ফুলুদির বিয়ের সকালে পরার জন্য মেজোকাকা একটা লাল রঙের ফতুয়া কিনেছে। মিইয়ে যাওয়া লাল নেয়, একবারে যাকে বলে গনগনে লাল। ভোরবেলা উঠে, স্নান সেরে; সে ফতুয়া আর পাজামা চাপিয়ে গোটা বিয়েবাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মাঝেমাঝেই সলজ্জ হাসি নিয়ে মানুষজনকে জিজ্ঞেস করছে "স্নোপাউডার ছাড়াই আমায় বোধহয় ফুলুর চেয়েও ব্রাইট লাগছে, তাই না"?
ব্রেকফাস্টে দু'টো বাড়তি কচুরি চেয়ে খেলে কারণ "রেড কালার এমনিতেই স্লিমিং"। ফুলুদির শ্বশুরবাড়ি থেকে এক ঝাঁক হবু দেওর এলো তত্ত্ব নিয়ে, মেজোকাকা তাদের ফলাও করে "রেড স্যালুট জেন্টলমেন, মাছ-মিষ্টির ডালাগুলো আমায় দাও। বাকি ট্রেগুলো ওই খাটে সাজিয়ে রাখো। চলো জওয়ান, লেফট রাইট লেফট.."।
দুপুরের দিকে ট্যুয়েন্টিনাইনের আসরে বসে বারবার বলে চললে যে "হাতে দু'তিনটে লাল কার্ড এলে কিন্তু কল আমিই ধরবো, কালারটা হেবি সুট করেছে"। সন্ধেবেলা আদ্দির পাঞ্জাবি পরার কথা ছিল, কিন্তু শেষে দরদী সুরে গান গেয়ে ঘোষণা করলে যে "ইয়ে লাল রঙ ম্যায় নহি ছোড়ুঙ্গা"। রাতের দিকে ফুলুদির বিয়ে মিটে গেলে মেজোকাকা আমাদের ছেলেছোকরাদের আসরে এসে বসে ভাটিয়ালি গাইলে আর বড়জ্যাঠার মাতব্বরি নিয়ে প্রাণখুলে নিন্দে করলে।
রাত দু'টো নাগাদ শুতে যাচ্ছি। মেজোকাকা পাশে এসে কাঁধে হাত রাখলে।
- ভটকাই, ইউ আর আ গুড বয়।
- মদ খেয়েছো কাকা?
- না। ওই একটিই লাল, মানে লাল জল, আমার সয় না। অম্বল হয়।
- তবে হঠাৎ প্রশংসা? ইডিয়ট হতচ্ছাড়া বাদে কোনোদিন কিছু বলতে শুনলাম না তো।
- একটা কথা কাউকে বলা হচ্ছে না। বলা দরকার।
- কী ব্যাপার কাকা?
- আমার বিজনেসে লালবাতি জ্বলে গেলো রে। গত পরশু থেকে শাটার ডাউন।
- সর্বনাশ। কাকী জানে?
- ফুলুর বৌভাতে পরবে বলে একটা গর্জাস লাল বেনারসি কিনেছিলো। সে'টা একদিন অন্তত আনন্দ করে পরে নিক।
- এরপর?
- প্রদীপ দত্ত এ'সব মাইনর সেটব্যাকে ঘাবড়ে যায় ভেবেছিস? গত তিরিশ বছরে চারটে ব্যবসা করেছি। সব কটাতেই লাল হয়েছি আবার ডুবেওছি। নতুন ব্যবসা খুঁজে নিয়েছি। ফুলুর মেয়ে বা ছেলের মুখেভাতে দেখিস আমার কী র্যালা।
- যাক। নিশ্চিন্ত হলাম।
- কাউকে বলতে না পেরে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এ'বার একটু স্বস্তি পেলাম।
- ক্যাটক্যাটে লাল জার্সিটা এ'বার ত্যাগ করবে কি?
- ওই রঙের কনফিডেন্সেই তো মার দেগা কেল্লা অ্যাটিটিউডটা ধরে রাখতে পেরেছি রে রাস্কেল।
- আবার রাস্কেল?
- ও'সবে মন খারাপ করতে নেই ইডিয়ট। ইউ আর আ গুডবয়। নে, একটা বিড়ি খাওয়া দেখি।
No comments:
Post a Comment