Skip to main content

মিস্টার নগ্যুয়েনের নিভৃতবাস



- মিস্টার নগ্যুয়েন। কন্ট্রোল রুম থেকে বলছি৷ আপনি আমাদের কথা শুনতে পারছেন?

- পা..পারছি।

- কেমন বোধ করছেন?

- বাহান্ন বছর একা থাকা৷ বোধবুদ্ধি আর কিছু কি অবশিষ্ট আছে। ওই আছি একরকম। 

- আপনার শরীর?

- জ্বালাযন্ত্রণা নেই। 

- আপনার একাকিত্ব আমাদেরও যন্ত্রণা দেয় মিস্টার নগ্যুয়েন৷ কিন্তু আমরা নিরূপায়। 

- রাবিশ৷ যতসব বাজে কথা। একজন মানুষকে বিনাদোষে বন্দী করে রাখা হয়েছে এতগুলো বছর৷ এতবড় হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন..উফ!

- আপনি এই গ্রহের সম্পদ মিস্টার নগ্যুয়েন৷ সময় মত আপনাকে নিভৃতবাসে পাঠানো গেছে বলেই না সে'টা সম্ভব হয়েছে৷

- ভারী আমি সম্পদ রে৷  এই পেল্লায় একটা বাড়িতে বন্দী করে রেখেছে বাহান্ন বছর ধরে। সামনাসামনি একটা মানুষেরও মুখ দেখিনি এদ্দিনে৷ আরে বাবা রাজভোগ আর রাজ-ঐশ্বর্য একা একা কহাতক ভোগ করে ফুর্তি করা যায়৷ অমন সম্পদ হয়ে থাকতে আমার বয়েই গেছে৷ 

- মিস্টার নগ্যুয়েন৷ একটা দারুণ খবর আপনার জানা দরকার৷

- আমার বয়ে গেছে।

- আপনাকে শুনতেই হবে।

- কান চেপে তো বসে থাকতে পারব না৷ আপনারা তো ব্রেনওয়েভে কমিউনিকেট করেন৷ কাজেই শুনতেই হবে। বলুন।

- টিভি নিউজে আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন যে বছর তিনেক আগে, অর্থাৎ দু'হাজার একাত্তর সালে, ইতিহাসে প্রথমবার মানুষের সঙ্গে কোনও এলিয়েন প্রজাতী যোগাযোগ স্থাপন করেছে৷ 

- ওই সেই স্কেব্বক্সুওনা গ্রহ থেকে তো? হ্যাঁ, সে খবর আমি শুনেছি৷ তা ব্যাটাদের মতলবটা কী?

- সে'টা খোলসা করতেই বছর তিনেক লেগে গেল। ইন্টার গ্যালাকটিক ল্যাঙ্গুয়েজ বেরিয়ার সামাল দেওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়। অবশ্য, তারা প্রায় হোমো স্যাপিয়েন গোত্রেরই হওয়াতে ব্যাপারটায় খানিকটা সুবিধে হয়েছে।

- কী চায় তারা?

- আপনাকে দেখতে চায়৷ ব্যাস, সে'টুকুই৷ আমাদের এই কন্ট্রোলরুম থেকেই আপনাকে পর্যবেক্ষণ করে তারা ফিরে যাবে৷ আগামী হপ্তাতেই তাদের ডেলিগেটরা এসে পৌঁছচ্ছে৷ 

- স্রেফ আমায় দেখতে?

- তবে আর বলছি কি মিস্টার নগ্যুয়েন৷ তাদের গ্রহতেও নাকি এমন কেউ আর নেই যার করোনা হয়নি৷ পৃথিবীর লোকজন যে বুদ্ধি করে এক করোনা-স্পর্শহীন কোনও মানুষকে এদ্দিন বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে, এ'টা জেনে তাঁরা চমৎকৃত।  এবং তাদের গ্রহের তাবড় সব কেউকেটারা ছুটে আসছে দূর থেকে একবার আপনাকে একটিবার দেখতে৷ খানিকটা তাদের তীর্থযাত্রা বলতে পারেন।

- যাচ্চলে। সেই গ্যালাক্সি পারের গ্রহতেও করোনা? এ ভাইরাস ও'দিকে পৌঁছল কি করে?

- ব্যাটারা নাকি চোরাগোপ্তা পৃথিবীতে আসছে শ'দেড়েক বছর ধরে৷ এর আগে ধরা দেয়নি। নেহাত আপনাকে দেখার লোভ সামলাতে পারলে না বলে সামনে এলে তারা৷ 

- সে কী! শ'দেড়েক ধরে আসছে এ'খানে?

- জেনে আমরাও তো থ মিস্টার নগ্যুয়েন। সে এলিয়েনরা প্রতি ডিসেম্বরে চুপিসারে নামে পৃথিবীতে। টু বি প্রিসাইস, বাংলায়। নলেন গুড় স্মাগল করে নিজেদের গ্রহে নিয়ে যেতে। আর সেই নলেনের লোভেই কোভিডের গুঁতো মুখবুজে সহ্য করেছে তারা৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু