Skip to main content

শানুবাবু


দিন কয়েক আগে শানুবাবুর জন্মদিন গেল। স্বাভাবিক ভাবেই তা নিয়ে বিশেষ হইচই নেই; অবশ্য এই ভালো। পশম-নরম স্মৃতি নিয়ে বেশি চিৎকারচ্যাঁচামেচি টানাহ্যাঁচড়া না হওয়াই ভালো।

নব্বুইয়ের হাওয়ায় বড় হয়েছি। বহুদিন পর্যন্ত ধারনা ছিল যে প্রেমের প্রকাশ শানুবাবুর কণ্ঠ ছুঁয়েই হওয়া উচিৎ; বীরেন ভদ্র ছুঁয়ে যেমন আগমনী। রবীন্দ্রনাথ, সুমন, হেমন্ত নিয়ে যতই "আহা-উঁহু" করে জ্যেঠু-অ্যাপ্রুভড পথে রিফাইনমেন্টের দিকে ঘেঁষার চেষ্টা করি, স্কুলের সেই বান্ধবী একবার ফিরে তাকালে বুকের মধ্যে ঢিপঢিপের সঙ্গে বেজে উঠত কুমার শানুর মন্ত্রপাঠ; "ধীরে ধীরে পেয়ার কো বড়ানা হ্যায়, হদ সে গুজর যা না হ্যায়" ফিলিপ্সের স্টিরিও ক্যাসেট প্লেয়ারটা পূর্ণতা লাভ করত শানুদার গমগমে কণ্ঠে; " সাঁওলি সলোনি তেরি ঝিলসি আঁখে, উনমে না জানে কঁহা খো গয়া হ্যায় মেরা দিল"

নিজের প্রেমট্রেমগুলো তেমন দাঁড়াতে পারেনি কোনোদিন, কাজেই ট্র‍্যাজেডি ব্যাপারটা অনুভব করতে হয়েছে বন্ধুদের প্রেম ভাঙার দুঃখ ধার নিয়ে। প্রাণের বন্ধুর সাত মাসের প্রেম যখন আড়াই দিনের ঝগড়ায় ভেসে গেল, তখন সেই বন্ধুর দুঃখ ভাগ করে নিতে তার সঙ্গে আমিও ঝাঁপ দিয়েছিলাম অজস্র শিঙাড়া আর 'অ্যায় কাশ কে হম হোশ মে অব আনে না পায়ে' সুরে। সেই সন্ধের 'নগমে তেরে পেয়ারকে' মনে পড়লে আজও মনে হয় ভেসে যাব। আজও প্লেলিস্টের 'চিকেন স্যুপ ফর সোল' সেকশনটি জুড়ে রয়েছে স্মৃতি শানু৷ প্রেম নিয়ে লিখতে গিয়ে যতই পূর্ণেন্দু পত্রী বা সঞ্জীব কোট করি না কেন; প্রেম প্রসঙ্গে মনে মনে আজও আউড়ে চলি "রুঠ না যানা তুম সে কঁহু তো, ম্যায় ইন আঁখো নে যো রঁহু তো"
শানু চিরঅমলিন থাকবেন আরও একটা গভীর ভালোবাসার জায়গায়। এখনও পাড়ার সেলুনে যখন নবরত্ন শীতল স্পর্শে মাথা-মালিশ চলে, তখন কানে যদি কুমার শানুর 'তু মিলে দিল খিলে' বা 'মেরা চাঁদ মুঝে আয়া হ্যায় নজর' ভেসে না আসে; তা'হলে সমস্তটাকেই মনে হয় মাটি।

এই প্রেমে ভেসে যাওয়ার অস্বস্তিকর ভালোলাগাটুকু যদ্দিন, শানু-বোধও তদ্দিন।

(ছবিঃ @FilmHistoryPic ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে সংগৃহীত)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু