Skip to main content

এঁটো-হাতের আড্ডা



রোববারের লাঞ্চটা ধীরেসুস্থে সেরে ফেলাই মঙ্গল, নবেন্দু সান্যালের ফোকাসটা সে'দিকেই৷ গুরুপাক হলে ভালো, না হলেও ক্ষতি নেই, বরং তা'তে খেতে বসে গল্পটা জমে ভালো৷ মাংসের হাড়ে, মাছের কাঁটায় কনসেনট্রেট করতে গিয়ে রোব্বারিয়ান আড্ডার ফ্লো নষ্ট-হয়না৷

তবে সে ক্ষেত্রে আলুভাজাটা দরকারি, সে'টা ব্যবহার হবে ডাল-ভাত সাফ হয়ে যাওয়ার পর৷ থালা-টেবিলের বাহার যেমনই হোক, নবেন্দুবাবু নিজের আলুভাজাকে সাতপুরনো অল্প তোবড়ানো স্টিলের বাটিতেই পছন্দ করেন৷ খানিকটা কন্ডিশনিং বোধ হয়; আলুভাজাকে বাহারি চীনামাটির প্লেটে দেখলেই মনটা সামান্য আড়ষ্ট হয়ে পড়ে৷ সর্বোপরি, নবেন্দুবাবু আলুগুলো খানিকটা মোটাদাগে কুচিয়ে নরম করে ভাজতে পছন্দ করেন; বিশেষত শেষ পাতে খাওয়ার জন্য৷

ডাল-ভাত সাপটে খেয়ে, চেয়ারে গা এলিয়ে, আলুভাজার বাটিটা টেনে নেওয়া৷ তারপর অতি ধীরেসুস্থে, একটা একটা আলুভাজার টুকরো টেনে নিয়ে, ছোটখাটো কামড়ে এগিয়ে যাওয়া৷ পাশে বসা মানুষজনের সঙ্গে গল্প জমে উঠবে৷ আঙুলে লেগে থাকা ডাল শুকিয়ে যত খটখটে হয়ে উঠবে, আড্ডা তত জমাট হবে। গোটা হপ্তা জিভ-পেটের দেখভাল হয় বটে, তবে মনের চুলে বিলি এই রোব্বারের লাঞ্চ শেষের এঁটো হাতের আড্ডায়৷

**

- নবেন্দুদা! কী হল, এ'বার উঠতে হবে তো।

- তিনটে বেজে গেছে নাকি পটা?

- সাড়ে তিনটে। ম্যানেজার চিল্লিয়ে উঠলো বলে৷ চারটে বাজলেই তো ভিড় বাড়বে আবার।

- আহ্৷ আড্ডার মেজাজটা সবে দানা বাঁধছিল রে..।

- চলো নবেন্দুদা, সামনের হপ্তায় ঘুরেই আসি দু'দিন। আমি আর তুমি৷ মায়াপুর বা পুরুলিয়া। সে'খানে দুপুরের খাওয়ার পর এঁটো হাতে দু'জনে বসে এক্কেরে সন্ধ্যে পর্যন্ত গল্প করব৷ এই মহাদেব হোটেলের রাঁধুনি হয়ে আর রোব্বারে খাওয়ার পাতের আড্ডা জমবে না৷

- চ' চ'। খদ্দেরদের হাঁকডাক শুরু হয়ে গেছে৷ সুকুমার একা হেঁসেল ম্যানেজ করতে পারবে না৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু