Skip to main content

মনুবাবু ও বনমালী



চৌরাস্তার মোড়ের এককোণে বঙ্কুর পানের দোকান। বঙ্কুর সেই পানের দোকান থেকে খান দশ পা এগোলেই একটা ইলেক্ট্রিক পোল। অবশ্য মনুবাবু গোপনে সে পোলটার একটা নাম দিয়ে ফেলেছেন; বনমালী। ব্যাপারটা মধ্যে একটু খ্যাপাটেপনার গন্ধ যে নেই তা নয়, কিন্তু তা সবিশেষ পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না মনুবাবু।

রোজ সন্ধ্যেয় অফিস থেকে ফিরে, বঙ্কুর দোকান থেকে একটা খয়ের ছাড়া সাদা পান মুখে পুরে; সোজা বনমালীর পাশে এসে দাঁড়ান মনুবাবু। আর তারপর প্রাণ খুলে যত অভাব-অভিযোগ-মনখারাপ, সমস্ত উজাড় করে দেন বনমালীর কাছে। 

"বুঝলে ভায়া বনমালী, এই চ্যাটার্জিটা নির্ঘাৎ ব্যাকস্ট্যাব করেছে৷ আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর। আমি নিশ্চিত ও বড়সাহেবের কান ভাঙিয়েছে৷ নয়ত এ'বারের প্রমোশনটা আটকায় কী করে বলো"!

"বনমালী! শুনেছ? রাণুর বাবা বলেছে আমি নাকি রাণুর যোগ্য পাত্র নই! আরে রাণুর সিটিসি আমার চেয়ে বেশি বলে আমি ওর যোগ্য নই? এরা কোন সেঞ্চুরিতে বাস করে বলো দেখি"!

"ভায়া বনমালী, গোটা দুনিয়াটাই উচ্ছন্নে গেছে। আরে বাসভাড়া দেওয়ার পর ছাই টিকিটটা হারিয়ে ফেলেছি।  তবু কন্ডাক্টর ব্যাটা বিশ্বাস করলে না? চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে সে কী ইনসাল্টটাই না করলে।  বাধ্য হয়ে ফের টিকিট কাটতে হল। এ যে দিনেদুপুরে ডাকাতি"!

"বনমালী, শুনেছ তো খবরটা? গুপ্তিপাড়ার পিসিমা আজ দুপুরে চলে গেলেন। গার্জেন বলতে আর কেউই রইল না। এ'বারেই বোধ হয় ভেসে যাওয়া, তাই না ভাই"?

এমন হাজার রকমের বুকের চিনচিন, হাড়ের জ্বালা, বা মনের হ্যাঁচোড়প্যাঁচোড় নিশ্চিন্তে বনমালীর কাছে সঁপে দেন মনুবাবু। তিনি জানেন, বঙ্কু আর তার দোকানের ফিচেল খদ্দেররা তাকে নিয়ে বিস্তর হাসাহাসি করে। মাঝেমধ্যে বিশ্রী সব আওয়াজও ভেসে আসে। কিন্তু সে'সব গা করেন না মনুবাবু৷ কেন জানি তার মনে হয় বনমালীকে বলা কথাগুলো সমস্তই জলে যায় না৷ কেন জানি তার মনে হয় যে বনমালীকে সব বলতে পারলেই প্রাণ জুড়িয়ে আসে, বুকের মধ্যে আরামদায়ক হাওয়া বয়, মনের তিতিবিরক্ত ভাব কেটে গিয়ে শান্তি আসে, মুখের তিতকুটে ভাব কেটে গিয়ে ফার্স্টক্লাস খিদে পায়৷  বনমালীকে ছাড়ার কথা ভাবতেই পারেন না মনুবাবু।

**

- কী রোজ ওই ওয়্যারলেস রিসিভার কানে চাপিয়ে বসে থাকিস বল দেখি৷

- দিনের ঠিক এই সময়টা, দূরের কোনও গ্যালাক্সির কোনও গ্রহ থেকে একজন প্রাণীর শব্দ ভেসে আসে। সে গ্রহের এগজ্যাক্ট পোজিশন যদিও এখনও ট্র‍্যাক করতে পারিনি৷ 

- শব্দ? এলিয়েনের?

- নির্ঘাৎ। 

- ডিকোড করতে পেরেছিস?

- না৷ কী সব হিজিবিজি শব্দ৷ ও আমাদের বুঝে উঠতে মেলা সময় লাগবে৷ 

- কী'রকম সব শব্দ?

- গুপ্তিপাড়া পিসি গার্জেন..কী'সব হিজবিজবিজ। কিন্তু আমাদের ফিলিং ইন্টারপ্রেটেনশন ডিভাইস একটা জিনিস ক্র‍্যাক করতে পেরেছে৷ সে এলিয়েনের সবকথাই মনখারাপের।

- বলিস কী! এলিয়েনরা তোর কাছে মনখারাপের মেসেজ ট্রান্সমিট করছে?

- অদ্ভুতুড়েই বটে৷ আমি অবশ্য পালটা মেসেজ না পাঠালেও, আমাদের এই ইন্টার গ্যালাক্টিক ভাইব ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে 'ঘাবড়ে-যেওনা-হে-আমি-আছি-তো' ভাইব একটানা ট্রান্সমিট করে যাই৷ সে ভাইব যে ওই এলিয়েনবাবাজীর কাছে পৌঁছচ্ছে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত৷ 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু