Skip to main content

রোব্বারের ডিমকষা



ডিমের ট্যালট্যালে ঝোলও যথেষ্ট সুস্বাদু হতে পারে৷ ভাতের মধ্যে কাঁচলঙ্কা ডলে,সে ঝোলে মেখে দিব্যি লাঞ্চ সেরে নেওয়া যায়। তবে রোব্বারের ডিমের ঝোল না কষালে মুশকিল, ঝোলের ট্যালট্যালেমো আগামী হপ্তার মেজাজকে ডায়লুট করে দিতে পারে৷ মায়ের রান্না রোব্বারের ডিম তাই ঝোল নয়, কষা। এবং রগরগে৷ 

ডিমের কষা প্রসঙ্গে বিহারের এক ছোট্ট ভাতের হোটেলের কথা মনে পড়ে গেল। কটিহার আর পূর্ণিয়া শহরের মাঝামাঝি, হাইওয়ের ওপর একটা দোকান৷ দু'হাজার দশ থেকে বারোর মধ্যে সে রাস্তা দিয়ে আমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল; অফিসের কাজে৷ আমার ড্রাইভার ও খাসদোস্ত ধর্মেন্দ্র মাঝেমধ্যেই সে দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়েছে লাঞ্চ সেরে নেওয়ার জন্য৷  ঝুপড়ি বললে সে দোকানের ওজন স্পষ্ট ভাবে বোঝানো যায়৷ সে'খানে চাল মোটা। অবশ্য মোটা চালে একটা আলাদা স্বাদ থাকে, তা আমিষ ঝোলে মেখে খেতে লাগেও দিব্যি, কিন্তু ওই দোকানের সে চাল বড় বিস্বাদ ঠেকত, কিছুতেই রোচেনি৷ তাই সে'খানে নিতাম রুটি, আলুভাজা আর হাঁসের জোড়া ডিমের কষা৷ 

যে স্টিলের বাটিতে ডিমে দেওয়া হত, তার গায়ে এক ফোঁটা ঝোলও লেগে থাকত না। শুধু মাখোমাখো কালচে ভাজা পেঁয়াজ। আর থাকত রগরগে ঝাল। আবার সেই জিভ-কাঁপানো ঝালের পাশাপাশি থাকত একটা চমৎকার টক-মিষ্টি 'আন্ডারকারেন্ট'; সবমিলে সে স্বাদ সত্যিই অতুলনীয়৷ আমি আর ধর্মেন্দ্র সে ডিমকষার ঝালে হাপুসহুপুস হয়েও যে কত রুটি উড়িয়েছি তার ইয়ত্তা নেই৷ তিন চার গ্রাস রুটি-ডিম মুখে পোরার পর অল্প আলুভাজা মুখে দিতাম জিভ নিউট্রালাইজ করতে, তারপর ফের সেই হাইক্লাস কষায় ডাইভ৷ 

একবার আমরা সে দোকানের পাশ দিয়ে যখন পেরোলাম তখন বিকেল৷ কিষাণগঞ্জ থেকে দিব্যি ভরপেট ভাত খেয়ে বেরিয়েছি, আর লাঞ্চের জন্য দাঁড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না৷ দোকান ছাড়িয়ে আধমাইল মত চলেও গেছি, আচমকা বুক বেয়ে এক দীর্ঘশ্বাস উঠে এসেছিল;

"ধর্মেন্দ্রজী, ওই ডিমের কষা আজ আর খাওয়া হল না"।

উত্তরে ধর্মেন্দ্র পালটা দীর্ঘশ্বাস ভাসিয়ে দিয়েছিল। তার মনও যে একই হাহাকারের নৌকায় ভাসছে তা দিব্যি বুঝতে পারলাম।

"ইউটার্ন লেকে ওয়াপস জানেমে জ্যাদা টাইম তো নহি লগেগা ধর্মেন্দ্রজী, তাই না"? জিভের লকলক ততক্ষণে বুকের ধুকুপুকে নেমে এসেছে।

"তুরন্ত পহুচ জায়েঙ্গে জী", বুঝলাম যে ধর্মেন্দ্রও যে নিশির ডাক অগ্রাহ্য করতে পারছে না।

"তবে ভাত তো খাওয়া হয়েই গেছে কিনা, তাই ভাবছিলাম..এখন কি আর রুটি খেতে ইচ্ছে করবে"?

ধর্মেন্দ্রর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল 
" লাঞ্চ তো হো গয়া৷ লেকিন শাম কা নাস্তা কর লেতে হ্যায়৷ গাড়ি মে বিরেড (পাউরুটি) হ্যায়৷ বস উয়ো অন্ডা উঠানা হ্যায়"।

তার আধঘণ্টার মাথায় পাউরুটি সহযোগে সে হাইক্লাস ডিমকষায় ফিরে গেছিলাম আমি আর ধর্মেন্দ্র৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু