Skip to main content

ই-নরেন



- হ্যা..হ্যালো..।

- কী চাই?

- আপনি..আপনি..।

- আমিই। নরেন৷ থুড়ি, ই-নরেন দত্ত।

- প্রণাম নেবেন স্যার। আপনার সঙ্গে জ্যান্ত অবস্থায় ডাইরেক্ট মোলাকাত হলে পা জড়িয়ে শুয়ে থাকতাম। কিন্তু মুশকিল হল আপনি তো আমারই তৈরি সফটওয়্যার৷ তাই কী ভাবে ঠিক গ্রীট করব...।

- বাড়াবাড়ি আমার না-পসন্দ৷ 

- ইয়ে, আপনার ল্যাঙ্গুয়েজটা ঠিক..।

- বেদ-বেদান্ত থেকে কোট করব কী করে ব্যাটা৷ বানিয়েছিস তো তুই৷ বিবেকানন্দর কলেক্টেড ওয়ার্ক্স আর র‍্যান্ডম কোট কম্পাইল করলেই যদি রিয়েল নরেন দত্ত তৈরি করা যেত রে ভাই, তা'হলে তো আইনস্টাইন আর প্লেটোতে দেশ ভরে যেত।

- তবু স্যার, বড় খরচপাতি করে কম্পিউটার-বিবেক বানাতে হয়েছে৷ অমন চ্যাটাং চ্যাটাং কথা কানে বড় লাগে তো, একটু ওই শিকাগো মোডে আসুন না। প্লীজ।

- বেশ৷ ব্রাদার্স অ্যান্ড সিস্টার্স অফ বেহালা। ন্যাকাপনা কম করো। গা জ্বলছে।

- ইয়ে, স্যার৷ বলছিলাম, কম্পিউটার বিবেক হিসেবে আপনার কাজ হল, মানুষের ফিলোসফিকাল সব প্রশ্নের বিবেকানন্দ লেভেল হাইক্লাস উত্তর দেওয়া। 

- হাইক্লাস চাই?

- তবেই না ভাইরাল হব। আপনি আর আপনার সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আমি; জ্যোতির্ময় চ্যাটার্জী।

- কিন্তু আমি তো আর আদত বিবেকানন্দ নই রে বাবা। সফটওয়্যার হিসেবে আমার ইন্টেলেকচুয়াল লেভেল তো জ্যোতির্ময় চ্যাটার্জীতে আটকে৷ হাইক্লাস জ্ঞান দেবটা কী করে। 

- আজ্ঞে পাবলিকের অত তলিয়ে দেখার সময় কই বলুন৷ লোকে এখন মেড-ইজি গাইড খুঁজছে৷ আর একটু হিস্ট্রি মিশে থাকলে তো কেল্লা ফতে৷ কাজেই বিবেকানন্দ সফটওয়্যার যাই বলবে তাই হাইক্লাস। দু'চারটে কোট, আর বাকিটা ব্যাকএন্ড থেকে হিজিবিজি যা ইনফর্মেশন তুলতে পারেন৷ ও ঠিক দাঁড়িয়ে যাবে। 

- বটে?

- তবে আর বলছি কী স্যার৷ তাছাড়া নরেন ফেনোমেনাটা আজকাল মার্কেট বেশ খাচ্ছে৷ ও উতরে যাবে। আপনি ভাববেন না। 

- বেশ৷ প্রশ্ন করো বাবা জ্যোতির্ময়। 

- যুবসমাজকে আজকাল মাঝেমধ্যেই হতাশার মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷ তাদের জন্য কোনও সাজেশন স্যার?

- আরাইজ, আওয়েক অ্যান্ড স্টপ নট টিল দ্য গোল ইজ রীচড৷ আর তাছাড়া ল্যাদ ব্যাপারটাকে রোম্যান্টিকের চোখে দেখতে হবে, হাভাতের ফোকাস নিয়ে নয়৷ কেমন, উত্তরটা ভালো হয়েছে ভাই জ্যোতির্ময়? 

- ফাসক্লাস। পরের প্রশ্ন৷ দেশের ভালো দশের ভালো করতে গেলে সবার আগে কী করতে হবে।

- খুব ভালো প্রশ্ন করেছ৷ খুব ভালো প্রশ্ন৷ প্রথমেই বলি জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।  তাছাড়া নলবনে ইলিয়ট পার্কে সন্ধ্যের দিকে বড্ড মশা৷ আর মনে রেখো, রাতে খাওয়াদাওয়ার পর বেশিক্ষণ পাবজি না খেলাটাই ভালো৷ ডাইজেশন হ্যাম্পার করে।

- উম, এ'টা কেমন একটু৷ তবে লোকের অত সময় কোথায় তলিয়ে দেখার৷ ভালোই হচ্ছে৷ আর একটা প্রশ্ন করি।

- বেশ করো। 

- ধর্ম কী?

- শক্তি ও সাহসিকতাই ধর্ম। দুর্বলতা ও কাপুরুষতাই পাপ।

- বাহ্ বাহ্ বাহ্, এ'টা দারুণ হয়েছে। 

- আরে শালা উত্তর শেষ হয়নি আগেই ফুট কেটে দিলে। 

- ওহ সরি৷ আপনি বলুন৷ ধর্ম কী।

- যা বলছিলাম। শক্তি ও সাহসিকতাই ধর্ম। দুর্বলতা ও কাপুরুষতাই পাপ। বৃষ্টির বিকেলে চপমুড়িই ধর্ম, ট্যুইটারে তর্কই পাপ। খিস্তির মাধ্যমে পলিটিকাল তর্কজয়ই ধর্ম, রোব্বারে ভোরবেলা অ্যালার্ম দেওয়াটাই পাপ। কেমন? কেমন দিলাম?

- গায়ে কাঁটা দিচ্ছে৷  নেহাৎ আপনি স্রেফ সফটওয়্যার, তাই দেখতে পারছেন না৷ 

- বিশ্বাস করছি৷ সত্যিই কী চমৎকার ভাবে সমস্ত বলে গেলাম। গায়ে কাঁটা দেওয়াটাই স্বাভাবিক। 

-  আপনার এই কনফিডেন্সটা দারুণ দরকারী৷ ভাবছি আপনাকে পলিটিকাল পার্টিদের ভাড়া দেব, তারা আপনাকে ইলেকশন র‍্যালিতে নিয়ে যাবে৷ আপনি অবলীলায় ব্রিগেড ভরে দেবেন৷ আমি নিশ্চিত।  

- তোমার ফীড করা একটা কোটেশন ঝালাই করে বলতে পারি, তোমার এই বিজনেস মডেল দাঁড়িয়ে যাবে। 

- কোন কোটেশন স্যার?

- সাফল্য লাভ করতে হলে প্রবল অধ্যবসায় আর প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি থাকা চাই। জানো, অধ্যবসায়শীল সাধক কী বলেন?

- কী বলেন?

- তিনি বলেন, ' আমি গণ্ডূষে সমুদ্র পান করিব। আমার ইচ্ছামাত্র পর্বত চূর্ণ হইয়া যাইবে।' দু'হাজার বাইশে এসে আমরা এই কনফিডেন্সকে একটু এডিট করে নিয়ে বলব, "কয়েক কোটি মানুষকে গুলের পর গুল দিয়ে ভাসিয়ে দেব৷ আর আমার ইচ্ছেয় ধরা হবে সরা আর শুয়োর ত্যাগ করবে কচু"। এই কনফিডেন্স বেচেই আমরা গাম্বাটদের ইলেকশন ক্যাম্পেন আলো করব৷ নাও, এ'বার আমার নামে, অর্থাৎ এই জ্যোতির্ময় সফটওয়্যারের নামে জয়ধ্বনি করো।

- বলো বিবেকমাইকি..!

- জয়! জয়!

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু