মিউজিক সিস্টেম থেকে ভেসে এলেও হেমন্তর কণ্ঠস্বর হেলাফেলা করা সম্ভব নয়। ভদ্রলোক "এই করেছ ভালো" বলেছেন মানে সে'টাই ফাইনাল ট্রুথ। এরপর আর 'এ'টা হচ্ছে না, সে'টা পাইনি' বলে দু:খ করার কোনো মানেই হয় না। 'ভালো', 'সুন্দর', 'দারুণ' এইসব বিশেষণ দিয়ে হেমন্তবাবুকে দাগিয়ে দেওয়ার দু:সাহস আমার মত সঙ্গীতহীন মানুষের অন্তত নেই। ওঁর গলায় কেমন একটা ব্যাপার আছে যাতে মনে হয় পাশে বসেই কেউ গাইছেন। আর তাঁর কণ্ঠে রয়েছে সুপারসিরিয়াস ইমপ্যাক্ট, গান-শুনিয়ের সামান্যতম ফিচলেমোও সে গানের ধবধবে সাদা চিকন-কাজের টেবিলক্লথে ঝোল ছিটিয়ে দিতে পারে। জনগনমন কানে এলেই যেমন দাঁড়িয়ে পড়া, হেমন্ত কানে এলেই তেমনই সজাগ ও শান্ত না হয়ে উপায় নেই।
সেই হেমন্ত যখন রবীন্দ্রনাথের লাইন তুলে বলছেন "এই করেছ ভালো, নিঠুর, এই করেছ ভালো। এমনি করে হৃদয়ে মোর তীব্র দহন জ্বালো" - তখন দুনিয়ার ভার মাথা নুইয়ে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। নয়তো যেন রবীন্দ্রনাথকে নয়, হেমন্তবাবুকে ইনসাল্ট করা হবে; আর সে'টা হলে পৃথিবী স্পিন ছেড়ে রিভার্সসুইংয়ের দিকে ঝুঁকবে। হেমন্তর গলা বুকের ভিতরের লিখে দিচ্ছে "আমার এ ধূপ না পোড়ালে গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে, আমার এ দীপ জ্বালালে দেয় না কিছুই আলো"। আমি পুড়লে পোড়া থার্মোকলের গন্ধ ছাড়া কিছুই বেরোয় কিনা জানা নেই, তবে তা নিয়ে অভিযোগ জানানোর আমি কে। হেমন্তবাবু অমনভাবে বলছেন যখন এই ভালো। যা হচ্ছে বেশই হচ্ছে; খামোখা ঘ্যানঘ্যান বাড়িয়ে কী আর হবে।
রবীন্দ্রনাথকে বোঝার মত বোধবুদ্ধি নেই, হেমন্তকে অ্যাপ্রিশিয়েট করার মত সুর নেই। এলেবেলে মানুষ, তাঁর এলোমেলো দু:খ। নেহাৎ হেমন্ত অমন যত্ন করে পিঠে হাত রাখার আশ্বাসে গাইছেন, "বজ্রে তোলো আগুন করে আমার যত কালো, এই করেছ ভালো"। তাই আমারও নিশ্চিন্তে বলে দেওয়া: "ওউক্কে, ঠিক হ্যায়, এই ভালো, এই বেশ"।
No comments:
Post a Comment