Skip to main content

নিউনর্মাল বিরিয়ানি



- লাঞ্চে বাসি বিরিয়ানির জবাব নেই ভায়া৷

- ট্রু৷ তবে ইয়ে, থার্ড ওয়েভ ঠেকিয়ে রাখা যাবে বলে মনে হচ্ছে না৷

- মাংস হয়ত পাতে সামান্য কম রয়েছে, কিন্তু ওভারনাইট রেফ্রিজারেশনের ফলে ফ্লেভারে একটা অন্য ঘ্যাম চলে আসে, তাই নয় কী?

- একদম৷ ইয়ে, এইমাত্র একটা গা-কাঁপানো আর্টিকল পড়লাম। বম্বেতে ইতিমধ্যেই নাকি তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে৷ অবশ্য ঠেকানোটা ওয়াজ নেভার অ্যান অপশন, শুধু ইম্প্যাক্টটাকে যদি একটু মিনিমাইজ করা যেত৷ আসল অস্ত্র হল পাইকারি ভ্যাক্সিনেশন৷ খোলামকুচির মত ছুঁচ গেঁথে যেতে হবে৷ 

- ডিম সেদ্ধটা অবভিয়াসলি টাটকা৷ বাসি বিরিয়ানির আলু আর তাজা ডিমসেদ্ধর কম্বিনেশনটা কিন্তু আউটস্ট্যান্ডিং। 

- একদম তাই৷ আচ্ছা, মাস দেড়েক আগের সেকেন্ড ওয়েভের সেই ডিসাস্টার যেন গত জন্মের কাহিনী মনে হচ্ছে৷ তাই না? অথচ  দু'দণ্ড মন দিয়ে সে'সব কথা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। মেজপিসেমশাই চলে গেলেন৷ পাড়ার মন্টু মাত্র তিনদিন ভুগে...। অফিসেই তো অন্তত জনা চারেক..। অথচ আজ দেখো, সে'সব যেন অন্য জগতের ঘটনা মনে হচ্ছে৷ 

- আমার একটা পার্সোনাল থিওরি আছে জানো৷ টাটকা বিরিয়ানির স্কেলে সিরাজ সামান্য এগিয়ে৷ কিন্তু বাসিতে আরসালাম ফটোফিনিশে বেরিয়ে যাবে৷ 

- হুম৷ পরের ফেজে শুনছি ছোট ছেলেমেয়েদেরও বিস্তর ভুগতে হতে পারে। খোকার সেফটির কথা ভেবেই বুকে মোচড় দিয়ে উঠছে৷ নট টু মেনশন; বাপ-মাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই৷

- আসলে কী জানো, বিরিয়ানি বাসি হলে তার গায়ে মায়া লাগে।

- নাহ্, লাইফটাকে কচুকাটা না করে এ প্যান্ডেমিক সরবে না।

- দু'দিন বইতো নয় ভায়া৷ রাত্রে গুরুপাক না রেখে সামান্য চাপ আর রুমালি রুটি জোম্যাটো করা যাক৷ কী বলো?

- তাই হোক৷ আর ইয়ে, অক্সিমিটারটা ট্রাবল দিচ্ছে৷ ব্যাটারি চেঞ্জ করেও লাভ হল না৷ আর একটা কিনতেই হবে৷ অর্ডার দিয়েই ফেলি৷ এ'সব ব্যাপারে দেরী করে লাভ নেই৷

**

খেতে বসে নিজের সঙ্গে গল্প না জুড়ে উপায় থাকছে না৷ খেলোয়াড়দের দেখেছি হাইভোল্টেজ মুহূর্তে নিজেদের সঙ্গে কথা বলতে৷ শেষ বলে জিততে হলে চার রান দরকার, বোলার রানআপের গোডায় দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছেন "কাম অন, কাম অন। বোল ইট ওয়াইড আউটসাইড দ্য অফ স্টাম্প । স্কেলে মাপা বল; কাম অন! ইউ ক্যান ডু ইট"। পাড়াতুতো এক জ্যেঠুকে দেখেছি শেষ বয়সে এসে অনবরত নিজের সঙ্গে গল্প জুড়ছেন; নিজেই গোলমেলে প্রশ্ন করছেন, নিজেই লাগসই উত্তর দিয়ে কেল্লা ফতে করছেন৷ আমার এক বন্ধুকে দেখতাম জটিল অঙ্ক কষার সময় মশগুল হয়ে চাপা সুরে অঙ্কের স্টেপগুলো আউড়ে যেত; কোনও জব্বর কঠিন কোনও প্রব্লেমকে জব্দ করতে পারলে নিজেই নিজেকে সাবাশ বলে উঠত। 

নিজের সঙ্গে নিজের বিড়বিড়গুলো বোধ হয় এক ধরণের মেডিটেশন৷ ধরা যাক ধুন্ধুমার যুদ্ধ চলছে, সাতাশ ঘণ্টা অনবরত শত্রুপক্ষের বুলেট এড়িয়ে হয়ত কোনও সৈনিক নিজের বাঙ্কারে এসে পৌঁছেছে৷ ঘামরক্তভেজা জামাকাপড় ছেড়ে কফির মগ হাতে দু'দণ্ড গা এলিয়ে দিয়ে প্রিয় গানের সুর গুনগুন করতে শুরু করেছে। কিন্তু সেই গানের সুরে আর কফির গন্ধে ভেসে গেলে তো তার চলবে না৷ মনের মধ্যে একটা বেসুর বেজেই চলবে "ঘণ্টাখানেক পরেই যুদ্ধ ব্রাদার! যুদ্ধ। গুলি। বুঝেছ? ব্লাডি ওয়ার! মুহূর্তের অসাবধানতায় স্নাইপারে সাফ হয়ে যাওয়া বা ল্যান্ডমাইন ফেটে উড়ে যাওয়া"। কফি শেষ হয়, গান থামে; কিন্তু স্নায়ু গা এলাবার তাল করলেই চিমটি৷ 

এই নিউ নর্মালে নিজেদের নির্ভেজাল ভালোলাগাগুলোকেও আর নিশ্চিন্তে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না৷ পছন্দের খাবার, ভালো লাগা বই, মনভালো করা আড্ডা; এ'সমস্ত কিছুর মধ্যেই নিজের সঙ্গে জরুরী আলোচনাগুলো চালিয়ে যেতে হচ্ছে৷ এ যুদ্ধ সহজে শেষ হওয়ার নয়৷ সমস্ত ভালোলাগাগুলোকে মুলতুবি রাখার উপায় নেই, আবার সহজে ভেসে যাওয়ারও উপায় নেই। 

নিজের মধ্যে বাস করা বিরিয়ানি ভালোবাসা আলাভোলা মানুষটার আস্তিন মাঝেমধ্যেই টেনে ধরছে যে ভদ্রলোক, সেও ভুরু কুঁচকে আমার মধ্যেই গ্যাঁট হয়ে বসে রয়েছে৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু