Skip to main content

দ্য পুজো পুজো রোব্বারস


দিব্যি কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে খটরখটর কী-বোর্ড চালিয়ে যাচ্ছিল অনিন্দ্য৷ দিব্যি।

সাতটা এক্সেল শিট আর আর তিনটে ওয়ার্ড ফাইল চোখের সামনে খোলা। কনসেন্ট্রেশন তুঙ্গে, কাপের কফি আধঘণ্টা আগেই ফুরিয়েছে অথচ মাঝেমধ্যে সেই খালি কাপেই চুমুক দিচ্ছিল সে। 

এমন সময় হল কী...কম্পিউটারটা আপনা থেকেই রিস্টার্ট হল৷ সমস্ত খোলা ফাইলকে না পাত্তা না দিয়ে সে ব্যাটার স্ক্রিন দুম করে বন্ধ হয়ে আবার জ্বলে উঠলো৷ অনিন্দ্যর মেজাজটাও গেল বিগড়ে। আচমকা সে টের পেল কফির কাপটা ফাঁকা। তারপর খেয়াল হল আশেপাশের কিউবিকেলগুলোও ফাঁকা। কেউ কোত্থাও নেই। অনিন্দ্যর মনে পড়ল আজ রোব্বার। অন্য কারুর অফিসে আসার কথা নয়৷ কিন্তু তাকে প্রায়ই ছুটির দিনে আসতে হয়৷ প্রায়ই তাকে রোব্বারি-তলব পাঠান বড়সাহেব৷ বড়সাহেবের রোব্বারি ডাক সবাই এগিয়ে গেলেও অনিন্দ্য পাশ কাটাতে পারেনা। সে জন্য অবিশ্যি বড়সাহেব তাকে বিশেষ পছন্দ করেন। 

যা হোক। কম্পিউটার রিস্টার্ট হওয়ার সময় কনসেন্ট্রেশনটা গেল গুলিয়ে। আর সে'টাই হল কাল। মুহূর্তের অসাবধানতায় অনিন্দ্যর চোখ গিয়ে পড়ল জানালার ও'পাশে, আকাশের দিকে। এক্সেল, ওয়ার্ড ডক, আউটলুক ইনবক্স সব কেমন ঝাপসা হয়ে পড়ল। কেমন একটা অস্বস্তিকর ঝকঝকে নীল৷ বারো ঘণ্টা অফিস, বাড়ি ফিরে একার সংসারে সামান্য রান্নাবান্না আর রাতের দিকে টিভির পাশাপাশি ল্যাপটপে অফিসের দু'একটা খুচরো কাজ দেখতে দেখতে গা এলিয়ে দেওয়া৷ 

এ'সব কিছুর মধ্যিখানে আকাশের দিকে চোখ যাওয়ার কথা নয়, দৈবক্রমে আজ গেল। রিস্টার্ট হওয়া কম্পিউটারের স্ক্রিনে কিছুতেই আর চোখ আটকে রাখা যাচ্ছেনা৷ অথচ ওই হতচ্ছাড়া আকাশের দিকে তাকানোরও সাহস হচ্ছে না৷ মিনিট সতেরো ছটফট করার পর বড়সাহেবকে একটা ফোনই করে বসল অনিন্দ্য।

- হ্যালো। বলো অনিন্দ্য। 

- হ্যালো স্যার।

- গুপ্তার ফাইলটা কম্পলিট হল? খুব আর্জেন্ট কিন্তু। রাত হলেও ক্ষতি নেই কিন্তু ফাইলটা কম্পলিট করা চাই। অবশ্য, তোমার কাছে তো এ'সব জলভাত।

- হ্যাঁ। স্যার, ওই ফাইলটার ব্যাপারেই একটা কথা বলার ছিল।

- বলো না।

- ফাইলটা আর আজ প্রসেস হবে না।

- সে কী। এনিথিং রং?

- নীল।

- হোয়াট?

- আকাশের রঙটা৷ কেমন একটু অস্বস্তিকর নীল৷ আপনি দেখেছেন?

- আর ইউ ওকে অনিন্দ্য?

- ফাইলটা আজ আর হবে না৷ 

- বাট ইট ইস ভেরি আর্জেন্ট।

- কাঁচকলা। 

- হোয়াট কাইন্ড অফ ল্যাঙ্গুয়েজ ইস দিস?

- গুপ্তাদের ফাইলটা তিনদিন পরে করলেও ক্ষতি নেই। আমি শিডউল চেক করেছি।

- বাট উই মাস্ট স্টে আহেড অফ দ্য শিডিউল।

- ইউ মাস্ট। আমার মাস্ট তো স্রেফ আপনার মাস্টে তালে মিলিয়ে চলা। 

- ব্যাপারটা কী বলো তো? 

- ফাইলটা আজ আর হবে না। আগামীকাল আর পরশু আমি ছুটি নিচ্ছি৷ ক্যাসুয়াল লীভগুলো খামোখা প্রতি বছর নষ্ট হয়। বুধবারের মধ্যে বরং আপনি ফাইলটা পেলেও পেতে পারেন।

- ক্যাসুয়াল লীভগুলো নষ্ট হয় বলেই ইউ আর আ ফাস্ট রাইজার। সে'টা ভুলে যেওনা।

- কেরিয়ারে ফাস্ট রাইজ করব বলে ক্যাসুয়াল লীভ নিই না, আপনা এই ধারণা ভুল৷ ছুটি চাইতে বুক কাঁপে, ঘাড়ে চাপানো আজেবাজে কাজ কেন করব সে লজিকাল প্রশ্ন করতে ভয় পাই। এক্সেলেন্সে মন নেই, কম্পলায়ান্স কম্পল্যায়ান্স করেই ফতুর হচ্ছি৷ প্রমোশনের লোভ আমার নেই স্যার। কিন্তু চাকরীতে এ'দিক ও'দিক কিছু হলে লিলুয়ার মেজপিসি চিমটি কেটে কী বলবে তা ভেবে কেঁপে উঠি। রিয়েলি। "ইয়েস স্যার ইয়েস স্যার" যে আউড়ে চলি তা কিন্তু স্রেফ ভয়ে। অ্যাম্বিশনে নয়। 

- বটে? এ'সব ফিলোসফিকাল বাতেলা আমায় শোনাতে এসো না। মনে রেখো, সামনেই রিভিউ..।

- আর সামনেই পুজো। জানেন, কিছুক্ষণ আগেই খেয়াল পড়ল। বছর কুড়ি আগে কেনা কয়েকটা পুজোসংখ্যা আমার  পুরনো বইয়ের ট্রাঙ্কে এখনও রাখা আছে। পড়া হয়নি৷ তখন পরীক্ষার নম্বর কমলে মধ্যবিত্ত বাপ-মায়ের মধ্যবিত্ত স্বপ্নভঙ্গ হবে, সে ভয় ছিল। এখন বাপ-মা আর নেই বটে। তবে ভয় বয়ে বেড়ানোর অভ্যাসটা রয়ে গেছে স্যার। কিছু একটা না করলেই নেই।

- য়বাজে বকার সময় আমার নেই। কম্পলিটেড ফাইলটা আমার রাতের মধ্যে চাই।

- আজ রাতের মধ্যে কুড়ি বছর পুরনো শারদীয়া শুকতারার রিভিউ পেতে পারেন। আগামীকাল রাতের মধ্যে সাতপুরনো পুজোবার্ষিকী আনন্দমেলার রিভিউ।  পরশু রাত্রের মধ্যে পাবেন পুরনো কিশোরভারতী পুজোসংখ্যার রিভিউ। তারপরের দিন বোধ হয় এই ফাইলটা পেলেও পেতে পারেন।

- ইউ ইডিয়ট!

- আই এগ্রী স্যার। এমন পুজো পুজো রোব্বারের দুপুরে কোথায় কড়াইতে মটন কষাবো! তা নয়। আমি অফিসে বসে ভিলুকআপ চালিয়ে হদ্দ হচ্ছি। আলবাত আমি ইডিয়ট৷ যাকগে, এখন আসি বরং।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু