Skip to main content

কবীরিয়ানি


- পুরস্কারটা পেয়ে কেমন লাগছে অপূর্ববাবু?

- কী বলব। এত বড় একটা সম্মান৷ সে'টাও মুখ্যমন্ত্রী নিজে আমার হাতে তুলে দিলেন। ভাবলেই এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।

- মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আপনার নোবেল পাওয়া উচিৎ। আফটার অল, একটা গোটা রাজ্যের ভাগ্যপরিবর্তন ঘটেছে আপনার এই আবিষ্কারের হাত ধরে।

- আজ্ঞে..ইচ্ছেটা আমার মনেও যে ছিল না তা নয়। সুইটেবল ক্যাটেগরির অভাবে অ্যাপ্লিকেশনটা ফাইল করা গেলনা। যাকগে, বাংলার মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি৷ সে'টাই অনেক।

- শুনেছি গত সাতমাস ধরে ট্রায়াল চালিয়েছেন?

- প্যান্ডেমিকের বাজারে পাবলিক হেলথ নিয়ে তো আর ছেলেখেলা চলেনা। এই আবিষ্কার নিয়ে সাতটি স্তরে হিউম্যান ট্রায়্যাল চালিয়েছি। হান্ড্রেড পার্সেন্ট সাকসেস রেট। একশোয় একশো।

- কবীরয়ানি নামটার পিছনে কোনও ইন্সপিরেশন? 

- ‘‘মায়ায় অন্ধ বসুন্ধরায় কেউ চেনেনা আমাকে। বাতাসও নই মাটিও নই, আমি শুধুই জ্ঞান। সবার ঊর্ধ্বে আমি শুধুই সুবাসের এক ফেরিওয়ালা’’। শুনেছেন তো?

- কবীরের দোঁহে?

- রাইট। তবে সামান্য ট্যুইস্ট করে চালাই৷ কবীর বলেছিলেন 'আমি শুধুই শব্দের এক ফেরিওয়ালা'। আমি বলি 'আমি শুধুই সুবাসের এক ফেরিওয়ালা'। কখন কোন ম্যাজিকে কাজ হয় তা কে বলতে পারে। কবীরে শব্দে কেল্লা ফতে করেছিলেন। আমি ফোকাস করেছি সুবাসে।

- আর সেই সুবাসে সমস্ত বাঙালি নিজের অসাবধানতা ঝেড়ে ফেলে জেগে উঠল। বাজার করে নিকেশ হয়ে যাবে; এই বিশ্রী বদনাম উড়িয়ে দিয়ে এখন বাঙালি গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। পরিসংখ্যানও তাই বলছে, করোনার দাপট বেশ কমে এসেছে আপনার আবিষ্কৃত বিরিয়ানি ফ্লেভারের হ্যান্ডস্যানিটাইজার বাজারে আসার পর।

- কবীরিয়ানি তো শুধু সুগন্ধ নয়৷ এক্কেবারে আদত ফ্লেভার৷ কবীরিয়ানিতে হাত কচলে মুলোশাক মাখা ভাত খেলেও যে কারুর মগজ আচ্ছন্ন থাকবে খাঁটি কলকাতা বিরিয়ানি মার্কা ভালোবাসায়। আর সেখানেই মানুষ কনভিন্সড হয়েছেন, বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন কবীরিয়ানিকে। রোজ রোজ গলায় মাস্ক ঝুলিয়ে, ঠেলাঠেলি করে ভালোমন্দ বাজার করার হ্যাপা নেই। টোটাল নিশ্চিন্দি। আমার এই হ্যান্ডস্যানিটাইজার হাত ডলে ভাতেভাত খেতে বসেও সবাই 'বহুত খুব, নাজুক' বলে টেবিল চাপড়াচ্ছেন। বাজারের ভীড় কমে যাওয়ার গোটা রাজ্যে এখন প্রবল ডিসিপ্লিন, তাই না?

- একদম। তাছাড়া, থ্যাঙ্কস টু ইওর আবিষ্কার, কারণে অকারণে অফিসে, রাস্তায়, বাড়ির সোফায়;  সবাই এখন মাঝেমধ্যেই কবীরিয়ানি বের করে হাত কয়েক ফোঁটা ঢেলে নিচ্ছে। এ'টাই মনভালো করার সবচেয়ে সহজ ফর্মুলা। অনেকে বলছেন যে মনে ফুরফুর আনতে আপনার এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার নাকি সিঙ্গল মল্টের চেয়েও বেশি এফেক্টিভ।

- হেহ্। হেহ্।

- ইফ আই মে আস্ক, শুনেছি প্রধানমন্ত্রী নিজেও নাকি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন৷ 

- নিজের মুখে আর কী বলব বলুন। আমি পাতি মানুষ, সবার ভালোবাসায় এক্কেবারে ভেসে যাওয়ার উপক্রম। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন৷ নিরামিষ খাইয়েদের জন্য একটা নতুন স্যানিটাইজারের কথা ভেবেছি; ধোকলাইজার। অবিশ্যি সে'টার হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হতে এখনও দেরী আছে। তবে করোনায় কাবু এই অন্ধকার সময়ে; গোটা দেশে যদি ডিসিপ্লিন, স্বাস্থ্য সচেতনতা আর পরিতৃপ্তির একটা ঢেউ ছড়িয়ে দেওয়া যায়, ক্ষতি কী বলুন?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু