Skip to main content

সরি



র‍্যান্ডি পশ 'সরি বলার সঠিক পদ্ধতি' জলের মত সহজ ভাষায় বুঝিয়ে গেছেন৷ সবার আগে কোনও রকম 'কিন্তু', 'যদিও', 'আসলে কী হয়েছিল' মার্কা কেরদানি বাদ দিয়ে নির্ভেজাল 'সরি'টা বলতে হবে৷ তারপর স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করতে হবে "দোষটা পুরোপুরি আমার"৷ আর সবশেষে থাকবে আসল ব্যাপারটা যে'খানে নিজেকে এগিয়ে এসে বলতে হবে, "ভুল তো করেইছি৷ এ'বার কী করলে সে ভুলের খেসারত দেওয়া হবে সে'টুকু জানা দরকার"। 

কিন্তু এই ধরণের হাইক্লাস মেন্টোস সলিউশন আমাদের ধুরন্ধর আম জিন্দেগীতে সবসময় চলবে না। অতএব উপায়? ওই, গোপন কোডে 'সরি' চালান করার বিভিন্ন পদ্ধতি আমরা খুঁজে বের করি৷ সে কোড অবশ্য এনিগমার মতই জটিল৷ কিন্তু সংসার, প্রেম এবং ইয়ারদোস্তি গোছের সমস্ত ব্যাপারগুলোই যে হাজারো এনিগমা-সঙ্কেতের ওপর দাঁড়িয়ে। সে হেঁয়ালির তল না পেলে সম্পর্কের পেল্লায় সব জাহাজ ভুলবোঝাবুঝির ইউবোটের আক্রমণে ডুবতে বাধ্য। 

তা কী ধরণের সাঙ্কেতিক ভাষায় আমরা 'সরি' বলার চেষ্টা করে থাকি?

"আরে ভাই, শোন না। আজ ভাবছি তোকে শ্যামলদার দোকানে মোগলাই খাওয়াব। না না, কিছুতেই না শুনছি না৷ তোকে আসতেই হবে৷ আরে না হয় ক্রিকেট মাঠে সামান্য ইয়েটিয়ে হয়েছে, তা হতেই পারে৷ তুই ভাবলি লেগস্টাম্পের বাইরে বল পিচ করেছে, তাই আমার লেগ বিফোর আপিল উড়িয়ে দিলি। আমি বল আর লেগস্টাম্প বগলদাবা করে টিউশনি পড়তে চলে গেলাম৷ ওই সামান্য ব্যাপারের জন্য তুই মোগলাই রিফিউজ করবি"?

অথবা, 

"সুমি, নীল শাড়িতে তোমায় যা মানায় না..কী বলব..চোখ ফেরানো যায়না মাইরি...। শোনো না, আজ চলো গড়িয়াহাট ঘুরে আসি। গড়িয়াহাট নাপসন্দ? পার্কস্ট্রিট চলো! কী বললে? আমি মনে মনে সমুদের তাসের আড্ডা প্রেফার করি? ধুস্! সে তো বোগাস একটা গুড-ফর-নাথিং জায়গা৷ শুধু বাজে গপ্প আর সিগারেট। ননসেন্স৷ তার চেয়ে চলো না, প্রিন্সেপ থেকে ঘুরে আসি"৷ 

অথবা,

আয়নার দিকে তাকিয়ে; "এই যে ব্রাদার,  একটা গোটা ক্যাজুয়াল লীভ শুধু তোমারই জন্য বাগিয়েছি৷ ওই যে, বাঁদিকে দেখো, পুরনো পুজোসংখ্যার বান্ডিল৷ আর ডানদিকে একগাদা কমিক্স। ফোন স্যুইচড অফ৷ বাড়ির সবাই ঘুরতে গেছে৷ আর ফ্রিজে বাসি বিরিয়ানি, ফর ব্রেকফাস্ট,  লাঞ্চ অ্যান্ড ডিনার৷ জানি ভাই, বড্ড হুড়মুড় যাচ্ছে। আর এর মধ্যে যে তোমার দিকে দু'দণ্ড তাকাবো, সে সুযোগটুকুই জুটছে না৷ যাক গে৷ আজ একটু গা এলিয়ে বসো দেখি"৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু