Skip to main content

মধুশালা



- মধুদা। কড়া করে একটা কফি দাও দেখি৷ 

- সে কী৷ আজ লেবু চা বাদ?

- দিনটা মোটেও সুবিধের ছিল না মধুদা৷ ম্যাক্সিমাম ক্যাফেইন না হলে চলছে না৷ ও হ্যাঁ, আজ সঙ্গে লেড়ো নয়৷ মামলেট৷ ডবল। 

- তা দিচ্ছি৷ কিন্তু, কেন গো৷ অমন ম্যাদা মেরে আছ কেন?

- সে লম্বা ফর্দ মধুদা৷

- শুনি৷ 

- এক নম্বর। কোহলি অফস্টাম্পের বাইরে খোঁচা দিয়েই চলেছে।

- হ্যাঁ, এ'টা চাপের। 

- দু'নম্বর। এলগার আউটটাউট হওয়া নিয়ে সবিশেষ মাথা ঘামাচ্ছে না৷

- কফিটা ভালোই কড়া করতে হবে।

- তাই তো বলি৷ তাছাড়া আরও আছে। তিন নম্বর৷ গিজারে জল গরম করে ঠাণ্ডা জলের কল খুলে মাথা ভেজালাম। 

- এহ হে৷ না ভাই, ব্ল্যাক কফিই দিই। সুপার কড়া।

- চার নম্বর। অফিসের জরুরী রিপোর্ট ড্রাফট করে, সাতপুরনো বস্তাপচা রিপোর্ট অ্যাটাচ করে মেল পাঠালাম৷ 

- নাহ। মামলেটটা খেও না৷ পোচ করে দিচ্ছি৷ ডবল ডিমেরই।

- পাঁচ নম্বর৷ আজ মাসের তেরো তারিখ৷ মোর দ্যান ফিফটি পার্সেন্ট অফ দ্য মান্থ রিমেইনিং৷ কিন্তু আচমকা ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স দেখে বুকটা শুকিয়ে গেল। লেস দ্যান থার্টি পার্সেন্ট অফ স্যালারি রিমেইনিং। 

- যাচ্চলে৷ আজ সিঙ্গল ডিমের পোচই অর্ডার দাও।

- তুমিও দাগা দেবে মধুদা? সাকি এই ছিল তোমার মনে?

- তুমি সিঙ্গল পোচ অর্ডার দেব৷ আর আমি বোনাস সিঙ্গল পোচ খাওয়াব। গতকাল পাড়ার ক্যারম টুর্নামেন্টে রানার্স হয়েছি৷ ভাবছিলাম তোমায় একটু ট্রীট দেব৷ আমার রিবাউন্ড শটটা তো তোমারই ডিরেকশনে ইম্প্রুভ করেছে। 

- তোমার জবাব নেই মধুদা৷ কতবার বলি, এই মধু টী স্টল পালটে দোকানটার নাম মধুশালা রাখো৷ আই ওয়ান্ট টু ওয়াক ইন্টু আ পানশালা এভ্রিডে৷ আর যাই হোক, আমার মেজাজটায় তো গালিবের সুবাস লেগে আছে, তাই না? আমি ডিজার্ভ করি মধুশালা৷ 

-  তা বটে৷ সামনের মাসে বরং সাইনবোর্ডটা রিপেন্ট করে নেব৷

-  মধুদা৷ জ্যাঠামশাই কেমন আছেন?

- মাসখানেকের মধ্যে ভেলোর একবার না গেলেই নয়। যাক গে। দেখি৷

- কত দরকার ছিল যেন?

- আড়াই মত। 

- কত জমল?

- দেড়।

- দ্যাখো৷ তবে শোনো, ভেলোর হবেই৷ আমরা আছি তো৷ মধুশালা কি তোমার একার প্রপার্টি শালা?

- বাপটা তো আমারই।

- মধুদা৷ খদ্দের তো আর কেউ নেই৷ কফি দু'কাপ বসাও না৷ তারপর বসো পাশে৷ তোমায় একটা দেশাত্মবোধক গান শোনাই৷ 

- দেশাত্মবোধক? 

- এলগার বিদেয় দে মা, জিতে আসি৷ এলগার বিদেয় দে মা, জিতে আসি। কফি নিয়ে এসো, বাকিটা শোনাবো৷ 

- বহুত খুব।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু