Skip to main content

স্পষ্টবাদ

স্পষ্টভাষী হয়ে উঠতে পারায় যে কী পরম তৃপ্তি। সত্যিই, কাঠখোট্টা কথাগুলো সপাটে অন্যদের দিকে ছুঁড়ে মারার মধ্যে যেন দু'চামচ পাটালির পায়েস মুখে পোরার তৃপ্তি রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা; ধারালো স্পষ্টভাষী হয়ে ওঠার মধ্যে একটা মায়াবী উত্তরণ রয়েছে৷ তবে ভেবে খারাপ লাগে যে সকলে এখনও হাইক্লাস স্পষ্টবাদিতার দিকে এগিয়ে যেতে পারেননি৷ কাজেই সে বিষয়ে কিছু টিপস শেয়ার না করলেই নয়।

প্রথম।
আপনার পছন্দ, ভালোবাসা এবং ভালোলাগাগুলো; সে'সব সস্তাসরল ব্যাপার নিয়ে পড়ে থাকলে কিছুতেই কপিবুক স্পষ্টবাদি হয়ে ওঠা সম্ভব নয়৷ 'ভালো ভালো' জপ করে চলা মানুষদের দিয়ে আর যাই হোক রক্তগরম করা সেন্টিমেন্ট ছড়ানো সম্ভব নয়। নিজের খারাপলাগাগুলোকে আঁকড়ে ধরুন, দিনরাত সে'গুলোকেই বারবার কপচে নিজের মেজাজকে তিরিক্ষি করে তুলতে হবে৷ সে'টাই প্রথম ধাপ। মেজাজ খিটখিটে না হলে স্পষ্টবাদি ব্যাক্তিত্ব খোলতাই হয় না৷ 

দ্বিতীয়।
সবার কলার ধরে নিন্দে করাটা আপনার দায়িত্ব৷ কিন্তু সাবধান, ন্যাকাপনা করে গঠনমূলক আলোচনার দিকে ঝুঁকলে কিন্তু সমস্তটা মাটি৷ মনে রাখবেন, আপনি অভিনয় করছেন ছবি বিশ্বাস-প্যারোডি ফ্লেভারের ভূমিকায়। আন্তরিক পাহাড়ি সান্যাল হয়ে কারুর পিঠ চাপড়ে তার মঙ্গলসাধন করতে চেয়ে গল্প জুড়বেন না যেন। আপনার কাজ ক্যাঁক করে ভাষার লাথি কষিয়ে সরে পড়া৷ সেই ধরণের স্পষ্টবাদই পাবলিক খাবে, থুড়ি, উপভোগ করবে৷ 

তৃতীয়৷
সারকাজম মসলিনের মত মিহি হতেই হবে, এমন ধারণা বঙ্কিমের যুগে চলত৷ এই পোস্ট-মডার্ন যুগে অন্যের গলায় গামছা পেঁচিয়ে টেনে ধরাটাই সারকাজম৷ যত খিস্তি, তত রোয়াব৷ আর স্পষ্টবাদীদের মূল অস্ত্রই হল রোয়াব।

চতুর্থ। 
স্পষ্ট কথা বলার আদত জায়গা হল ইন্টারনেট৷ খাটে শুয়ে যে সিনেমাকে বলবেন, 'তেমন পোষাল না', সে সিনেমা নিয়ে যদি ইন্টারনেটে আড়াই পাতার গাল নাই পাড়তে পারেন; তবে জানবেন আপনার কনফিডেন্সের দুধে বিস্তর জল মিশে গেছে৷ স্পষ্ট কথা আপনার দ্বারা ফায়্যার হবে না।

পঞ্চম। 
কেউ ফীডব্যাক চাইলে আপনার কর্তব্য কী? কথার মাধ্যমে তার তলপেটে লাথি মারা৷ এক্কেবারে এলোপাথাড়ি লাথি৷ তারপর তাকে বলা "কিছু মনে কোরো না, আমি ভাই স্পষ্ট কথার মানুষ৷ আই উইল কল আ স্পেড আ স্পেড"৷ সবচেয়ে বড় কথা, কোদালকে কোদাল বলার জন্য কোদাল চেনার কোনও দরকার নেই৷ ও যা কিছু একটা দুমফটাস জুতোজুতি মার্কা কিছু বলে দিলেই হল৷ 

কথাগুলো সোজাসুজিই বললাম, যেমনটা আমি বলে থাকি৷ আমি আবার সোজা কথার মানুষ কিনা, কোনও রাখঢাক আমার পোষায় না৷ পারলে সাজেশনগুলোর ওয়ার্ড ডকুমেন্টে ফেলে, একটা প্রিন্ট নিয়ে মানিব্যাগে রাখুন। তা'তে আপনাদেরই আখেরে মঙ্গল৷ 

পুনশ্চঃ

রবীন্দ্রনাথের একটা খেজুরে ছড়া খানিকক্ষণ আগে পড়ছিলাম৷ সোজাসুজি স্পষ্টভাবে টুকে দিলামঃ

"বসন্ত এসেছে বনে, ফুল ওঠে ফুটি,
দিনরাত্রি গাহে পিক, নাহি তার ছুটি।
কাক বলে, অন্য কাজ নাহি পেলে খুঁজি,
বসন্তের চাটুগান শুরু হল বুঝি!
গান বন্ধ করি পিক উঁকি মারি কয়,
তুমি কোথা হতে এলে কে গো মহাশয়?
আমি কাক স্পষ্টভাষী, কাক ডাকি বলে।
পিক কয়, তুমি ধন্য, নমি পদতলে;
স্পষ্টভাষা তব কণ্ঠে থাক বারো মাস,
মোর থাক্‌ মিষ্টভাষা আর সত্যভাষ"।

Comments

Unknown said…
বাহ দারুন লিখেছেন বৈকি! আমি আবার স্পষ্টভাষি কিনা, তাই লিখেই দিলুম।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু