Skip to main content

পল্টু-সুমির বইমেলা



- হ্যাঁ রে পল্টু, এ'টা আনন্দেরই লাইন তো?

- ভেরিফাই করে নিয়েছি সুমি৷ এই দাদা কনফার্ম করেছেন৷

- লাইনের যা বহর, সন্ধ্যে নামার আগে স্টলের গেট দেখতে পাব বলে মনে হচ্ছে না৷ যা ভীড়৷ উফ্! এত মানুষ বই পড়ে?

- দেখ, আমি অত পড়িনা৷ তবে ঘাটাঘাটি করি৷ হেবি লাগে৷

- অবশ্য আনন্দর বইটইগুলোর যা দাম৷ ইএমআই ফেসিলিটি না থাকলে উল্টেপাল্টে দেখেশুনে বেরিয়ে আসা ছাড়া উপায় থাকেনা৷

- তোদের মত পাবলিকের জন্যই যত সমস্যা৷ বাপের বাড়ির দলিল বন্ধক রেখে সিনেমাহলের পপকর্ন কিনবি কিন্তু বইয়ের দাম দেখলেই গলা শুকোনো৷

- বাজে না বকে লাইনে ফোকাস কর পল্টু৷ সুট করে কেউ ঢুকে না পড়ে৷

**

লাইন মন্থর গতিতে এগোতে থাকে৷ সুমি আর পল্টুর খোশগল্প জমে ওঠে৷ পড়ন্ত বিকেলের আকাশ লালচে, মেলার মাঠ সরগরম। গল্পের আগুনের ঘি হয়ে ওঠে সুমির হাতে ধরা বাদামের ঠোঙা আর পল্টুর হাতের নুনের প্যাকেট৷

**

- সুমি! বেগুনি খাবি?

- লাইনের কী হবে?

- আগেও লম্বা লাইন৷ তুই দাঁড়া! আমি চট করে নিয়ে আসি!

- ক্যুইক কমরেড! ক্যুইক!

- লাইন সামলে।

- জান কবুল। তুই আয় বেগুনি নিয়ে৷

**

বেগুনির গুনেই বোধ হয়, লাইন সামান্য গতি পেয়েছে।

বেগুনি সাবাড় করে কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ হাতড়ে এক ডিবে মিঠেমৌরি বের করে আনলো সুমি। পল্টু নিজের ব্যাকপ্যাক থেকে বের করে আনলো নন্টেফন্টে। আনন্দর লাইনে একটানা দাঁড়িয়ে হদ্দ হওয়ার পর মোক্ষম অ্যান্টিডোট; দেবসাহিত্য কুটীরের স্টল থেকে সংগ্রহ করা কমিক্স সুর করে পড়া৷

পল্টুর পড়া শুনে গজল ভালোবাসার মেজাজে "ওয়াহ ওয়াহ" বা "নাজুক" বলে সেলাম ছুঁড়ে দেবে সুমি৷

**

- পল্টু..! এই পল্টু! থাম৷ পড়া থামা৷ ওই দ্যাখ..।

- কী দেখব?

- স্টলের গেট দেখা গেছে৷ দিল্লী দূর নহি!

- আরে! ওইত্তো আনন্দ! মার দিয়া কেল্লা।

- পল্টু৷ শোন..।

- কী..।

- চ', লাইন ছেড়ে দিই।

- খেপেছিস সুমি?

- আরে বই কেনাটাই কি শেষ কথা? শোন না রে পল্টু, চ' এ'বার দে'জ পাবলিকেশনের লাইনে গিয়ে হত্যে দিই। এ লাইন থেকে ও লাইন..।

- সুমি তুই একটা আস্ত...।

- এই লাইন ছাড়তে রাজি হলে, সামনের শনিবার; টিউশনির পর হাত ধরে রেল ব্রিজ পেরোনো অ্যালাউ করব৷

- শুধু আঙুলের ডগা নয়৷ পুরো হাত৷

- পুরো হাত৷

- চলুন সুমিদেবী৷ এ'বার তা'হলে দে'জ।

**

- পল্টু৷ এ'বার আমায় ফোন রাখতে হবে৷

- এখুনি?

- হ্যাঁ৷ একটা জরুরী কাজ।

- ধুস৷ লংডিস্ট্যান্স প্রেম আর সইছে না রে সুমি৷ কী ছাই দু'জনে দুই মুলুকে চাকরী নিলাম৷ মুখোমুখি প্রেম আর কলকাতা; দুইই জলে৷

- আমাদের বইমেলার টেলিফোনিক রোলপ্লেগুলো খুব ইন্টেন্স হচ্ছে কিন্তু।

- তা ঠিক৷ এক্কেবারে রগরগে৷ কোথায় লাগে সেক্সটিং৷

- তুই একটা যাতা৷ এ'বার আসি?

- ধুস৷ যা ভাগ!

**

কল্পনার বইমেলা, তার গা-কাঁপানো কাল্পনিক ভিড়। আনন্দের স্টলের সামনের মাইলখানেক লম্বা কাল্পনিক লাইনে বহুক্ষণ দাঁড়ানোর পর,
দুম করে সে লাইনের মায়া উড়িয়ে স্টলের পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া;

এ'টাই সুমি আর পল্টুর আনন্দ৷
তাদের গোপন রোলপ্লে৷

Comments

Deb said…
Khub sundor. Choto kintu mon chuye jaoa.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু