Skip to main content

চলো অঞ্জন!



অঞ্জন দত্তর গান নিয়ে কোনও গুরুগম্ভীর আলাপ-আলোচনাকে কোনওদিনই পাত্তা দিইনি৷ নিন্দে তো নয়ই, অন্যের প্রশংসার সঙ্গে তাল মেলানোরও প্রয়োজন বোধ করিনি৷ অঞ্জনবাবুর গান একটা অভ্যাসের মত জুড়ে গেছিল৷ তার ভালোমন্দ হয়না, ডিসেকশন হয়না৷ ভালো লাগা থাকে। আর গানের ক্ষেত্রে, সেই ভালোলাগাটুকুই বোধহয় একমাত্র ডিসিপ্লিন, অন্তত আমার মত অতিপাতি মানুষের জন্য৷ 

প্রথমবার অঞ্জনবাবুর গান ক্যাসেট ধার করে শোনা৷ স্কুলবয়সে৷ সে'সব গান প্রথমবার শুনেই লাফিয়ে ওঠার নয়৷ 'ওয়াহ তাজ' বলে সেলাম ঠোকার নয়৷ কিন্তু৷ অঞ্জনবাবুর গানগুলোয় রয়েছে বার বার ফিরে যাওয়ার সুর৷ আর স্কেল-বসানো সোজাসাপটা সরলসিধে কথা৷ প্রথম শোনায় যে ক্যাসেট 'ঠিকই আছে' মনে হয়েছে, বাহাত্তর নম্বর শুনানির সময় সেই ক্যাসেটই ইয়ারদোস্ত৷ 

ভদ্রলোকের বেশ কিছু গোবেচারা গান রয়েছে৷ একসময় তারা মাঝেমধ্যেই টেপরেকর্ডারে বাজছে৷ বিরক্ত করছে না, আবার মনে ইয়াব্বড় দাগও কাটছে না৷ কিন্তু আচমকা একদিন খেলা ওলটপালট৷ হয়ত কেমিস্ট্রির খাতার পিছনে মন দিয়ে বুক ক্রিকেটের স্কোর লিখছি৷ তখন দুম করে টের পেলাম - আরে! "শুনতে কি চাও তুমি"র সুরে কী দারুণ মায়া৷ কী অপূর্ব স্নেহ৷ আর কী, অমনি সে গানের সঙ্গে দোস্তি হয়ে গেল৷ 

ব্যাপারটা ঠিক কীরকম? ধরুন আপনি সন্ধ্যে ছ'টা বেয়াল্লিশের ব্যান্ডেল লোকালের ডেলিপ্যাসেঞ্জার। ইঞ্জিনের দিক থেকে তিন নম্বর কামরাটি আপনার নিয়মিত অফিস-ফেরতা ঠাঁই। সেই কামরায় এক মুখচোরা মিষ্টি স্বভাবের ভদ্রলোকের সঙ্গে রোজই দেখা হয়, চোখাচোখির আলাপ৷ 'সব ভালো তো' গোছের ইশারা রোজই আদানপ্রদান হয়,থাকে মাথা নাড়া প্রত্যুত্তর৷ আচমকা একদিন, হঠাৎ সেই মুখচোরা মানুষটি যেচে এসে আলাপ জমাবেন৷ তখন জানা যাবে আপনাদের দু'জনেরই ওলসেদ্ধ দিয়ে ভাত মেখে খেতে ভালো লাগে, আর ভালো লাগে দীঘা, আর শীর্ষেন্দু, আর আশাপূর্ণাদেবীর লেখা৷ ব্যাস, জমে গেল বন্ধুত্ব৷ তেমনই, অঞ্জনবাবুর সবচেয়ে প্রিয় গানগুলোও একদিন অতর্কিতে এসে আলাপ জমিয়েছে, এবং তল্পিতল্পা সমেত থেকে যায়৷ 

আর থেকে যাওয়া মানে থেকে যাওয়া? এক্কেবারে জাঁকিয়ে বসেছে৷ কাজেই চৌধুরীদের  একুশতলার নির্লজ্জ ঝগড়াঝাটি এখন আমার সুপরিচিত৷ বাবা-মায়ের সিনেমা ফেরত রোলটা ডাবল এগ ডাবল চিকেন, আমার অন্তত সে'টাই বিশ্বাস; আর খোকার ডিনারের ট্যালট্যালে ঝোলের হলদেটে বিস্বাদ রংটাও আমি দিব্যি চিনি; অঞ্জনবাবুর সুরের মধ্যে দিয়ে৷ আমি মাঝেমধ্যেই গুগলম্যাপে বেনিয়াপুকুর আর বেহালা যাওয়ার রুট দেখি৷ কমলা এজেন্সির ছোট্ট অফিসের কোণে অর্ণবের কাগজ বোঝাই টেবিলটা আমি ভীষণ চেনা, সেই টেবিলের পিছনের দেওয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারটাও আমি চিনে রেখেছি; ডাল লেকের ওপর শিকারা। আর বৃষ্টিতে চটি ছিঁড়ে যাওয়ার মধ্য যে চিনচিনে সুরটা মিশে থাকে, সে'টা আমি দিব্যি চিনি। 

এমন কত হাজার চেনাজানা, পরিচিতি, স্নেহ-মায়া সুট করে গছিয়ে দিয়েছেন অঞ্জন৷ তার গানগুলো আমাদের এই এলেবেলে জীবনের লাগসই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, এ নিয়ে আমার কিন্তু কোনও সন্দেহই নেই৷ 

Comments

Arya Biswas said…
খুব সুন্দর লেখা। লেখাটা পড়তে পড়তেই অঞ্জন বাবুর গান চালালাম। আবার ছোট বেলার চিলে কোঠাযর বারান্দায় পৌছেগেলাম। আবার কখনো পার্কস্টিট হয়ে সোজা দার্জিলিং!!!
অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।
Arya Biswas said…
খুব সুন্দর লেখা। লেখাটা পড়তে পড়তেই অঞ্জন বাবুর গান চালালাম। আবার ছোট বেলার চিলে কোঠাযর বারান্দায় পৌছেগেলাম। আবার কখনো পার্কস্টিট হয়ে সোজা দার্জিলিং!!!
অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু