Skip to main content

হোয়্যাটস্যাপিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে

- কী! হোয়্যাটস্যাপ সেফ নয় বলছে যে রে...
- সেখানে লুকিয়ে প্রেমট্রেম চালাচ্ছ নাকি পাপাইদা?
- প্রেম করলে কী আর চেপেচুপে রাখতাম ব্যাপারটাকে। রীতিমত প্রেস রিলিজ বের করতাম। মাস্টার্স শেষ হতে চলল অথচ সামান্য ওগোহ্যাঁগো লেভেলের কিস্যুই হল না। চিন্তা সেসব নিয়ে নয়।
- তবে? হোয়্যাটস্যাপ থেকে ডেটা চুরি যাওয়ার ভয়টা কীসের তোমার!
- কোহলির ব্যাটিং স্টান্সে কী ভুল আছে তা নিয়ে সেদিন একটা এলাবরেট অ্যানালিসিস প্রেসেন্ট করেছিলাম সেদিন; ওই আমাদের গ্রুপে। মনে নেই?
- আলবাত মনে আছে। তবে তো ফাঁস হলেই বা চিন্তা কীসের। সে তো ভালো কথা কভার ড্রাইভগুলো আরো খোলতাই হবে না হয়। সে তো তাঁরই কাজে লাগবে তাছাড়া তাতে দেশের উপকার...
- অত সহজ নয় রে বাবলু, সহজ নয়। মূল্য ধরে না দিলে পাশুপতও পোড়া দেশলাই কাঠির মত ইউজলেস হয়ে পড়ে।
- তাই তো। একটা সমস্যা বটে পাপাইদা। তোমার মহামূল্যবান টিপসগুলো সে মাগনায় পেলে তার কদর করবেই বা কেন।
- সমস্যা তো সেখানেই শেষ নয়। আরও আছে।
- যেমন?
- সত্যজিতের সিনেমার অবভিয়াস ফ্লগুলো নিয়ে সেদিন একটা ছোটখাটো হোয়্যাটসঅ্যাপ এস্যে লিখে ফেললাম।
- ওই যেটা পড়ে নন্তু তোমার পায়ের ধুলো একটা ছোট পাউচে কলেক্ট করে মানিব্যাগে রাখবে ভেবেছিল?
- নন্তের মধ্যে ভক্তিভাব আছে। তবে মাঝেমধ্যে বাড়াবাড়ি করে ফেলে আর কী। যা হোক, এই হোয়্যাটস্যাপ গ্রুপ থেকে যদি সে লেখা বেরিয়ে যায় তাহলেই শুরু হবে লোকের ঘ্যানঘ্যান। আনন্দলোকটোকে মাঝেমধ্যে দুচার কলম লেখো, ফিল্ম ইন্সটিটিউতে গিয়ে দু'চারটে সেশন নাও। আরে আমার কাছে কি অত সময় আছে রে?
- আরে সামান্য আলুকাবলি মাখার সময় তুমি পাওনি গতকাল। আমরা সবাই যখন আলু কাটছিলাম তখন তুমি সোফায় শুয়ে চোখ বুজে জরুরী কী যেন ভাবছিলে। এসব পত্রিকায় লেখালিখির কাজ তোমার করলে চলবে কেন?
- টোন কাটছিস না তো?
- ছিঃ পাপাইদা। তুমি আমায় সন্দেহ করো?
- না তা নয়। তবে কী জানিস, চারদিকে এত স্পাই ঘুরে বেড়াচ্ছে না। বড় সন্দেহ হয়। এই তো গত পরশু; একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো বুঝলি? ব্যাটা খুব মিহি সুরে এডুকেশন লোন গছাতে চাইলে; কিন্তু আমার স্থির বিশ্বাস যে ওসব লোনটোন হচ্ছে ভাঁওতা। ব্যাটা আদতে স্নোডেনের লোক।
- এড স্নোডেন?
- তবে আর বলছি কী।
- সে তোমার খবর নেওয়ার জন্য পিছনে টিকটিকি লাগিয়েছে?
- আশ্চর্য কিছু নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে আমার পলিটিকাল ভিউগুলো যে বেশ আগুন মার্কা; সেটা তো অস্বীকার করা যায়না। কে কখন কীভাবে কাল্টিভেট করতে চাইবে, কী করে ঠাহর করব বল?
- তুমি শিওর সে স্নোডেনের লোক? উত্তর কোরিয়ার কিম পিছনে পড়েনি তো?
- এটা সারকাজম নয় তো?
- পাপাইদা। আমার ওপর এত অবিশ্বাস তোমার?
- আহা তা নয়। তা নয়। আসলে এই যে হোয়্যাটস্যাপে লেনদেন হওয়া যাবতীয় মেসেজ টুক করে হ্যাক করে নেওয়া সম্ভব; সেসব কথা হাওয়ায় ছড়ানো মাত্রই বড় ইয়েতে আছি।
- ইয়ে?
- ওই...মাইল্ডলি নার্ভাস...বুঝলি?
- তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে তোমার ধারালো টিটকিরিগুলো বাজারে ছড়িয়ে পড়লে ফলাফলটা ভালো হবে না... আজকাল যা যুগ পড়েছে
- পলিটিকাল এস্টাব্লিশমেন্টের যদি হাই ক্লাস হিউমর গ্রহণ করার ক্ষমতাটুকুই থাকবে; তাহলে কি আর আমাদের মত থট-লিডারদের হোয়্যাটসাপের কোণে পড়ে হ্যাজাতে হয় রে? যা হোক, একটু খোঁজ নিয়ে দেখিস তো; এই জনতার হোয়্যাটস্যাপের ডেটা লীকের ঘটনাটা কতদূর সত্যি।
- ঝেড়ে কাশো তো দেখিল পাপাইদা; হোয়্যাটস্যাপের ডেটা ফাঁস হলে তোমার আরও কোন দুশ্চিন্তা আছে নাকি?
- মাইনর একটা ব্যাপার বুঝলি। বাবার কাছ থেকে রোজ দু'দশটাকা সরাতে হয়। মাঝেমধ্যে 'দুইতিন। নেহাত বাধ্য হয়েই আর কী। বিস্কুটের ডিলারশিপ নিয়ে তো ইদানীং ফুলে ফেঁপে উঠেছে; তাই তাঁর বুর্জোয়া হাবভাবকে একটু কন্ট্রোলে রাখতে সামান্য দুচার পয়সা মাঝেমধ্যে সরাতে হয়। এটাকে এক ধরনের সোশ্যাল সার্ভিস ভাবতে পারিস। ব্যালেন্সিং বাবার হ্যাভস উইথ আমার হ্যাভ নটস।
- ভেবে দেখতে গেলে তো এটা এক ধরনের চ্যারিটিই। নেহাত এর জন্য ভবিষ্যতে ট্যাক্স রিবেট ক্লেম করতে পারবে না।
- নাহ, তোর সঙ্গে কথা বলে সুখ আছে। চ্যারিটিই তো।
- কিন্তু এর সঙ্গে হোয়্যাটস্যাপের কী সম্পর্ক?
- টাকা সরালেই তো হল না। তার লেজার রাখা চাই তো। নিজের দুটো ফোনে দুটো হোয়াটস্যাপে অ্যাকাউন্ট। এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে মেসেজ পাঠিয়ে সে লেজার মেন্টেন করি। খাতায় নয়, এমএস এক্সেলে নয়; হোয়্যাটস্যাপে। এতদিন জানতাম আর যাই হোক হোয়্যাটস্যাপ কথার খেলাপ করবে না। অমন বড় মুখ করে বলে 'ইয়োর ডেটা ইজ এনক্রিপ্টেড'' ওরা নিশ্চয়ই গোলমাল পাকাবে না। কিন্তু এখন বাজারে যা খবর...তাতে তো দেখছি...
- ওহ...এই ব্যাপার...আমি ভাবলাম কাউকে হোয়্যাটস্যাপে ন্যুড ট্যুড পাঠিয়ে টেনশন করছ বুঝি..
- আমার বাবাটি অত্যন্ত খতরনাক লেভেলের বুর্জোয়া বিষ রে। ন্যুডফ্যুড ফাঁস হওয়া তো কিছুই নয়। এই তিন বছর ধরে চালানো হোয়্যাটস্যাপ লেজার ফাঁস হলে; বাবার বদান্যতায় দেখবি প্রত্যেকের হোয়্যাটস্যাপে মীম হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার জলবিছুটি স্পা নেওয়ার রগরগে সব ছবি।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু