Skip to main content

রাজেশ খন্নাঃ দি ফেনোমেনন



বলিউড বিষয়ক কোনো বই পড়তে হলে আমি সোজাসুজি দীপ্তকীর্তিদার লেখা বা ওঁর রেকমেন্ড করা বই/লেখা পড়ি আজকাল৷ ওঁর কথা শুনেই ইয়াসের উসমানের লেখা সঞ্জয় দত্তর জীবনীটা পড়ি, দিব্যি লেগেছিল৷ সদ্য শেষ করলাম উসমানেরই লেখা রাজেশ খান্নার বায়োগ্রাফি৷

বলিউডি তারকাদের বিষয়ে কিছু পড়ার ক্ষেত্রে একটা বড় অসুবিধে হচ্ছে যে মাঝেমধ্যে গসিপ আর ফ্যাক্ট গুলিয়ে ব্যাপারটা একটা প্রমাণ সাইজের চুটকি হয়ে দাঁড়ায়। কপাল ভালো যে উসমানের লেখায় চমৎকার 'ফ্লো' থাকলেও তা কখনই গসিপ কলমের মত মনে হয়না৷ এর একটা বড় কারণ হচ্ছে যে ভদ্রলোক প্রবল নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিটা ঘটনা এবং মন্তব্যের সোর্স কোট করে যান আর সে'টা করেন এমন মুন্সীয়ানার সঙ্গে যে পড়তে পড়তে হোঁচট খেতে হয়না; বরং কোন "সোর্সের" বিশ্বাসযোগ্যতা ঠিক কতটা সে'টা পাঠক হিসেবে নিজের বোধবুদ্ধি অনুযায়ী দিব্যি বিচার করে নেওয়া যায়৷ উসমানের রিসার্চে আলস্য নেই এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার লজিক-বোধ এবং 'ইনফারেন্স'গুলোর সঙ্গে সহজেই একমত হওয়া যায়৷

এ'বার আসি এই বইয়ের প্রসঙ্গে৷

এক৷
রাজেশ খন্না; "দি ফেনোমেনন"৷ রাজেশ খন্নার ওপর যে কোনো বই তাঁর কেরিয়ারের এই দিকটাকে কতটা সার্থক ভাবে তুলে ধরছে তার ওপর সে বইয়ের গুরুত্ব অনেকটাই নির্ভরশীল৷ এ ক্ষেত্রে ইয়াসের উসমান চমৎকার ভাবে যতীন খন্নার " রাজেশ" হয়ে ওঠার থ্রিলিং গল্পটা বলেছেন৷

দুই৷ " দ্য এনিগমা"৷ রাজেশ খন্নার মত রীল আর রিয়েল গুলিয়ে ফেলতে বোধ খুব বেশি মানুষ পারেননি৷ আর অন্ধের হাতি চেনার মত বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে রাজেশকে দেখেছেন, সেই "দেখা" গুলোকে রিকনসাইল করতে পারা চাট্টিখানি কথা নয়; তবে উসমান জবরদস্ত চেষ্টা করেছেন৷ সঞ্জীববাবুর একটা রম্যরচনায় পড়েছিলাম প্রত্যেক মানুষ ভাবে "আমায় কেউ চিনল না, কেউ বুঝল না"৷ রাজেশ খন্নার ক্ষেত্রে এই হাহাকারটা যতটা সুগভীর , ততটাই যন্ত্রণার৷ এই হাহাকারকে যতটা সম্ভব মেলোড্রামা এড়িয়ে তুলে ধরতে পেরেছেন উসমান৷

তিন৷ আগাসির বায়োগ্রাফিতে একটা চমৎকার ব্যাপার তুলে ধরা হয়েছে৷ যে 'এক নম্বর র‍্যাঙ্ক'কে জীবনের ধ্রুবতারা বলে মনে হয়েছিল আন্দ্রের, সে'খানে পৌঁছে আচমকা বড় অসহায় আর একা হয়ে পড়েছিলেন তিনি৷ তাঁর আত্মজীবনীর একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সেই অসহায়তার গল্প৷ সেই অসহায় আগাসি বারবার অন্ধকারের মুখোমুখি হয়েছেন কিন্তু হারিয়ে যাননি৷ সে'দিন থেকে রাজেশ খন্নার কেরিয়ার কার্ভ বোধ হয় সম্পূর্ণ উলটো খাতে গড়িয়েছে৷ সাফল্য দড়াম করে এসেছে রাজেশের জীবনে আর সে সাফল্য এমন এভারেস্ট গোছের যে তা ছিল রাজেশেরও কল্পনাতীত; কারণ সেই স্তরে এর আগে কেউ কোনোদিনও পৌঁছতে পারেনি৷ এবং সেই সাফল্য ভাসিয়ে নিয়েছিল ভদ্রলোককে, সে ভেসে যাওয়া এতটাই নিদারুণ যে আর ফিরতে পারেননি তিনি৷ কিন্তু ভেসে যাওয়াটুকুই রাজেশের জীবনের শেষ কথা নয়; এ'টুকু স্বস্তির রেশ পাঠকের মনে রেখে যেতে পেরেছেন লেখক।

চার৷ যে কোনো বায়োগ্রাফিতে "অ্যানেকডোট কোয়ালিটি" খুব জরুরী৷ এ বই সে'দিক থেকে হতাশ করেনা৷ রাজেশবাবুর জীবনের যাবতীয় সম্পর্ক আর তাঁর একাকিত্ব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে এই জীবনীতে৷ রাজেশ খন্নার জীবনের বিভিন্ন সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে সিনেমা বিষয়ক খুব চমৎকার কিছু ট্রিভিয়া রয়েছে এ বইতে৷ কী ভাবে একটা ইন্ডিয়ান আইডল মার্কা ট্যালেন্ট হান্ট রাজেশের জীবন পালটে দিয়েছিল? শুটিং শুরুর আগেই আরাধনা ভেস্তে যেতে বসেছিল কী ভাবে? বাওয়ার্চি ছবির শুটিংয়ের সময় জয়া ভাদুড়ি রাজেশবাবুর প্রতি বিরক্ত বোধ করেছিলেন কেন? নমকহারাম সিনেমার ক্লাইম্যাক্স কীভাবে পাল্টাতে হয়েছিল রাজেশ খন্নার জেদের বশে আর তা কী ভাবে 'ব্যাকফায়্যার' করেছিল? অঞ্জু মহেন্দ্রু কেন সোবার্সকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন? বিভিন্ন ছোটছোট ঘটনা মিলিয়ে মিশিয়ে দিব্যি দাঁড় করানো হয়েছে এই বায়োগ্রাফি যা যে কোনো বলি-ফ্যানের উপাদেয় মনে হতে বাধ্য।

পাঁচ। বল্কির নির্দেশনায় একটা বিজ্ঞাপন তৈরী করে হ্যাভেলস, তাদের ফ্যানের জন্য; বিজ্ঞাপনটা খানিকটা বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। সে'টাই রাজেশবাবুর শেষ শুটিং। বইয়ের প্রায় শেষের দিকে এসে সেই বিজ্ঞাপন শুটিংয়ের ঘটনাটা বিশদভাবে বলা আছে। বইয়ের এই অংশটা পড়ে আমি ইউটিউবে বিজ্ঞাপনটা বার কয়েক দেখি আর ব্যক্তিগত ভাবে বলি; আমার গায়ে কাঁটা দিয়েছে।

রাজেশ ভক্তরা চট করে এ বই পড়ে ফেলতেই পারেন।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু