Skip to main content

দারোগা অমিত দত্তর মুকুটের শেষ পালকটি

- আর পালানোর চেষ্টা করিস না ভাই ভুতো।

- খামোখা টেনশন নিচ্ছেন দারোগাবাবু৷ আপনি মন দিয়ে ড্রাইভ করুন দেখি৷ আরে, আমি পালাতে চাইলে কি আমায় ধরতে পারতেন? এমন জীপে বসিয়ে আদর করে থানার দিকে নিয়ে যেতে পারতেন?

- তুই বলছিস তোকে ধরায় আমার কোনও কেরামতি নেই?

- অধ্যাবসায় অবশ্যই আছে৷ নয় নয় করে অন্তত বছর তিরিশ তাড়া করে বেড়াচ্ছেন।

- সত্যিই ভাই৷ মাঝেমধ্যে মনে হয় তোর কথা যত ভেবেছি, তত বোধ হয় বৌকে নিয়েও ভাবিনি। একটা মায়া আছে তোর প্রতি, বুঝলি।

- মিথ্যে বলবনা দারোগাবাবু, সে মায়া আমি আপনার চোখে দেখেছি বটে৷ 

- তা ভুতো, তুই কি চুরিটুরি সত্যিই ছেড়ে দিবি?

- হাড়গোড়ের ফ্লেক্সিবিলিটি কমছে৷ পাইপ বেয়ে ওঠা নামার স্পীড কমে যাচ্ছে, জানালার গ্রিল খুলতে গিয়ে শব্দ করে ফেলছি৷ খুচখাচ চুরি চালানো যেত বটে, তবে ব্যাপারটার মধ্যে আর্ট থাকবে না আর। তাই ভাবলাম, খেলো হয়ে যাওয়ার আগে সরে পড়াই ভালো। 

- এ জন্যই তোকে আমার এত পছন্দ। সত্যিই তো৷ গাভাস্কার বলতেন, এমন সময় রিটায়ার হবে যাতে লোকে জিজ্ঞেস করে 'হোয়াই' ইন্সটেড অফ 'হোয়াই নট'। 

- আপনারও তো কালই রিটায়ারমেন্ট৷ তাই না দারোগাবাবু?

- আমরা তো সরকারবাহাদুরের চাকর। নিজের রিট্যায়ারমেন্ট তো নিজের পছন্দমত হওয়ার নয়৷ কাল হিসেবমত শেষ দিন। তেমনটাই হবে৷ তবে রিটায়ার করার আগে যে তোকে অ্যারেস্ট করতে পেরেছি ভুতো, সেটা ভেবে বেশ একটা প্রচ্ছন্ন গর্ব বোধ করছি। ভুতো চোরকে তো গত তিরিশ বছরে কোনও শর্মাই ধরতে পারলে না৷ এই একটা বড় পালক নিজের মুকুটে সেঁটে বিদেয় নিতে পারব।

- দারোগাবাবু৷ 

- বলে ফেলো।

- আমি চোরছ্যাঁচড় মানুষ৷ তবু, যেহেতু ওই মায়ার কথা বললেন, তাই সাহস করে জিজ্ঞেস করছি৷ আমায় হাজতে পোরার আগে, একবার নিজের বাড়িতে বসিয়ে চা খাওয়াবেন?

- তোর মতলবটা কী বল তো ভুতো? নিশ্চয়ই সরে পড়ার প্ল্যান ছকেছিস কোনও।

- মা কালীর দিব্যি৷ বললাম তো, পালানোর ইচ্ছেই যদি থাকবে তবে ধরা দিলাম কেন৷

- চা খাবি? সঙ্গে ডিমের কচুরি? মিনু, মানে আমার মিসেস, জব্বর বানায়৷

- তাই হোক স্যার। বৌদিকেও প্রণাম করে আসা যাবে৷

**

- ভুতো! নেমে আয় জীপ থেকে। এই আমার বাড়ি৷

- আজ্ঞে দারোগাবাবু, জানি।

- জানিস? এই বাড়িতে তো আমি গত মাসেই শিফট করেছি।

- আজ্ঞে, গত হপ্তায় আপনার বাড়িতে এসেছিলাম। চুরি করতে।

- হোয়াট! দারোগার বাড়িতে চুরি! 

- আপনার স্পেশ্যাল নাইটডিউটি ছিল। আমি ভাবলাম, শেষ চুরিটা আপনার আস্তানাতেই হোক। ইচ্ছে ছিল সেই শেষ চুরি সেরে ফেলে তারপর ক্যানিংয়ের কাছে একটা গাঁয়ে গিয়ে জুড়ে বসব। নিজের নাম পালটে একট বাড়ি কিনব, মুদীর দোকান দিয়ে গা মৌজ করে দিন কাটাব। কিন্তু বৌদি সব গোলমাল করে দিলেন। 

- মিনু? মিনু কী করলে?

- যা আপনি তিরিশ বছরে পারেননি৷ বৌদি আমায় পাকড়াও করলেন৷ ইয়ে, কনুইয়ের চোটটা দেখুন দারোগাবাবু৷ বৌদি জুডো জানে।

- তা জানে। 

- আপনার মত ভুঁড়িও নেই৷ 

- শাটাপ ভুতো।

- কাজেই ফ্লেক্সিবিলিটি বেশি। পাশ কাটিয়ে বেরোতে পারলাম না। অবশ্য পাকড়াও করার পর বসার ঘরের চেয়ারে  বেঁধে রেখে মাছভাজা আর চা খাওয়ালেন। এবং বোঝলেন, পাপের সামান্য প্রায়শ্চিত্ত না করলে ক্যানিংয়ের মুদীর দোকান চলবে না৷ কাজেই একটু জেলের মুখ দেখাটা জরুরী। 

- বলিস কী! এত কিছু হল, তবু মিনু থানায় খবর দিল না?


- দিলেননা। কারণ আমাদের ডীল হল৷ 

- ডীল? দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী দারোগা অমিত দত্তর স্ত্রী শেষে চোরের সঙ্গে সমঝোতা করলে?

- আজ্ঞে। বৌদি আমায় ছেড়ে দিলেন৷ একটা শর্তে৷

- কী শর্ত?

- আপনাদের বত্রিশ বছরের বিয়ে৷ অথচ থানার কাজে আপনি এতই ব্যস্ত যে এত বছরে একদিনও ডিউটি শেষ করে সময়মত বাড়ি ফেরেননি৷ আপনার মত মুখ গুঁজে কাজ করার লোক ডিপার্টমেন্টে খুব কম, কিন্তু বৌদিকে এত অবহেলা করে আপনি ঠিক করেননি৷ বৌদির বড় সাধ, রিটায়ার করার আগে অন্তত একটা দিন আপনি বিকেল-বিকেল বাড়ি ফিরে ওঁর সঙ্গে চা বিস্কুট খাবেন। বৌদি আমায় এই শর্তে সে'দিন ছেড়ে দিলেন যে আপনি রিটায়ার করার আগে অন্তত একদিন আমি আপনাকে সময়মত বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাব৷ 

- ওহ..মিনুটা সত্যিই..এত কিছু করে আমার জন্য অথচ আমি এদ্দিন কিছুই..।

- যাক। এ'বার থেকে করবেন।

- তা বলে ভেবো না তোমায় হাজতে চালান করা হবে না।

- ও মা। বৌদিকে কথা দিয়েছি যে জেলের ভাত ক'দিন খেয়ে তারপর ক্যানিংয়ের সন্ন্যাস৷ তার আগে নয়।

- বেশ৷ এ'বার চট করে জীপ থেকে নেমে আয়৷ মিনু কচুরি ভাজবে, আর আজ চা'টা বরং আমিই বানাব৷ আয় ভুতো। আয়৷ ওয়েলকাম টু দারোগাবাড়ি।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু