Monday, January 3, 2022

যুধিষ্ঠির আর পয়লা জানুয়ারি

দু'হাজার বাইশ৷ পয়লা জানুয়ারি৷ রাত একটা। 

নিউ ইয়ার পার্টিতে নেচে-কুঁদে, রিমঝিমে নেশায় বুঁদ হয়ে, যুধিষ্ঠির বাড়ি ফিরছিলেন। কেলোর কীর্তিটা টের পেলেন বাসস্ট্যান্ডে এসে৷ কোন শালা পকেট কেটে মানিব্যাগ নিয়ে হাওয়া৷ 

নেশা গেল চটকে। ধেচ্ছাই৷ মানিব্যাগে তিনশো বাইশটাকা ছিল, পুরোটাই গচ্চা। এ'দিকে মানিব্যাগ ছাড়া শেষ ইন্দ্রপ্রস্থ মিনিটায় ওঠা যাবে না। এখন উপায়? 

কপাল একেই বলে, এত রাত্তিরেও বাসস্ট্যান্ড এক্কেবারে ফাঁকা নয়৷ বেঞ্চিতে আধশোয়া হয়ে যে মাতালটা শুয়ে সে ব্যাটা যুধিষ্ঠিরের রীতিমতো চেনা; যক্ষ৷ 

পিঠে চাপড় খেতেই ধড়মড়িয়ে উঠে বসলে যক্ষ৷ 

- আরে! যুধিদা যে।

- হ্যাপি নিউ ইয়ার ভাইটি।

- হ্যাপ্পি হ্যাপ্পি ন্যু ইয়ার ধম্মরাজ৷ তা লাস্ট ইন্দ্রপ্রস্থ মিনি ধরবে তো? পাঁচ মিনিটে আসছে।

- যক্ষ৷ ভাইটি। কুড়ি টাকা ধার দে দেখি৷ পরশুই দিয়ে দেব।

- তুমি শালা মহাফেরেব্বাজ৷ বড় গলায় বলছ দিয়ে দেব৷ অথচ কে জানে, ফিসফিস করে হয়ত বলবে 'ইতি গজঃ'৷ আমি কি দ্রোণের মত বুড়োহাবড়া নাকি৷ 

-  অমন বলিস না ভাই৷ কে যেন মানিব্যাগটা মেরে দিয়েছে৷ কুড়িটাকা না হলেই নয়৷ লাস্ট বাস কিছুতেই মিস করা চলবে না। এই শীতের রাতে বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে আমার সাইনাস মাইনাস হয়ে যাবে।

- টাকা দিতে পারি৷ তবে সেই পুরনো শর্ত যুধিদা।

- সেই কফি উইথ যক্ষ খেলতে হবে?

- করেক্ট। ছ'টা প্রশ্ন। সবকটার সঠিক উত্তর দিতে পারলেই জ্যাকপট। তা'হলে শুধোই?

- দেরী করে লাভ নেই৷ শীত বাড়ছে। জিজ্ঞেস কর৷ 

- ইয়ে, বিড়ি আছে?

- আছে।

- আহ, সে'টা প্রশ্ন নয়৷ দাও দেখি একটা।

- ওহ হো৷ এই যে৷

- থ্যাঙ্কিউ৷ এ'বার। শুধোই৷ কেমন?

- হোক। 

- এ দুনিয়ায় সবচেয়ে আশ্চর্যের কী যুধিদা?

- জীবনে কেউ ফেসবুক ট্যুইটারে তর্কে জেতেনি৷ অথচ তবু মানুষের টাইমলাইন কাঁপানো তর্কের শখ আর আগ্রহ কিছুতেই কমে না৷ 

- ঠিক৷ সবচেয়ে সুখী কে?

- যে মানুষ খবরের কাগজ রাখে স্রেফ অরিগ্যামি প্র‍্যাক্টিস করতে৷ আর যে নিউজ চ্যানেল ব্যবহার করে স্রেফ বারান্দায় বসা কাকচিল তাড়ানোর জন্য। 

- বাতাসের চেয়েও দ্রুতগামী কে?

- মিম। 

- স্বর্গের চেয়েও উঁচু কী?

- ল্যাদ।

- পৃথিবীর চেয়েও ভারী কী?

- নিউইয়ার রিজোলিশনের বোঝা।

- গুড৷ গুড৷ তুমি গুরু হাইক্লাস মানুষ৷ ফাইনাল প্রশ্ন৷ করি?

- নিশ্চয়ই।

- ভালোবাসা কী গুরু?

- ভালোবাসা?

- কী হল গুরু৷ আউট অফ সিলেবাস? ভেবড়ে গেলে দেখছি৷ 

- ভালোবাসা..। হুঁ..। ভা..লো..বা..সা..।

- তোমার বাড়ি ফেরা আটকে গেল যে গুরু৷ কুড়ি টাকা তো পেলে না।

- ভালোবাসা কী..এ'টাই তোর প্রশ্ন?

- একদম৷ হোয়াট ইজ লাভ যুধিদা? টেল মি!

- শীতের রাত৷ এখন রাত সোয়া একটা৷ নিউ ইয়ার। শহর জোড়া হুল্লোড়৷ অথচ তুই একা এই বাসস্টপের বেঞ্চিতে নেতিপেতি হয়ে পড়ে রয়েছিস৷ মনখারাপ ভাই দক্ষ?

- এ কী! প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এ'সব কী যুধিদা!

- তোর প্রশ্ন ভুলিনি৷ উত্তরও দেব৷ তুই জিজ্ঞেস করেছিস ভালোবাসা কী। ভালোবাসা কী জানিস? তোর কুড়িটাকার দরকার আপাতত আমার নেই৷ ভোরের দিকে দিলেই হবে। 

- ও মা৷ সে কী!

- লাস্ট বাসে ফিরে আর কাজ নেই৷ 

- কেন? ফিরবে না?

- তোর সঙ্গে গেঁজিয়ে কাটাবো ভাবছি রাতটা৷ নতুন বছরের প্রথম রাত, এমন একাবোকা হয়ে পড়ে থাকবি কেন রে রাস্কেল? তার চেয়ে দু'ভাই গপ্পটপ্প করে কাটিয়ে দেব'খন৷ কী বলিস?

- পার্ফেক্ট। ছ'টা প্রশ্নের উত্তরই তুমি ঠিকঠাক দিয়েছ৷ আর ভোরের দিকে কুড়িটাকা নয়৷ তোমায় আমি রীতিমতো ট্যাক্সিতে বসিয়ে দেব। 

- হেহ্। 

- থ্যাঙ্কিউ যুধিদা। হ্যাপি নিউ ইয়ার। 

- হ্যাপি। হ্যাপি।

No comments: