাপুসহুপুস করে খাব'খন। শেষ পাতে টমেটো আমসত্ত্বের চাটনি। প্লাস ওয়ান পিস রসগোল্লা। ওয়ান? না। দু'টো।
- নেহাত অবজেকশনেবল কিছু বলিসনি। তবে অবলা পাঁঠাগুলোকে মাঝেমধ্যে মুক্তি না দিলে যে এই পাপের দুনিয়ায় তাদের অন্তরাত্মা পচে মরবে।
- জগাদা। লেনিন তোমার ভাষায় কমিউনিজম বোঝালে আর কোনো বাঙালির মধ্যে ঈশ্বরবিশ্বাস পড়ে থাকত না। এ'বারে একটু মাদুর ছেড়ে ওঠো দেখি।
- হ্যাঁ রে নবা, ঠাকুর আজ ফের ব্রয়লার রেঁধেছে?
- বাতাসে তো তেমনই গন্ধ ভাসছে।
- এ মেস আমি ছেড়ে দেব। যে মেস রবিবারগুলোকে ব্রয়লায় খাইয়ে মার্ডার করে সে'খানে পড়ে থেকে পাপের বোঝা বাড়ানোর কোনো মানে হয়না।
- জগাদা৷ চলো আজ আমি আর তুমি রাতের ডিনারটা বাইরে কোথাও...।
- কষানো পাঁঠা?
- সঙ্গে ছোটমাছের চচ্চড়ি যা পাই। শম্ভুদার হোটেলের নতুন ঠাকুরটার এলেম আছে। এ'বার যাও দেখি স্নান করতে?
- কিন্তু মাসের শেষ দিন রে, এতগুলো টাকা...।
- আহ্। আমার কাছে কিছু পড়ে আছে। দু'জনের হয়ে যাবে'খন।
- তুই খাওয়াবি? গা ছুঁয়ে বল?
- মাইরি।
- বামুনকে খাওয়াচ্ছিস। খরচের একটা টাকাও জলে যাবে না। কালকের মধ্যে চিঠি পাবি। ওগো হ্যাঁগো করে। কী, তার জন্যেই তো কিঞ্চিৎ মনমরা কাল থেকে। তাই না?
- মুরাকামি না অরুণ গোভিল কে একটা বলেছেন; ইলিশের পেটিতে মন দাও, ইলিশের বায়োডেটা চেয়ে সময় নষ্ট কোরো না।
- তা হ্যাঁ রে, পুজোয় তার জন্যে একটা শৌখিন কিছু কিনবি ভেবেছিলিস যে।
- শৌখিন কিছুই কিনব। আজই। জগা বামুনের থালাসাফ করা ঢেঁকুর। তবে তার জন্য নয়। নিজের জন্য। তোমায় তৃপ্তি করে খেতে দেখা ইস আ বিউটিফুল সাইট।
- সে কী! তার জন্য কিছু কিনবি না?
- আমার গত তিনটে চিঠি আমার কাছেই ফেরত এসেছে। কুচিকুচি হয়ে। সঙ্গে চিরকুট ; খবরদার যেন আর চিঠি না লিখি।
- এ'টা সে লিখেছে? তবে রে! বামুনের অভিশাপ যদি ফোকাস করে ঝাড়া হয় তা'হলে তা ফলবেই। সে পরের জন্ম নিরামিষভোজী হয় জন্মাবে অ্যালং উইথ ছানা আর পোস্তয় অ্যালার্জি।
- আহ, জগাদা।
- বড্ড কড়া হয়ে গেল না রে। যাকগে, শোন। তুই স্নান করতে যা আগে। আর আগামী হপ্তা পুরোটাই তোর বাথরুম প্রায়োরিটি প্রিভিলেজ রইল, কেমন? যা যা, দেরী করিস না। দুপুরের খাওয়াটা তাড়াতাড়ি না সেরে ফেললে রাতের খাওয়াটা ঠিক গ্রিপ করা যাবে না। ক্যুইক।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু