Sunday, June 1, 2025

বসন্ত বাহার

- এই যে, বসন্ত!
- স্যার, রিপোর্টটা রেডি...।
- আরে সবসময় রিপোর্ট রিপোর্ট কোরো না তো। লাইফে একটু ফুর্তি করতে শেখো।
- ফু...কী?
- ফুর্তি। ফান অ্যান্ড ফ্রলিক। একটু হাত-পা ছড়িয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে বসো দেখি। কফির কাপে চুমুক দাও। মহম্মদ রফির গান শোনো। আর জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখো নীল আকাশের মায়া...।
- স্যার, পলিউশনের চোটে তো সবই কালচে...। আর জানালার কাচ প্লীজ খুলবেন না। আমার অ্যাজমাটা আবার বাড়বে...।
- অত লিটেরালি সব কিছু ধরো বলেই আজ কবিতা না লিখে স্প্রেডশিট কপচাতে হচ্ছে। শেম্ অন ইউ বসন্ত।
- স্যার, আপনার শরীর-টরীর ভালো তো?
- চনমনে। আজকাল পোয়েট্রি পড়ছি কিনা। জিনিসটা ভালো কিন্তু।
- এই রিপোর্টটা একবার দেখবেন? আজই হেডঅফিস না পাঠালেই নয়।
- উফ! দিলে মেজাজটা মাটি করে।
- আপনি নির্ঘাত আমার লেগপুল করছেন। ফার্স্ট এপ্রিল ফুল-টুল কিছু বানানোর তাল করছেন না তো?
- না না, স্যান্ডউইচ মেথড ট্রাই করছি।
- স্যান্ডউইচ। ওহ। দু'দিকে ভালো ফীডব্যাকের পাউরুটি আর মধ্যিখানে ক্রিটিসিজমের মাখন।
- পোয়েটিক না? তবে প্রশংসা-নিন্দে-প্রশংসা বলাটা ঠিক অ্যাকিউরেট হলো না। এই ধরো গুড নিউজ-ব্যাড নিউজ-গুড নিউজ।
- এই সেরেছে। প্রথম গুড নিউজটা কী ছিলো? যে আমি কবিতা না লিখে এক্সেল ঠেলছি?
- আহ, সেই আবার হাফগ্লাস এম্পটি দ্যাখে। বসন্ত, প্রতিটা চ্যালেঞ্জকেই একটা অপরচুনিটি হিসেবে দেখতে হবে। এই যে তুমি কবিতা লেখো না, সে'টা আদতে কবিতা লিখতে পারার ফিউচার অপরচুনিটি। সে'টা একটা গুডনিউজ।
- তা'হলে যারা অলরেডি কবিতা লেখে তাঁরা...।
- তাঁরা হরিবল। কবিদের জাস্ট সহ্য করা যায় না। এই যে তুমি লেখো না কিন্তু লেখার সম্ভাবনা আছে, সে'টা একটা মারাত্মক ভালো কোয়ালিটি। বুঝলে? তা'বলে আবার কবিতা লিখতে শুরু করে দিও না।
- বস হয়ে আপনি যখন বলছেন, তখন তাই হবে। তা'হলে এ'বারে রিপোর্টটা দেখাই...।
- ব্যাড নিউজটা শুনবে না ভাই বসন্ত?
- বলবেন?
- না বলে উপায় নেই ভাই।
- বলুন। তবে ভালো ঠেকছে না।
- নার্ভাস হয়ো না। মনে রেখো ব্যাডনিউজের ও'পারে আর একটা গুডনিউজ বসে রয়েছে।
- ব্যাড নিউজটা কী স্যার?
- তোমার চাকরিটা আজ গেল। তিরিশ দিনের নোটিস পিরিয়ড শুরু আগামীকাল থেকে।
- স্যার! কী আশ্চর্য! আমার পার্ফর্ম্যান্সে তো কোনও প্রব্লেম নেই...।
- নেই তো। আরে বাবা ভিস্তীদের চাকরী আর নেই মানে কি মানুষের জলের প্রয়োজন নেই না কি তাঁদের পার্ফরমেন্স স্যাটিসফ্যাক্টরি ছিলো না!
- স্যার, দেখুন। এ'সব হেঁয়ালি আমার আর ভাল্লাগছে না। চাকরি যাওয়ার ব্যাপারটা কি জেনুইন?
- হান্ড্রেড পার্সেন্ট! এই খামে চিঠি। আর ইমেল তোমার ইনবক্সে।
- এর পরের গুডনিউজটা কী? আমার গ্র্যাচুইটির টাকাটা মেরে দেবেন?
- রামো রামো। আমি কি পাষাণ ভাই বসন্ত? গুডনিউজ ওয়ান, তোমার মধ্যে কবি হওয়ার পোটেনশিয়াল আছে। কিন্তু মাইন্ড ইউ, তাই বলে কবি হতে যেও না। এরপর এলো সামান্য একটা ব্যাডনিউজ, চাকরিটা গেছে। গন গনা গন গন, গন্‌! এইবারে স্যান্ডউইচের নীচের আসল গুডনিউজটা। আমরা ফ্রিল্যান্স কন্ট্রিবিউটর হায়্যার করছি। প্রচুর টাকা। টাকায় জাস্ট ভেসে যাওয়া। দিনে চারঘণ্টা দিলেই যে কেউ লাল হয়ে যাবে।
- ওহ, তাই নাকি স্যার? থ্যাঙ্কিউ...আমারও মনে হচ্ছিল ফ্রিলান্সিংয়ে গেলে আমার হাতে একটু সময় বাড়বে...অন্যান্য কিছু কাজও নিতে পারবো। তা'ছাড়া আমার ঘোরাঘুরির এত শখ...।
- তা আছে নাকি তোমার নজরে ভালো কোনও ফ্রিলান্স অ্যানালিস্ট? তোমার রেকমেন্ড করা কেউ হায়্যার হলে তুমি দু'টো হাজার টাকার আমাজন ভাউচার আর একটা গুডি ব্যাগ পাবে। ফ্যান্টাস্টিক না? আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে না ভাই?
- আপনি আমায় ফ্রিল্যান্স পোস্টে নিচ্ছেন না?
- আমাদের কোম্পানির পলিসি যে, ছাঁটাই করা কাউকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ঢোকানো যাবে না। তবে ভাবো স্যান্ডউইচ মেথডের এফেক্টিভনেস, এত একটা খারাপ খবর পেয়েও নিশ্চয়ই তোমার মনের মধ্যে এন্তার ফুর্তি! দু'হাজার টাকার আমাজন ভাউচার আর একটা ঢাউস গুডিব্যাগ...ওহ ওয়াও...এই...এ কী বসন্ত...তুমি প্রিন্টারটা অমন রাক্ষুসে মেজাজে তুলছ কেন...এই...এই...এই ও'টা ছুঁড়ে মারলে আমার লাগবে কিন্তু...এই...এই...!

No comments: