Skip to main content

বংঈটসের বিরিয়ানি রান্না প্রসঙ্গে

এই অসময়ে মনখারাপ হলেই সর্বকালের অন্যতম সেরা (এবং জরুরী) ভিডিও অর্থাৎ  বংঈটসের কলকাতা বিরিয়ানির রেসিপিটা লূপে চালিয়ে দিয়ে একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকছি আর "মার্তণ্ড মার্তণ্ড মার্তণ্ড" রিদমে "বিরিয়ানি বিরিয়ানি বিরিয়ানি" বিড়বিড় করছি।

এই রেসিপি ভিডিও সম্বন্ধে কয়েকটা মনের কথা না বললেই নয়। 

১। ভিডিওর গোড়াতে বিরিয়ানির হলদে আলু নরম সুরে ভাজা হচ্ছে, তারপর পেঁয়াজের 'বিরিস্তা'। মনে তখন শ্যামল মিত্তিরে ফুরফুর। 

২। তারপর বিরিয়ানি মশলা তৈরি। সে কী থ্রিল!  আর্কিমিডিস চৌবাচ্চা-স্নান যেন নিজের চোখের সামনে দেখতে পারছি। সামান্য তুকতাকে যে কী ঘ্যামগোত্রের বিগব্যাং ঘটতে পারে..আহা।

৩। এরপর পাঁয়তারা পক্ষের শেষ, অ্যাকশন পক্ষের শুরু। মাংসের ম্যারিনেশন। দই,মশলাপাতি দিয়ে মাংসমাখা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল এইবেলা গভর্নমেন্টের উচিৎ আইন করা; যাতে নজরুলগীতি বা বাউল না গেয়ে কেউ যেন ম্যারিনেশনের মাংস না মাখে। 

৪। সরু লম্বা চালের ভাত দেখলে এমনিতেই মনে হয় পৃথিবীতে আজও কতটা গভীর রোম্যান্স জমে আছে। আর যে চাল বিরিয়ানিতে গিয়ে ঠেকবে, তা সেদ্ধ হতে দেখা তো মেডিটেশনের ঠাকুরদা। ভিডিওর এ জায়গায় আমি বুকে পাশবালিশ টেনে নিই।

৫। যথাযথ ম্যারিনেশন শেষে কষা হয় মাংস, বুকে নামেন কবীর সুমন আর উথাল-পাতাল প্লাস ভাবনা নেশায় চিন্তামাতাল। 

৬। বিরিয়ানি দমে বসানোর আগে মশলাপাতি, আতর, কেওড়ার জল, গোলাপজল, কেশর, ঘি মাখন, খোয়া ইত্যাদি নিয়ে যে জটিল অ্যালকেমিটা ঘটে, তা দেখে ভরসা পাই। নাহ্, রক্তচোষা শয়তানি বা নিরেট ধান্দাবাজিটুকুই মানুষের শেষ পরিচয় হয়ে থাকবে না। যারা বিরিয়ানি বানাতে পারে, তারা নেহাৎ ফেলনা নয়; ভালোবাসা তাদের মজ্জায়। 

৭। জাদুকর দর্শকের চোখের সামনে পর্দা টানবেনই৷ অথবা হয়ত কাউকে পুরে ফেলবেন একটা ঢাউস আলমারিতে। সেই আড়ালটাই ম্যাজিকের আত্মা৷ ঢাকা পাত্রের আড়ালে ভাত মাংসের অঙ্কমাপা মিলনে জেগে উঠবেন মহানায়ক। সবার অগোচরে বিরিয়ানি-অরিন্দম বলে উঠবেন "আই উইল গো টু দ্য টপ, টু দ্য টপ, টু দ্য টপ"! 

ভিডিওটা দেখে মনের মধ্যে থেকে স্পর্ধা গেছে, বিনয় এসেছে। মাংস ভাত মিলিয়েমিশিয়ে যা নয় তাই পোলাও গোছের কিছু করে আর বলার চেষ্টা করব না " আজ বাড়িতে বিরিয়ানি বানিয়েছি"। 
সাধনায় শর্টকাট আর কবিতায় গাইডবই; চলে না৷ 

মনখারাপ যতই জমাট হোক, এ ভিডিও একটানা বার দশেক দেখলেই মনে হয় কোনও পাহাড়ি গ্রামের ঝকঝকে রাত্রির আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে আছি। 

সাবাশ বংঈটস। 

আরসালানে সিরাজে বা আমিনিয়ায় যারা মেগাস্কেলে নিয়মিত এ ম্যাজিক হাঁকাচ্ছেন; তাঁদের সেলাম।

***

ভিডিওটা নতুন নয়। প্রায় বেশিরভাগ মানুষই আশা করি বহুবার দেখেছেন।  তবু লিঙ্কটা দিয়ে রাখলামঃ

https://youtu.be/SbWGXcZTYzg

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু