Sunday, June 1, 2025

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

আজ যে একটা স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের ওপর ওয়েবিনার জয়েন করার কথা, সে'টা সমীর প্রায় ভুলেই গেছিলো। এইচআরের শর্মিলা ফোন করে মনে করালে। ওয়েবিনার শুরু বেলা এগারোটা থেকে, ও'দিকে আবার দুপুরের মধ্যে জরুরি চারটে রিপোর্ট হেডঅফিসে পাঠানোর কথা। ওয়েবিনার পাশ কাটিয়ে গেলে ঝামেলা হবে নিশ্চিত, কর্মীরা ডেভেলপমেন্টাল ব্যাপারে আগ্রহ না দেখালে তাঁদের কদর থাকে না। এ'দিকে রিপোর্ট সময়মত না পাঠালে মুণ্ডু আস্ত থাকবে না। প্রবল অস্বস্তি বোধ করলে সে। সে অস্বস্তি কাটাতে সেন্ট্রাল এসির কনকনে হাওয়া সত্ত্বেও ডেস্কের পাশে রাখা পেডেস্টাল ফ্যানটা পাঁচের দাগে বনবন করে ঘুরিয়ে দিলে। এরপর টানা তিন কাপ কফি খেলে, বাড়তি চিনি দিয়ে। চাপের মধ্যে বিস্বাদ ব্ল্যাককফিতে চুমুক দেওয়ার মানে হয় না, মুখ এমনিতেই তিতকুটে হয়ে থাকে। রিপোর্টে কমপ্লেক্সিটির বহর দেখে খানকয়েক ক্রিমবিস্কুটও খেতে হলো। শুগার বিষ হতে পারে কিন্তু বিষেই যে বিষক্ষয় হয় সে'টা সমীরের জিভ আর আত্মা বিলক্ষণ জানে।

যা হোক। সময়মত সে ওয়েবিনারে জয়েন করলে। ক্যামেরার অন্যপ্রান্তে যে কেউ দেখলে ভাববে সমীর মগ্ন হয়ে শুনছে অথচ তাঁরা দেখবে না যে সমীরের আঙুলগুলো কীবোর্ডে শশব্যস্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর কম্পিউটারের অর্ধেক স্ক্রিন জুড়ে রকমারি এক্সেল আর পাওয়ারপয়েন্ট খলবল করছে। বুদ্ধি করে দু'একটা প্রশ্ন আগ বাড়িয়ে করে ফেললে সমীর। সে জানে যে প্রশ্ন করার জন্য সমস্ত কথা মন দিয়ে শোনা মানে প্রডাক্টিভিটি লস। দু'একটা ইতিউতি শব্দ যাই ভেসে এসেছে সে'গুলোকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে "এক্সকিউজ মী, আই অ্যাম কিউরিয়াস আবাউট..." বলে দু'টো প্রশ্ন নামিয়ে দিলে সে। ব্যাস, নিশ্চিন্দি। সবাই জানলে সে জানপ্রাণ লড়িয়ে স্ট্রেসম্যানেজমেন্টের ওয়েবিনার শুনছে। এ'দিকে ওয়েবিনারের মাঝপথেই রিপোর্টগুলো রেডী। চারটের মধ্যে দু'টো রিপোর্ট যত্ন করে বানিয়েছে সে, অন্য দু'টোয় মারাত্মক কাগেরঠ্যাঙবগেরঠ্যাঙ গোঁজামিল। তবে সমীরের বিশ্বাস কোয়ালিটি হলো শুক্তো আর ডেডলাইন হলো তেলকই।

ওয়েবিনার শেষ হতে বেলা গড়িয়ে গেলো। অফিস ক্যাফেটেরিয়া থেকে একটা বার্গার অর্ডার করে ইউটিউবে একটা হেলদি ইটিং পডকাস্ট চালিয়ে দিলো সে। শতব্যস্ততার মধ্যেও লাঞ্চের সময় মিনিট কুড়ি রিল্যাক্স না করলে তাঁর চলে না।

No comments: