Skip to main content

খোকার ভিটেমাটি





























- বলছিলাম খোকা, একটা অসুবিধে দেখা দিয়েছে।
- কী কেস বাবা?
- কিছুদিন আগে কৈকেয়ীকে মুখ ফসকে একটা বর কমিট করে ফেলেছিলাম..
- মেজমা ফের বিয়ে করবেন? সে কী! ভরত ভেঙে পড়বে যে।          
- আহা তা নয়, তা নয়। অন্য বর। গ্রান্টিং উইশ আর কী।
- ওহ হো। যাক, বড় চিন্তায় পড়ে গেসলাম।
- সে বর হলেই ভালো হত বাপ। বরে চিন্তা বাড়বে বই কমবে না।
- যত বয়স বাড়ছে তত আপনার হেঁয়ালি করার অভ্যাসটা মেনাসিং হয়ে উঠছে। যা হোক, খুলেই বলুন।
- হ্যাঁ মানে, তোমার রাজ্যাভিষেকটা বোধ করি।একটু উইথহোল্ড করতে হবে।
- কেন? পঞ্জিকা দেখে কোনো অসুবিধে ঠাহর হচ্ছে? আপনার নামে কোনো পৈতে বা মুখেভাত  বা গৃহপ্রবেশের নিমন্ত্রণ এসে পড়েছে?
- আহা তা নয়। শুধু...শুধু তোমায় একবার কিছুদিনের জন্য বনে যেতে হবে।
- ক্যাম্পিং? রাজ্যাভিষেকের আগে আউটবাউন্ড ট্রেনিং? মেজমার ইচ্ছে? সে তো ভালো কথা। 'দিন ধরে আমিও ভাবছিলাম যে একটু ফ্রেশ এয়ার হলে মন্দ হয় না।
- কতকটা তাই। তবে..
- লক্ষ্মণ আমার সঙ্গে যাবে কিন্তু। আমার আবার শোওয়ার আগে দু'দান দাবা না খেললে মন বসে না।
- বেশ তো। হবে'খন। সে যাবে না হয়।
- আর সীতাও সঙ্গে চলুক। এখানে বসে কীই বা করবে। ক্যাম্পে গিয়ে না হয় হপ্তাদুই হাওয়া খেয়ে আসবে। এমনিতেও অযোধ্যায় যা পলিউশন যা বেড়েছে, রাস্তায় রথের সংখ্যা এখুনি রেগুলেট না করলে ফাঁপরে পড়বেন ; এই বলে রাখলাম।
- সীতামা গেলেও আমার আর আপত্তি কী। শুধু ক্যাম্পিংটা দু'হপ্তার একটু বেশিই করতে হবে৷ মানে, কৈকেয়ীর তেমনই ইচ্ছে।
- তিন হপ্তা?
- তিন হপ্তা ঠিক নয়...ওই ধরো চোদ্দ...
- ফোর্টিন উইকস?
- ফোর্টিন। ইয়েস। তবে, হপ্তা নয়। বছর।
- চোদ্দ বছর?
- কৈকেয়ী তাই চাইছে।
- বোঝো কাণ্ড।
- খোকা, রিয়েলি ভেরি সরি।
- বাবা, এর জন্যে সরি বলবে?
- তোর জীবনের চোদ্দটা বছর...
- তা'তে কী? ভেসে তো যাচ্ছি না বাবা।
- আমি ভাবছিলাম কৈকেয়ীকে বলে কয়ে..
- কথার খেলাপ! সে কী তোমায় মানায় বাবা?
- কিন্তু খোকা..
- না বাবা। তুমি আটকিও না আমায়। এই 'দিনই তো, ঘুরেই আসিনা। বেশ হবে।
- তোর জন্ম এখানে, ভিটেমাটি এখানে, তোর ফ্যান ফলোয়ার সব এখানে.. এদের ছেড়ে এদ্দিনের জন্য তোকে দূরে ঠেলে দিই কী ভাবে খোকা..
- জন্ম, ভিটেমাটি আঁকড়ে থাকাটাই সব হল বাবা? আমার চিন্তাভাবনাকে এত ঠুনকো মনে করো তুমি? না বাবা, মেজমার মনে 'টুকুর জন্য দুঃখ দেওয়ার মত পলিটিক্স এখনও আমি আয়ত্ত করতে পারিনি।
- কিন্তু ওই ওরা...ওরা যে রেগে আগুন হয়ে উঠেবে...তারপর কিছু একটা অনর্থ ঘটলে সে দায় যে আমাকেই নিতে হবে..
- ওরা বলতে আমার ফ্যানক্লাব আর ফলোয়াররা?
- হ্যাঁ, তুই ভিটে ছাড়লে ওরা যে ভেঙে পড়বে।
- মনখারাপ হয়ত হবে, কিন্তু ভেঙে পড়বে কেন? আমি নিজেই মনের আনন্দে বাক্সপ্যাঁটরা নিয়ে বেরিয়ে পড়ছি যে। আর আমি যখন পারছি..আমার ফ্যান-ফলোয়ারদেরই বা অত ঠুনকো ভাবছ কেন বাবা? তোমার ভারী অন্যায়।
- খোকা রে, তুই যে কত বড় হয়ে গেছিস... রাজ্য, ভিটেমাটি 'সবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিসপত্রে তোকে বেঁধে রাখার ক্ষমতা আমার সত্যিই নেই।
- আমার ফ্যান-ফলোয়ারদেরও কোনো অংশে কম ভেবোনা যেন বাবা। ধৈর্য, ত্যাগ ভালোবাসায় তাঁরা যেন তোমার খোকার চেয়েও বড় হতে পারে; সেই আশীর্বাদই কোরো, কেমন? যাই, মেজমার শুনেছি গতকাল নারকোল নাড়ু বানিয়েছে। ভরত আপাতত রাজ্যের হ্যাপা সামলাক কিছু বছর৷ আমি বরং তাঁকে ফাঁকি দিয়ে মেজমার নাড়ুর ডিবেগুলো বগলদাবা করে সরে পড়ব ভাবছি। প্ল্যানটা বেশ ডিলাগ্র‍্যান্ডি, তাই না বাবা?
(ছবিটি জাগরণ জংশন ডট কম থেকে সংগৃহীত)

Comments

Shantanik Basak said…
Jacchhetaai leveler chumu lekha eta .....

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু