Skip to main content

বিরিয়ানির কবিগান



বিরিয়ানি ব্যাপারটা নিয়ে এত মাতামাতি বোধ হয় আইডিয়াটার নিপাট সারল্যের জন্য৷ ভাত-মাংস, একই পাত্রে, একই সঙ্গে৷ অবশ্য সরল ব্যাপারটা খাইয়েদের জন্য৷ রাঁধিয়েদের কাজটা সহজ নয় তেমন, এ বড় জটিল শিল্প৷ ভাতের দানা কতটা শক্ত রইল, মাংস যথেষ্ট তুলতুলোলো কিনা, মশলার ব্যবহারে যথেষ্ট সংযম দেখানো গেছে কিনা; এমন হাজারো হ্যাপা৷ 

কিন্তু আউটপুট ব্যাপারটা সুকুমার সমগ্রর মত জম্পেশ; সহজসরল অথচ ম্যাজিকে টইটুম্বুর একটা ব্যাপার। বিরিয়ানি ছাড়া খানাপিনা ভাবতে হলে আপনাকে ঝোল বাছতে হবে, রুটি বা ভাতের রকমফের দেখতে হবে, তার পাশাপাশি এ'টি এবং ও'টি৷ বিরিয়ানি ব্যাপারটা তুমুল; মাংস-ভাত, ঝোলে ল্যাপ্টালেপ্টি নেই কিন্তু শুকনো দলা হয়ে গলাতেও আটকে যাবে না৷ আর সেই অনাড়াম্বরের জন্য হয়ত খানিকটা খরচেরও সাশ্রয় ঘটে; ওই তিনচারটে পদের দরকার স্রেফ বিরিয়ানিতে মিটে যাওয়ায় (এই ছবিতে বিরিয়ানির পাশাপাশি যে মুর্গির রগরগে ঝোল আছে, সে'টা নেহাতই উত্তমকুমার পাশে আমার মত গাম্বাটের হ্যা-হ্যা করে দাঁতিয়ে দাঁড়ানোর মত অদরকারী)। 

বিরিয়ানি চিনামাটির প্লেটেও চলে, রূপোলী থালাও আলো করে থাকে আবার  সস্তা সাদা কাগজের বাক্সেও একই রকম জমজমাট এবং উপভোগ্য৷ এর ফলে ব্যাপারটার মধ্যে রয়েছে দুর্দান্ত 'ইজি অ্যাকসেস'। সে'ভরসাতেই শেয়ালদা স্টেশনের কাছে জীর্ণ ঠেলার হাঁড়ির বিরিয়ানি খাওয়ার থ্রিল য কোনও কুলীন রেস্তোরাঁয় বসে দাঁত চিবিয়ে বিরিয়ানি বিষয়ে সিঙ্গলমল্টিও বিশ্লেষণ করার সমান৷ 

আর এই ভালোবাসাটা মোটামুটি রোববার ভালোলাগার মত, অথবা ট্রেনের জানালায় বসে মিঠে হাওয়া মুখে লাগানোর তৃপ্তির মত।  ব্যাপারটা এতই মোটা জাতের যে এ প্রসঙ্গ উঠলেই বিরিয়ানি-ভালোবাসা মানুষজনের ইমোশন পিলপিলিয়ে হ্যামিলিনের ইঁদুর-দলের মত বেরিয়ে আসে৷ আলোচনায় খোঁচাখুঁচিও থাকে, থাকে ব্যান্টার; অমুক জায়গা ওভাররেটেড, তমুক জায়গার বিরিয়ানি ডালডা চোবানো, ইত্যাদি৷ তবে গোটাটাই পান্নালালের "যেথা আছে শুধু ভালোবাসাবাসি"র জায়গায় থেকে৷ বিরিয়ানি যুদ্ধ বলে কিছু হয়না, পুরোটাই কবিগানের রসালো লড়াই।

যা বলতে এতটা ধানাইপানাই, সে'টা বলি৷ এত বিরিয়ানি-বিরিয়ানি আদেখলাপনার মূলে একটাই কারণ; বিরিয়ানি-কমরেডদের সেলাম জানানো৷ আর ইয়ে (ফিসফিসিয়ে, অপরাধবোধ খানিকটা চেপে রেখে) একটা মোক্ষম কথা জানিয়ে রাখা দরকার। হ্যাংওভার কাটানোর সবচেয়ে বড় অস্ত্র লেবুজল নয় কিন্তু, বিরিয়ানির কার্ব আর সুবাসই আপনার শ্রেষ্ঠ ভরসা৷ চিয়ার্স!

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু